কলকাতা: উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি আপার প্রাইমারী সংগ্রামী মঞ্চের৷ চিঠিতে শিক্ষামন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করে বলা হয়েছে, আপার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগে বিলম্বের জন্য মামলার ‘অজুহাত’ বছরের পর বছর বাজিয়ে চলেছে সরকার। আচ্ছা মামলা হল কেন? মামলা কেন হয়? কোর্ট কখন মামলা গ্রহন করে? কখন স্থগিতাদেশ দেয়? মামলা কিভাবে গতিশীল করা যায়? এসব কারো অজানা নয়। জেনে বুঝে না বোঝার বা দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ!
এসএসসির নিয়োগের কথা বলতে গিয়ে মঞ্চের তরফে বলা হয়েছে, ২০১২ সালে একটি এসএসসি পরীক্ষা হয়। যারা এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তাদের একটি টেট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। যার তিন বছরের বৈধতা সীমার মধ্যে ইন্টারভিউ নিয়ে যোগ্যদের নিয়োগ করার কথা থাকলেও সরকার তা করতে পারেনি। সরকার বলেছিলে আনট্রেন্ডদের নিয়োগের জন্য কেন্দ্রের থেকে ছাড়পত্র আনার বিষয়টি। ইতিমধ্যে ২০১৫ সালে আরও একটি টেট পরীক্ষা হয়। ২০১৬ সালে দীর্ঘ টালবাহানার পর ফলপ্রকাশ হলে যেকোন একটি পরীক্ষার নম্বর দিয়ে ফর্ম ফিলাপ করতে বলা হয়। নিয়োগ বিধিতে পার্শ্ব শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রেখে মামলার অবকাশ রাখা হয়।
এরপর শুরু হয় আবারও টালবাহানা। ২০১৮ তে প্রকাশিত হয় ইন্টারভিউতে অংশ নেওয়ার জন্য প্রথম ফেজের ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের তালিকা। ২০১৯-এ প্রকাশিত হয় ভেরিফিকেশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তালিকা। তালিকাগুলি প্রকাশের পর কমিশন তথা সরকারের অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, অসঙ্গতির ভুরি ভুরি নজির প্রকাশ্যে আসে। বেশি স্কোরের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে বহু কম স্কোরের প্রার্থীকে ভেরিফিকেশনে ডাকা হয়। ট্রেন্ড প্রার্থী থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন বিষয়ে আনট্রেন্ড প্রার্থীদের ডাকা হয়। আবার একই সঙ্গে ট্রেন্ডহীন শূণ্যপদে এস সি, এসটি, প্রতিবন্ধী, ওবিসি প্রার্থীদের ইন্টারভিউ থেকে বাদ দেওয়া হয়। দলে দলে নিয়োগ প্রার্থী আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রায় ছয় হাজার নিয়োগ প্রার্থী আদালতের নির্দেশে ভেরিফিকেশন ও ইন্টার ভিউতে অংশ নেয়।
এরপর ২০১৯ এর অক্টোবরে প্রকাশিত হয় মেধাতালিকা। যা কমিশন তথা সরকারের অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, অসঙ্গতি ও অপদার্থতার চূড়ান্ত নিদর্শন। এই মেধাতালিকায় টেট, অ্যাকাডেমিক, প্রফেশনাল স্কোর ইচ্ছে খুশি বাড়িয়ে হরির লুঠ করা হয়েছে। কারও কারও টেট স্কোর ৪৮পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অ্যকাডেমিকে থার্ড ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস পাওয়া প্রার্থীকে ফার্স্ট ক্লাসের নম্বর দেওয়া হয়েছে। আবেদন পত্রে নিজেকে আনট্রেন্ড দাবী করা প্রার্থীকেও দেওয়া হয়েছে ট্রেনিং এর বরাদ্দ দশ দশটি নম্বর। এমনকি ২০১৬ সালে আবেদন গ্রহন শেষ হয়ে গেলেও কোনও কোনও প্রার্থীর ২০১৯ এও ফর্ম সাবমিশন হয়েছে। ট্রেন্ডহীন শূণ্যপদে এস সি, এসটি ওবিসি প্রতিবন্ধী আনট্রেন্ড প্রার্থীদের ইন্টারভিউ না নিয়ে নিয়োগ বিধিবহির্ভূত ভাবে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়। দ্রুত নিয়োগের আশ্বাসকে কটাক্ষ করে তাদের দাবি সমস্ত অসঙ্গতি দূর করে মামলা মিটিয়ে এই মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।