কলকাতা: বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে ২ বছর ৪ মাস৷ কিন্তু, দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত টেটের পরীক্ষায় নিতে পারেনি রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ৷ ২০১৫ সালের পর এই রাজ্যে টেট বা টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট নেওয়া হয়৷ ২০১৭ সালে ওক্টবরে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও এখনও শূন্যপদ জানানো দূর, কবে হবে পরীক্ষা, তা এখনও জানানো হয়নি৷ উল্টে পরীক্ষার দিনক্ষণ জানানোর দাবিতে হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে মামলা৷ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ থমকে থকায় চূড়ান্ত ক্ষোভ জমেছে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে৷ এবার সেই সমস্ত জট কাটিয়ে ভোটের কথা মাথায় রেখে নিয়োগের পথে হাঁটতে চলেছে রাজ্য৷
সামনেই পুরভোট৷ তারপর রয়েছে বাংলা বিধানসভা নির্বাচন৷ সর্বভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম স্কুল শিক্ষা দপ্তরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, খুব সম্ভব পুরভোটের ফলাফল দেখে প্রাথমিকের টেট পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রকাশ করতে পারে স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷ ইতিমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দপ্তরে রয়েক লক্ষ প্রার্থীর আবেদন জমা পড়ে রয়েছে৷ কিন্তু, সেই আবেদনগুলি কবে দিনের আলো দেখবে, তা নিয়ে অবশ্যপ্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য কোনও মন্তব্য করেনি৷ এর আগে আজ বিকেল ডট কমকে মানিক ভট্টাচার্য সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কবে পরীক্ষা হবে তিনি বলতে পাবেন না৷ সরকার চাইলে পর্ষদ পরীক্ষা নেবে বলেও সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেন৷
কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে প্রায় ২ বছর ৪ মাস সময়ের মধ্যেও কি সরকারের ‘চাওয়া’ হয়নি? ভোট আসছে বলেই কি সেই ‘চাওয়া’র গুরুত্ব বেড়েছে? কলকাতা হাইকোর্টে ভর্ৎসনার পরও কেন রাজ্যের সেই ইচ্ছা জাগরিত হল না? তবে, সর্বভারতীয় ওই সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, বহু বিতর্কের পর টেটের পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতি কার্যত চূড়ান্ত করে ফেলেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তর৷ অপেক্ষা শুধুই নির্বাচন!
রাজ্যে শেষ বার প্রাথমিকের টেট নেওয়া হয়েছিল ২০১৫ সালে৷ সেই নিয়োগ নিয়ে কম অনিয়ম হয়নি৷ হয়েছে মামলা৷ ২০১৬ সালে টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ার পরও নেওয়া যায়নি পরীক্ষা৷ ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে ফের টেটের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়৷ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, আবেদন জমা নেওয়ার কাজ শেষ হলেো শূন্যপদের সংখ্যা এখনও জানাতে পারেনি পর্ষদ৷ তবে সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রাথমিক স্কুলে ৩০ হাজারেরও বেশি শূন্য শিক্ষকপদ রয়েছে৷
টেট পরীক্ষার দিনক্ষণ প্রকাশের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন শীর্ষেন্দু সেনগুপ্ত-সহ বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী৷ মামলাকারীদের আইনজীবী ফিরদৌস শামিম আদালতকে জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে টেটের নির্দেশিকা জারি করেছিল পর্ষদ৷ কয়েক লক্ষ শিক্ষক পদপ্রার্থীরা ১০০ টাকা জমা করে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন৷ কিন্তু, ১ বছর ৮ মাস পরও সেই পরীক্ষা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷
তিনি জানান, এনসিটিই বা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বছর অন্তত একবার প্রতিটি রাজ্য সরকারের টেট পরীক্ষা নেওয়ার কথা৷ কিন্তু, ২০১৫ সালের পর থেকে পরীক্ষা নেওয়াই হচ্ছে না৷ রাজ্যে দু’টি টেট পরীক্ষা নেওয়া হয়৷ পরীক্ষায় বসেন ৩৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী৷ ৪৩ হাজার শূন্যপদে নিয়োগও হয়েছে৷ সেখানেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল৷ মামলা হয় বেশ কয়েকটি৷ পর্ষদ সূত্রে খবর, এখনও ২৫ হাজার শূন্যপদ রয়েছে৷ ফলে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাব বাড়ছে৷ অথচ, টেট পরীক্ষায় সফল হওয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন অনেকেই রয়েছেন, যাঁদের ভবিষ্যৎ ক্রমশ অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে৷