কলকাতা: ভোটকর্মীদের তীব্র আন্দোলনের জেরে অবশেষে লিখিত প্রতিশ্রুতি নির্বাচন কমিশনের৷ ভোট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের তরফে আজ কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত প্রতিবাদ মিছিল পা মেলান ভোটকর্মীদের একাংশ৷ নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বিভিন্ন জেলা থাকা আসা শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা৷ মিছিল শেষে পাঁচ জনের এক প্রতিনিধি দল রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে গিয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানিয়ে আসেন৷
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরিজ আফতাবের সঙ্গে দেখা করে মঞ্চের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, “পোলিং পার্টির জন্য লিখিত সুনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি ছাড়া আমরা কোন বুথে ভোট নেওয়ার জন্য যাবো না। এই দাবিতে অনড় থাকায় মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরিজ আফতাব আমাদের বলেন, আজকেই তিনি প্রেস নোট রিলিজ করবেন এবং তাতে পরিষ্কারভাবে প্রত্যেক ভোট কর্মীর জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সুনিশ্চিত প্রতিশ্রুতি দেবেন৷ আমরা দাবি করি, প্রতিটি ভোট কর্মীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারে এই প্রতিশ্রুতির যোগ করে দিতে হবে। তিনি কথা দিয়েছেন প্রত্যেক পলিং পার্টি অনুযায়ী একটি করে প্রেস নোট জুড়ে দেবেন। আমরা দাবি করেছি, আজই তিনি যেন প্রেস কনফারেন্স করে প্রেস নোট রিলিজ করেন। তিনি কথা দিয়েছেন, আজই পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত ভোট কর্মীর উদ্দেশ্যে একটি প্রেস নোট রিলিজ করবেন। এই কথা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনার আরিজ আফতাব বাধ্য হন আমাদের দাবি স্বীকার করতে৷’’
এদিন মঞ্চের তরফে প্রতিনিধি দলে ছিলেন, শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র, রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী, সম্পাদক মন্ডলীর অন্যতম সদস্য অনামিকা চক্রবর্তী, অনিমেষ হালদার এবং অফিস সম্পাদক অয়ন পাল।
এদিন কমিশনে গিয়ে মঞ্চের তরফে জোরালোভাবে দাবি জানানো হয়৷ যেসব শিক্ষক শিক্ষাকর্মীদের বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গের জেলা শাসক এপ্রিল মাস থেকে বেতন বন্ধ করার নোটিশ দিয়েছেন, সেই জেলার ডিআইকে তাঁদের উপর থেকে শাস্তি মূলক এই নির্দেশ প্রত্যাহার না করলে ভোট কর্মীরা আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরে আসবো না বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়৷ এমনকী, তাঁদের উপর থেকে শাস্তির খাঁড়া তুলে নেওয়ার দাবি জানানো হয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনার কথা দেন, শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তিনি জানিয়েছেন, উত্তর দিনাজপুরের ডিএমকে তিনি সে নির্দেশ দেবেন যাতে ডিআই এইসব শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহন না করেন৷
রাজ্যে স্পর্শকাতর বুথ সম্পর্কে মঞ্চের তরফে একাধিক দাবি তুলে ধরা হয়৷ বলা হয়, ‘‘রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আসলে এক ধরনের নিরব সন্ত্রাস চলে। তাকে আপনারা স্পর্শকাতর বলেন না অথচ আমাদের মনে হয় এগুলি স্পর্শকাতর বুথ হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক শিক্ষক শিক্ষাকর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের উপর দায়িত্ব দিয়েছেন, যেখানে যেখানে এরকম ঘটনা ঘটে বলে ঐক্যমঞ্চের পক্ষ থেকে মনে হয় সেইগুলি চিহ্নিত করে দিলে কমিশনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷ আমরা কথা দিয়েছি সে তালিকা অতি দ্রুত কমিশনের কাছে আমরা তুলে দেব৷’’ এছাড়া কমিশনারের তরফে কোন বুথে অবাঞ্ছিত কোন কিছু ঘটলে তা নির্বাচন কমিশনের নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে আর্জি জানান৷ এছাড়া ১৯৫০ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানানো যাবে। এছাড়া তিনি বলেন, কোনও অভিযোগ থাকলে আপনারাও আমাকে জানাবেন।
শিক্ষক শিক্ষা কর্মী শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের তরফ থেকে রাজ্য সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, ‘‘দীর্ঘ আন্দোলনের ফলে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আমরা লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছি। এটা আন্দোলনের জয়। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যদি তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করেন তাহলে সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দীর্ঘস্থায়ী তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে ঐক্যমঞ্চের তরফ থেকে।”