কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা দেশ, চাকরির সমস্যা রয়েছে সর্বত্র। বাংলায় চাকরি নেই বলে বহুদিন ধরেই অভিযোগ করছে বিরোধীরা। তবে এটা ঠিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিল্প আনার জন্য প্রচুর চেষ্টা করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে সিলিকন ভ্যালিতে ডেটা সেন্টার তৈরির জন্য আদানি গোষ্ঠীকে জমি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। সদ্য নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। সেখানে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়েছে।
শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন নিউটাউনের সিলিকন ভ্যালি ফেজ-৩ অঞ্চলে জমি দেওয়া হচ্ছে আদানি গোষ্ঠীকে। সেখানে তারা ডেটা সেন্ট্রাল পার্ক তৈরি করবে। আদানি গোষ্ঠীকে ৫১.৭৫ একর জমি দেওয়া হচ্ছে বলে পার্থবাবু জানিয়েছেন। এতে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করছে রাজ্য। উল্লেখ্য এটাই রাজ্যে প্রথম বিনিয়োগ হতে চলেছে আদানি গোষ্ঠীর। পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, “সিলিকন ভ্যালিতে ফেজ ৩-তে রাজ্য বেঙ্গল টেক পার্কে হাইপার স্কেল ডেটা সেন্টার গড়ার জন্য আদানি এন্টারপ্রাইজ হিডকোর কাছে আবেদন করেছিল। সেটা অনুমোদিত হয়েছে। মোট ৫১.৭৫ একর জমিতে কাজ হবে। এখানে প্রচুর কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা আছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমও শুরু হবে৷”
খড়্গপুর বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে সাইকেল হাব করার কথা কিছুদিন আগেই বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রীর আরও সংযোজন, “ওই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে জমি দেওয়ার জন্য ডব্লিউবিআইডিসি চারটি সংস্থাকে রেকমেন্ড করে। পাঁচ একর করে জায়গায় চারটি সংস্থা সাইকেল উৎপাদন কারখানা করবে। প্রতিটি সংস্থা প্রাথমিকভাবে দশ কোটি টাকার লগ্নি করবে। তাতে দেড়শো জন করে কর্মসংস্থান হবে।”
তৃতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাখির চোখ করেছেন শিল্পায়নকে। সেই সূত্রে শিল্পপতিদের সঙ্গে বহু বৈঠক করেছেন তিনি। এছাড়া মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে বেঙ্গল বিজনেস সামিটে দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা উপস্থিত ছিলেন। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন শিল্প সম্মেলনে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার লগ্নি প্রস্তাব এসেছে। উল্লেখ্য শিল্প সম্মেলনের আগে নবান্নে এসে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানি। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গে বিপুল বিনিয়োগ করতে চলেছে আদানি গোষ্ঠী। সেটাই এবার বাস্তব রূপ নিল। স্বাভাবিকভাবেই ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে এভাবে বিরোধীদের মোক্ষম জবাব দিল শাসক তৃণমূল তথা রাজ্য সরকার। কারণ এতদিন ধরে বিরোধীরা বলে চলেছে রাজ্যে শিল্প আসবে না।
কিন্তু তা সত্ত্বেও বিষয়টি নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। আদানি গোষ্ঠী এই প্রকল্প কবে থেকে শুরু করবে, সেখানে কত জনের চাকরি হবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে শিল্পমন্ত্রীকে কিছু বলতে শোনা যায়নি। আদানি গোষ্ঠীর তরফ থেকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। গত শিল্প সম্মেলনের সময় মুখ্যমন্ত্রী যে বিপুল অঙ্কের টাকা বাংলায় বিনিয়োগ হতে চলেছে বলে দাবি করেছিলেন সেটা বাস্তব রূপ নিলে প্রচুর কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু কবে থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়। বাংলা তথা দেশ জুড়ে একটা চাকরির জন্য হাহাকার চলছে। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবাসী চায় প্রচুর কর্মসংস্থান হোক এ রাজ্যে। তাই আদানি গোষ্ঠীকে জমি দেওয়ার খবর নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক বলেই সবাই মনে করছে।