কলকাতা: শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বিভ্রান্তি রেখেই সমস্ত সরকারী কর্মচারীর স্টাফ প্যাটার্ন দাখিলেরর সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে৷ তাই একবার সংশোধনের পরেও যে বিষয়গুলি নিয়ে অস্বচ্ছতা থেকে গেছে সেই বিষয়গুলি নিজেরাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছেন শিক্ষক মহলের একাংশ৷ এবিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি একাধিক প্রশ্ন ও দাবি তুলে ধরেছেন৷
ঠিক কী কী প্রশ্ন ও দাবি উঠে এসেছে তাদের বিশ্লেষণ থেকে-
১) রাজ্যের সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের কিসের ভিত্তিতে আপার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি এই দুই ভাগে ভাগ করা হচ্ছে ,তার কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি৷
২) এতকাল ধরে বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত ডিআইয়ের অনুমোদিত নথি একমাত্র প্রামাণ্য হিসেবে গণ্য হত৷ সেখানে উল্লিখিত বিষয় ও পদ অগ্রাহ্য করা হলে শিক্ষকরা মেনে নেবেন কেন? সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সম্মতি ব্যতিরেকে এর পরিবর্তন কতটা যুক্তিসম্মত?
৩) যেখানে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল ইন্টিগ্রেটেড সিস্টেমে রাখতে হচ্ছে ,সেখানে শিক্ষকদের কিসের ভিত্তিতে এবং কেন আপার প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি এই দুই ভাগে ভাগ করা হবে?
৪)আপার প্রাইমারিতে ফার্স্ট ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য একটি অথচ সেকেন্ড এবং থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজের জন্য দুটি পোস্ট কেন রাখা হয়েছে? রাজ্যে বাংলা ভাষা শিক্ষার গুরুত্ব কি অপেক্ষাকৃত কম বলে ভাবা হচ্ছে?
৫)অনলাইনে স্টাফ প্যাটার্ন দাখিল করতে গিয়ে যেসব শিক্ষকদের উদ্বৃত্ত দেখানো হচ্ছে তাদের ভবিষ্যতে এডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রান্সফার বা বাধ্যতামূলক বদলির আওতায় আনা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়?
৬)অনার্স ও পি জি স্কেলের শিক্ষকরা নরমাল সেকশনে থাকা সত্ত্বেও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের পঠন পাঠনের সাথে যুক্ত থাকেন৷ স্টাফ প্যাটার্ন এর মধ্য দিয়ে তাদের নরমাল সেকশনে উদ্বৃত্ত দেখানো হলে ভবিষ্যতে কি ওই পোস্টগুলি বাতিল বলে গণ্য হবে?
৭)উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পঠন-পাঠনের সাথে যুক্ত অনার্স ও পি জি স্কেলের টিচারদের উচ্চমাধ্যমিক সেকশনেই রাখতে হবে, সেকেন্ডারি বা আপার প্রাইমারি সেকশনে রাখা যাবে না৷ তা নাহলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পঠন-পাঠন ব্যাহত হবে৷এর ফলে ভবিষ্যতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷
৮)শিক্ষকদের সম্মতি ব্যতিরেকে কোনোভাবেই কোনো শিক্ষককে তার অ্যাপরুভালে গ্রুপ ও সাবজেক্ট পরিবর্তন করা যাবে না৷
৯)স্টাফ প্যাটার্ণের( ২০১৬,সেপ্টেম্বর) পরে নিযুক্ত শিক্ষকদের অ্যাপ্রুভালে উল্লিখিত গ্রুপ ও অবস্থানে রেখে তার আগে নিযুক্ত শিক্ষক অর্থাৎ সিনিয়র শিক্ষকদের উল্লিখিত অবস্থান পরিবর্তন করে তাদেরকে যেকোনো জায়গায় সরিয়ে দেওয়া যাবে না৷
১০)সরকারি আধিকারিকদের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাছে বার্তা পাঠানো হচ্ছে স্টাফ প্যাটার্ন না সাবমিট করলে নাকি ভ্যাকেন্সি স্টেটমেন্ট না পাওয়ায় সেই শূন্যপদ গুলিতে শিক্ষক নিয়োগ করা যাচ্ছে না৷ বিষয়টি যুক্তিসম্মত না বলেই মনে করছে শিক্ষকমহল৷
১১)বছর ইউ ডাইস ফিলাপ করার পরও ভ্যাকেন্সি স্টেটমেন্ট না বোঝার কোন কারণ নেই, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সমগ্র রাজ্যে ভ্যাকেন্সি স্ট্যাটাস নির্ণয় করে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট করা সহজেই যেত তার জন্য স্টাফ প্যাটার্ন বাধ্যতামূলক করতে হবে কেন?
১২)উচ্চাকাঙ্ক্ষী শিক্ষকদের অতিরিক্ত যোগ্যতা অর্জন করে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চতর বেতনক্রম বা প্রধান শিক্ষক হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে না তো?
১৩) শিক্ষক মহলের আশঙ্কা, আবেদনের ভিত্তিতে বদলি নীতি যেটা বর্তমানে নানা কারণে বন্ধ হয়ে আছে, স্টাফ প্যাটার্ন চালু হলে এই বদলি নীতি আরো জটিল হয়ে দেখা দেবে৷ কীভাবেই বা মিউচুয়াল বা স্পেশাল ট্রান্সফার হবে তার কোনো সদুত্তর স্টাফ প্যাটার্নে নেই৷
স্টাফ প্যাটার্ণের অদূরপ্রসারী ফল শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মী সংকোচন করবে এমনই আশঙ্কা করছে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি৷ সংগঠনের বক্তব্য, ভ্যাকেন্সি স্ট্যাটাস, ছাত্রসংখ্যা যেহেতু সবটাই পোর্টালে থাকবে, তাই সরকারের মর্জি মতন স্যাচুরেটেড স্টাফ দেখিয়ে অতিরিক্ত পদগুলি নিশ্চিহ্ন করা এবং সরকারি বিদ্যালয়গুলির কার্যকারিতা ভেতর থেকে নষ্ট করে দেওয়ার এক ভাবনা উঠে আসছে৷ ফলে শিক্ষায় বেসরকারিকরণ বা বাণিজ্যিকীকরণের পথ আরও প্রশস্ত হবে৷
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির মতে স্টাফ প্যাটার্নের বিষয়ে শিক্ষা দপ্তরের সদিচ্ছা ও স্বচ্ছতা তখনই বজায় থাকবে যখন শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে সমস্ত স্বীকৃত শিক্ষক সংগঠন গুলিকে নিয়ে এ বিষয়ে ঐক্যমতে আসা যাবে৷ তাই বিভ্রান্তি না কাটা পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দকোনভাবেই অনলাইনে স্টাফ প্যাটার্ন দাখিল না করার আবেদন জানিয়েছে সংগঠন৷ তাদের দাবি না মেনে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর জোর করে প্রধান শিক্ষকদের দিয়ে স্টাফ প্যাটার্ন দাখিল করাতে চাইলে এরপর বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্রের৷