কলকাতা: ‘‘বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করেছি। বাকিটা সুপারিশেই বলা রয়েছে৷ যতটুকু পারছি, দেওয়া হয়েছে৷ নেতিবাচক চিন্তা করবেন না, রাজ্যের কথা ভাবুন, ইতিবাচক চিন্তা করুন৷’’ রাজ্য বাজেট পেশ করার কর বিধানসভায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের অবস্থান জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এবার বাজেট আলোচনার প্রশ্নত্তোর পর্বে ফের বেতন কমিশন ও মহার্ঘভাতা প্রসঙ্গে জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকার কর্মচারীদের কত শতাংশ বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়েছে৷
চলতি অর্থবছরে নতুন বেতন কাঠামো অনুসারে বেতন হাতে পেলেও পে স্লিপে ডিএ’র উল্লেখ না থাকায় সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়৷ এরপর রাজ্য বাজেটেও এনিয়ে পৃথক কোনও প্রস্তাব না পেয়ে কর্মীমহলে হতাশা আরও বাড়ে৷ একদিকে পে স্লিপ থেকে ডিএ শব্দ উধাও হওয়ার ঘটনা ও বকেয়া নিয়ে স্যাটে মামলা রায় ঘোষণার পরও তা কার্যকর না হওয়ায় ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে আদালত অবমাননা৷ পাল্টা রায় পুনর্বিবেচনা মামলাও চলছে স্যাটে৷ গতকালও ছিল সেই জোড়া মামলার শুনানি৷ স্বাভাবিক মহার্ঘ ভাতার ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তায় কর্মচারী মহল৷
এবার কর্মচারী মহলে জল্পনায় জল ঢেলে আজ বিধানসভায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ আজ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগে ৯০% মহার্ঘ ভাতা বকেয়া ছিল৷ সব শোধ করে দিয়েছি৷ রাজ্যে ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হয়েছে৷ বর্ধিত বেতনও পেয়েছেন কর্মচারীরা৷ টাকা নেই, তাও আস্তে আস্তে সব দিয়ে দেব৷ বাজেট আলোচনার প্রশ্নোত্তর পর্বে বেতন কমিশন ও মহার্ঘ ভাতা নিয়ে বিধানসভায় মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের৷
যদিও, মহার্ঘ ভাতার বরাদ্দ ‘শূন্য’ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে কর্মচারী মহল৷ তথ্য তুলে ধরে কনফেডারেশন অব স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘২০২০-২০২১ বাজেটে মহার্ঘভাতার কলমে ডট্ ডট্ ডট্ এই ঔদ্ধত্য ভেঙে চূড়মার করে দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র সরকারি তহবিল থেকে বেতন পাওয়া কর্মচারীদেরই আছে৷ বন্ধুরা আগামীদিনে এই আমাদের এই কথাটা মনে রাখতে হবে৷’’
বৃহস্পতিবার মহার্ঘভাতা মামলার শুনানিতে গরহাজির ছিলেন সরকারি কর্তা৷ কিন্তু গত ৫ ফেব্রুয়ারি স্যাটে আইনজীবী আমজাদ আলির রিভিউ পিটিশনের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেওয়া কথা ছিল৷ কিন্তু অনুপস্থিত থাকায় কারণে আদালত অবমাননার মামলার শুনানি হয়নি৷ আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সরকারি কর্তার বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়া দিয়েছে আদালত৷ এবং কর্মচারী সংগঠনের আইনজীবী আমজাদ আলিকে আগামী ১৮ মার্চ আদালত অবমাননার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ কেননা, স্যাটের রায় পুনর্বিবেচনা করার বিষয়ে রাজ্যের আর্জিমামলা শেষ না হলে আদালত অবমাননার মামলাটি ওঠার সুযোগ থাকছে না৷
গত বছর রাজ্য স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনালে ডিএ মামলার রায়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, বকেয়া ডিএ সরকারী কর্মচারীদের মিটিয়ে দিতে হবে৷ কীভাবে তা দিতে হবে তাও বলা হয় স্যাটের তরফে৷ এরপর রাজ্য সরকার স্যাটের দেওয়া রায় পালন করেনি৷ নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর রাজ্য সরকার স্যাটের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়৷ পাল্টা কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করেন৷ আগামী ১৮ মার্চ সেই মামলার শুনানি রয়েছে৷