আজ বিকেল: সাদা কুর্তা পাজামা৷ আর মাথায় তাকিয়া পরা একজন মানুষ মুখে অমলিন হাসি নিয়ে একটি খোলা মাঠে রান্না করছেন৷ বিভিন্ন উপকরণ মেশাচ্ছেন, তৈরি করছেন দেশ বিদেশের নানানমুখে জল আনাখাবার৷ ফেসবুক বা ইউটিউবে ভাইরাল কোনও ভিডিও’র কথা মনে পড়ছে কি? হ্যাঁ, খাজা মইনুদ্দিনের কথাই বলা হচ্ছে৷ ইউটিউব চ্যানেল, নবাব’স কিচেন ফুড ফর অল অর্ফান্সের সেই মানুষটি যাঁর রান্না বেশ কয়েকহাজার শিশুর মুখে অন্ন তুলে দিয়েছে৷
২২০ টিরও বেশি ভিডিও সহ তাঁর চ্যানেল-আইকনিক নিজামি বিরিয়ানি থেকে ব্ল্যাক ফরেস্ট কেকের ওভেনবিহীন রেসিপি, ড্রাগন ফলের তৈরি ঘন সরবত এবং বিভিন্ন ট্রপিক্যাল ফলের তৈরি আকর্ষণীয় রেসিপি, যা সারা বিশ্ব জুড়ে ৭লাখ সাবস্ক্রাইবারের জনপ্রিয়তা ছাড়িয়েছে৷
তাঁর বানানো অতুলনীয় স্বাদযুক্ত বিভিন্ন খাবারের রেসিপি এই হায়দরাবাদী যুবককে ইন্টারনেট সেনশেসন করে তুলেছে৷ রান্নার পরে এই খাবার সোজা চলে যায় অনাথ আশ্রমের বাচ্ছাদের কাছে৷ তাঁর সমস্ত ভিডিওই শেষ হয় বাচ্ছাদের হাসিমাখা তৃপ্ত মুখের ছবি দিয়ে৷
তাদের টিম প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১২০০ বাচ্ছার মুখে খাবার তুলে দেয় এবং প্রতি সপ্তাহে ২-৩টি ভিডিও পোস্ট করে তাদের চ্যানেলে৷ এই সংখ্যাগুলিকে ২বছর দিয়ে গুণ করে দেখুন তাহলে আপনি তাদের কাজের ব্যাপ্তি কল্পনা করতে পারবেন৷
খাজা মইনুদ্দিন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে মানুষ৷ এমবিএ করার পর তিনি ১৩ বছর ইটিভি এবং এবিএন চ্যানেলে কাজ করেন৷ তার বয়ানে, ‘‘এই সময় একা থাকতাম৷ আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারে মানুষ হওয়ার কারণে অনেক ভালো ভালো খাবারই খেতে পাইনি৷ ফলে নিজেই নানান রেসিপি দেখে দেখে রান্না করতে শুরু করি৷ বাড়ির লোক ও বন্ধুদের কাছ থেকে রান্নার প্রশংসাও পেতে থাকি৷ তারপর মাত্র ৫ বছর আগে আমার বন্ধুদের সঙ্গে সমাজের জন্য কিছু করার কথা ভাবি৷ সেই সময় অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে করা হয়নি৷ কিন্তু বছর দুই আগে সিদ্ধান্ত নিই ইউটিউব চ্যানেল খোলার৷’’
সেই মানুষটি যিনি একদা এসি ঘরে ৯ঘণ্টা শিফটেকাজ করতেন তিনি এখন ১২-১৩ ঘণ্টা রোদের মধ্যে কঠিন পরিশ্রম করেন৷ শ্যুটিংয়ের জন্য সঠিক লোকেশন খোঁজা, সঠিক গুণমান সম্পন্ন উপকরণ জোগাড় করা, নতুন নতুন রেসিপি খোঁজা, বিরাট আকারের পাত্রে রান্না করা, এতসব সামলানো বেশ কঠিন ব্যাপার বলে উপলব্ধি করেন আজকে৷ তার দুই বন্ধু সমানভাবে পাশে আছেন আজও৷ এটাই একমাত্র ভরসা তাঁর৷
বন্ধুবান্ধব ও পরিচিত মহলে প্রচুর সমালোচনা, কটূক্তি ও ব্যাঙ্গের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা হাল ছাড়েননি আজও৷ তিনি হয়তো তাঁর পরিচিত মহলে শুধুই ‘খাজা’ কিন্তু সেই বাচ্ছাগুলি, যাদের মুখে তিনি খাবার তুলে দেন, তাদের থেকে যে ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, তাদের কাছে তিনি সবসময়ই ‘‘নবাব’’, যাঁর রান্নাঘরের দরজাক্ষুধার্তের জন্য সব সময় খোলা৷