কল্যাণী: ফের পুলিশের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ পার্শ্বশিক্ষকদের৷ অনশন মঞ্চে পুলিশি তাণ্ডবের অভিযোগে তোলপাড় নদীয়া কল্যাণী৷ পার্শ্বশিক্ষকদের অভিযোগ, শনিবার সন্ধ্যায় অনশনমঞ্চের আলো নিভিয়ে শিক্ষিকাদের পোশাক ছিঁড়ে তাণ্ডব চালিয়েছে পুলিশ৷ করা হয়েছে শ্লীলতাহানি৷ ছেঁড়া হয়েছে ব্লাউজ৷ পুলিশের বিরুদ্ধে তাণ্ডবের অভিযোগে সোমবার কর্মবিরতির ডাক পার্শ্বশিক্ষকদের৷ সোমবার গোটা বাংলাজুড়ে প্রতিবাদ সভা ও কালা দিবসের ডাক শিক্ষক সংগঠন মাধ্যমিক শিক্ষকও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷
পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনের উপর পুলিশের আক্রমণের প্রতিবাদে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আগামী সোমবার জেলায় জেলায় প্রতিবাদ সভার ডাক দেওয়া হয়েছে৷ পার্শ্বশিক্ষকরা যেভাবে অর্থনৈতিক দিক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তা সমাধান করা একান্ত প্রয়োজন বলেও মনে করে ওই শিক্ষক সংগঠন৷
পার্শ্বশিক্ষকদের পাশে দাঁড়িয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের সমিতি দীর্ঘদিন ধরে পার্শ্বশিক্ষকদের পূর্ণ শিক্ষকের মর্যাদা ও উপযুক্ত বেতনের দাবি নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল৷ পার্শ্ব শিক্ষকদের আন্দোলনে সরকারের পক্ষ থেকে যে ভূমিকা পালন করা দরকার ছিল তা তো করা হলই না, উপরন্তু তাঁদের আন্দোলন পণ্ড করার জন্য যেভাবে পুলিশ দিয়ে আক্রমণ নামিয়ে আনা হল, তার নিন্দা করার ভাষা আমাদের নেই৷ আমরা সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়ে দিতে চাই, পুলিশি আক্রমণ চালিয়ে ও পুলিশের অত্যাচার করে কোনও গণআন্দোলন দমন করা যায় না৷ আমরা এ ধরণের বর্বরোচিত পুলিশি আক্রমণের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করছি৷ সকল শিক্ষক, পার্শ্বশিক্ষক, ভোকেশনাল শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, আপনারা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে সামিল হন। আগামী ১৯ আগস্ট সোমবার যেখানে যেখানে সম্ভব, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি করুন৷ যাতে সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়৷’’
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক অনিমেষ হালদার বলেন, ‘‘রাতের অন্ধকারে পার্শ্বশিক্ষকদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে এভাবে পুলিশি বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানাই৷ পার্শ্ব শিক্ষকদের সম্মানজনক ভাতা ও মর্যাদার ব্যাপারে পূর্বতন সরকারের মত বর্তমান সরকারও সম্পূর্ণ উদাসীন। দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি পার্শ্ব শিক্ষককে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিবাদে সামিল হওয়া উচিত৷’’
অভিযোগ, কোনও মহিলা পুলিশ কর্মী না আনিয়ে শিক্ষিকাদের উপর তাণ্ডব চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ৷ নির্বিচারে করা হয়েছে লাঠিচার্জ৷ পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে কল্যাণী স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অবরোধ করে রেখেছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ক্লাস বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছে৷ পুলিশের দাবি, আগাম কোনও অনুমতি না নিয়ে অনশন বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকরা৷ অনুমতি না নিয়ে জমায়েত করার অভিযোগে তাঁদের এলাকা ফাঁকা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ এই নিয়ে পুলিশ ও শিক্ষকদের মধ্যে খণ্ডযুব্ধ বাঁধে৷ অভিযোগ, নির্বিচারে লাঠি পোটা করা হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর৷
ছিল দীর্ঘ বঞ্চনার দাবিতে পথে নামার ডাক। নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে পথে নেমেছিলেন প্রায় কয়েক হাজার শিক্ষক। জাতীয় পতাকা বুকে আগলে রাজপথেই গেয়ে ওঠেন ‘উই শ্যাল ওভার কাম।’ জাতীয় সংগীত গেয়ে শিক্ষকেরা জানিয়ে দিলেন, তাঁরা চান তাঁদের পূর্ণ অধিকার৷ বিকাশ ভবন অভিযানে বাঁধা পাওয়ার দুর্যোগ মাথায় নিয়ে খোল আকাশের নীচে রাত কাটানোর পর এবার শনিবার সকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে বসলেন পাশ্বশিক্ষকদের৷ কল্যাণি স্টেশন চত্বরে অদূরে বাসস্ট্যান্ডে অনশনে বসেন কয়েকশো শিক্ষক৷
শহর কলকাতা অনশন কর্মসূচি বাঁধা পেয়ে কল্যাণীতে লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচির ঘোষণা করা হয় পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চের তরফে৷ অভিযোগ, অনশন শুরু হওয়ার সাত ঘণ্টা পর তাণ্ডব চালায় পুলিশ৷ অনশন মঞ্চ ফাঁকা করতে বেপরোয়া লাঠিচার্জ করা হয়৷ বাদযাননি শিক্ষিকারাও৷ তাঁদেরও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ৷ পুলিশ-শিক্ষকদের খণ্ডযুদ্ধে এক শিক্ষিকার পোশাক ছিঁড়ে যায় বলেও অভিযোগ৷ লাঠিচার্জেও অভিযোগ ওঠে৷ আলো নিভিয়ে পুলিশি মারের প্রতিবাদে সোমবার থেকে পার্শ্বশিক্ষকরা ক্লাস বয়কট করবেন বলে ঘোষণা করেছে পার্শ্বশিক্ষক ঐক্যমঞ্চ৷