কলকাতা: অক্টোবর ২০১৭৷ অতিক্রান্ত ১ বছর ১১ মাস৷ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন জমা নেওয়া হলেও এখনও চূড়ান্ত হয়নি টেট পরীক্ষার সূচি৷ জানানো হয়নি মোট শূন্যপদের সংখাও৷ কিন্তু, কেন এত বিলম্ব? কবে নেওয়া হবে টেট পরীক্ষা? দীর্ঘ ১ বছর ১১ মাসের অপেক্ষার বাধন ভেঙে এলার চূড়ান্ত কর্মসূচি টেট আবেদনকারীদের৷ গোকুলে বাড়ছে টেট বিদ্রোহ৷ টেট পরীক্ষার সূচি প্রকাশের দাবিতে এবার অনশন কর্মসূচির ডাক চাকরিপ্রার্থীদের৷ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে চলেছে টেট বিদ্রোহের প্রস্তুতি৷
বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে ১ বছর ৯ মাস৷ কিন্তু, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত টেটের পরীক্ষায় নিতে পারেনি রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ৷ ২০১৫ সালের পর এই রাজ্যে টেট বা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট নেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালে অক্টবরে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও এখনও শূন্যপদ জানানো দূর, কবে হবে পরীক্ষা, তা এখনও জানানো হয়নি৷ এই পরিস্থিতি দাড়িয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের ও আদালতের হস্তক্ষেপের পরও বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় এবার অনশন কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷ সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১৯ আগস্ট অনশন কর্মসূচি শুরু হতে পারে৷ তবে, কোথায় এই অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে, তা এখনও আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়নি৷ পাছে পুলিশি অনুমতি পেতে সমস্যা হয়!
গত মাসের মাঝামাঝিতে টেট পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রকাশের মামলায় রাজ্যকে তীব্র সমালোচা করে কলকাতা হাইকোর্ট৷ টেট পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রকাশের দাবিতে দায়ের হওয়ার মামলার শুনানতে পর্ষদের ভূমিকায় ভর্ৎসনা করে আদালত৷
১৮ জুন টেট মামলার শুনানিতে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন, পরীক্ষার না নেওয়ার কারণ জানিয়ে আগামী ২৭ জুন আদালতকে জানাতে হবে৷ অভিযোগ, সেই রিপোর্ট জমা হলেও এখনও প্রকাশিত হয় টেট পরীক্ষার দিনক্ষণ৷ ওই দিন টেট মামলার শুনানিতে বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, গরিব ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি বাবদ কোটি কোটি টাকা তুলে এখনও কেন টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়নি? তা অবিলম্বে রিপোর্ট আকারে জানাতেও নির্দেশ দেন বিচারপতি৷
মামলার শুনানিতে মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবীর তরফে জানানো হয়, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিইর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছরই রাজ্য সরকারের টেট নেওয়ার কথা থাকলেও ২০১৬, ২০১৭ সালে টেট হয়নি৷ ২০১৭ সালে টেটের বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও শূন্যপদ ও পরীক্ষার দিনক্ষণ জানাতে পারেনি পর্ষদ৷ পরীক্ষায় বসার জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা নেওয়া পরও নিয়োগ তো দূর, পরীক্ষা নেওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করতে পারেনি পর্ষদ৷ আর তার জেরেই চাকরিপ্রার্থী মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে৷ পর্ষদের কৌঁসুলি সুবীর সান্যাল জানান, তিনি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জেনে পরের শুনানিতে আদালতে জানাবেন৷
মামলাকারী শীর্ষেন্দু সেনগুপ্ত-সহ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী টেটের পরীক্ষার দিন ঘোষণার দাবিতে মামলা দায়ের করেন৷ মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতকে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে টেটের নির্দেশিকা জারি করেছিল পর্ষদ৷ কয়েক লক্ষ শিক্ষক পদপ্রার্থীরা ১০০ টাকা জমা করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন৷ কিন্তু, ১ বছর ৯ মাস পরও সেই পরীক্ষা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
তিনি জানান, এনসিটিই বা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছর অন্তত একবার প্রতিটি রাজ্য সরকারের টেট পরীক্ষা নেওয়ার কথা৷ কিন্তু, ২০১৫ সালের পর থেকে পরীক্ষা নেওয়াই হচ্ছে না৷ রাজ্যে দু’টি টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ পরীক্ষায় বসেন ৩৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী৷ ৪৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগও হয়েছে৷ সেখানেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল৷ মামলা হয় বেশ কয়েকটি৷ পর্ষদ সূত্রে খবর, এখনও ২৫ হাজার শূন্যপদ রয়েছে৷ ফলে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব বাড়ছে৷ অথচ, টেট পরীক্ষায় সফল হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে৷ এই প্রেক্ষাপটেই আদালত আগেই রাজ্যের রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছিল৷
রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা প্রাইমারি টেটের জন্য গত ১০ অক্টোবর ২০১৭ থেকে ২৯ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত ১০০ টাকা দিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার যুবক যুবতী ফর্ম ফিলাপ করেন৷ ১ বছর ১১ মাস হয়ে গেলেও পরীক্ষার টেট ঘোষণা করছে না পর্ষদ৷ আর তারই প্রতিবাদে এবার অনশন কর্মসূচির ঘোষণা আন্দোলনকারীদের৷ যতক্ষণ না পর্যন্ত টেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হচ্ছে, ততক্ষণ অনশন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷