হাবড়া: হাবড়া শ্রীচৈতন্য কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হওয়ার পর রবীন্দ্রভারতী থেকে ইংরেজিতে MA পাস করেছেন৷ বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও সরকারি চাকরি তো দূর অস্ত, বেসরকারি ভাল চাকরিও কপালে জোটেনি। তার তাই একপ্রকার হতাশার মধ্যেই দিন কাটছিল তরুণীর।
মোবাইলে সোশ্যাল সাইট স্ক্রল করতে করতেই আচমকা মুশকিল আসান৷ ‘প্রফুল্ল বিল্লরে এমবিএ চা ওলার’ কাহিনী দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ইংরেজিতে এমএ পাশ তরুণী খুলে ফেললেন আস্ত একখানা চা দোকান৷
রূপকথার কোনও গালগপ্পো নয়৷ বাস্তবের এই কাহিনী দেখতে হলে আসতে হবে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার স্টেশনে৷ অদূরে কৈপুকুরের বাসিন্দা বছর ছাব্বিশের তরুণী টুকটুকি দাস। বলছঠিলেন, ‘‘এতদূর পড়াশোনা করেও মনমতো চাকরি না পেয়ে হতাশা চেপে ধরছিল৷ তখনই অনুপ্রেরণা জোগাল জীবন সংগ্রামে লড়াই করা ‘প্রফুল্ল বিল্লরে এমবিএ চা ওলার’ কাহিনী। তা দেখে একপ্রকার অনুপ্রাণিত হই৷’’
খানিক থেমে যোগ করেন, ‘‘মানসিক জেদ ও একাগ্রতাকে হাতিয়ার করে চাকরি না পাওয়ার হতাশা হাবড়া স্টেশনে চা দোকান খোলার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলি৷’’ যেমন ভাবা, তেমন কাজ৷ দু’নম্বর প্লাটফর্মে ছোট্ট একটি দোকান এক বছরের জন্য ভাড়া নেন। আর সোমবার থেকে সেখানেই বিভিন্ন স্বাদের চা বিক্রি শুরু করছেন৷ ক্রেতা টানতে চায়ের সঙ্গে টা হিসেবে সন্ধ্যের দিকে সিঙ্গারা বিক্রি করছেন৷ আগামীদিনে মোমো বা এই ধরনের জনপ্রিয় কিছু খাবারও সেই তালিকায় রাখার পরিকল্পনা রয়েছে টুকটুকির৷
চায়ের স্বাদ কেমন হচ্ছে, বোঝানোর জন্য শুরুর দিন দু’ঘণ্টা একেবারে বিনামূল্যে চা খাওয়ানো হয় স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসা নিত্যযাত্রীদের। তবে এই লড়াইটা সহজে হয়েছে এমনটা ভাবাও ভুল৷ টুকটুকির কথায়, ‘‘চা দোকান করব শুনে প্রথমে পরিবারের সকলেই আপত্তি করছিলেন৷ তখনই ইউটিউবে চা ওয়ালা বিভিন্ন মানুষের ভিডিও দেখিয়ে পরিবারকে বুঝিয়েছে এভাবেও স্বনির্ভর হওয়া সম্ভব।’’ তাই পরে মেয়ের এই সিদ্ধান্তকে একপ্রকার স্বাগত জানিয়েছে পরিবার।
ফলে হাবড়া স্টেশনের ছোট্ট একটি চায়ের স্টল থেকে “এম এ ইংলিশ চাওয়ালি” নামে দোকানের যাত্রা শুরু হয়েছে৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী একসময় চা ওয়ালা ছিলেন৷ অনেক ইঞ্জিনিয়র, এমবিএ, উচ্চ শিক্ষিত যুবকও চায়ের দোকান খুলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ইংরেজিতে এমএ পাস করা টুকটুকিও স্বপ্ন দেখতে চাওয়ালি থেকেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবেন৷