কলকাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশনে একাধিক শূন্যপদ থাকলেও, ২০১৬ সালের পর থেকে কোনও চাকরির পরীক্ষা হয়নি৷ রাজ্যের লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক যুবতীর স্বপ্ন পূরণের অন্যতম মাধ্যম ছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ কিন্তু অভিযোগ, সেই প্রতিষ্ঠানেরই রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন দুর্নীতি বাসা৷
আরও পড়ুন- সময়মতো শিক্ষিকাকে চাকরিতে যোগদানে বাধা, পদ গেল প্রধান শিক্ষকের
নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মী নিয়োগে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে৷ যার শিকড়ে পৌঁছতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট৷ ২০১৫ ও ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে উচ্চ প্রাথমিক, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ, তিনটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়৷ ২০১৬-র নভেম্বরে হয়েছিল নবম-দশম শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা৷ ওই বছরই ডিসেম্বর মাসে হয় একাদশ-দ্বাদশের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা৷ সেই পরীক্ষারই মেধাতালিকা ও নিয়োগ ঘিরে চরম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে৷ মামলা গড়ায় আদালতে৷ ছয় বছর অপেক্ষার পর হাই কোর্টের নির্দেশে শুরু সিবিআই তদন্ত৷
এসএসসি শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার পূর্ণমান ১০০৷ এর মধ্যে ৫৫ নম্বর লিখিত৷ শিক্ষগত যোগ্যতার জন্য ৩৫ নম্বর ও ইন্টারভিউর জন্য বরাদ্দ ১০ নম্বর৷ নিয়ম অনুযায়ী দুটো তালিকা তৈরি করা হয়৷ একটি প্যানেলভুক্তদের তালিকা, অন্যটি ওয়েটিং লিস্ট৷ তবে, ২০১৬ সালে এসএলএসটি পরীক্ষার ফল কেন্দ্রীয় ভাবে হয়নি৷ আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়৷ তবে সেখানে প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরের উল্লেখ ছিল না৷ নিয়ম অনুযায়ী যাঁরা এসএসসি কাউন্সিলিংয়ের ডাক পান, তাঁদের রোন নম্বর সহ নোটিফিকেশন জারি করা হয়৷ এক্ষেত্রে এসএমএস করে কয়েকজন প্রার্থীকে ডাকা হয় কাউন্সিলিংয়ের জন্যে৷
এসএসসি নিয়োগে দুর্নীতির গুচ্ছ অভিযোগের ভিত্তিতেই মামলা হয়েছে৷ ২০১৮ সাল পর্যন্ত উচ্চ প্রাথমিকের নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা হয় হাই কোর্টে৷ ২ বছর পর এসএসসি’র শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগে মামলা শুরু হয়৷ এসএসসি নবম-দশম, গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি নিয়োগ দুর্নীতির ৬টি মামলায় তদন্তভার সিবিআই-এর হাতে দেয় হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ৷ তবে এর মধ্যে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি একটি করে মামলা খারিজ করে দেয় ডিভিশন বেঞ্চ৷ দুটি মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়৷ গ্রুপ ডি’র একটি মামলায় এফআইআর করে তদন্ত করছে সিবিআই৷
এসএসসি নবম-দশমে নিয়োগ দুর্নীতির মামলাতেও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ জারি করা হয়েছে৷ বাকি মামলাগুলির তদন্ত চলছে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চে৷ এই সকল মামলা না মেটা পর্যন্ত স্কুল শিক্ষক নিয়োগের কোনও পরীক্ষা নেওয়া হবে না বলেই জানিয়েছে স্কুল শিক্ষা দফতর৷
এক চাকরি প্রার্থীর কথায়, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমরা রাস্তায় পড়ে রয়েছি৷ যাঁদের কোনও যোগ্যতা নেই তাঁরা যদি শিক্ষকতা করে, তাহলে এই ডিগ্রি কেন অর্জন করলাম? পরবর্তী প্রজন্মই বা কী শিক্ষা পাবে? অপর এক প্রার্থীর কথায়, ২১৬ সালে প্রথম এসএলএসটি পরীক্ষা দিয়েছিলাম৷ মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ৷ এখন ২০২২৷ আজও নিয়োগপত্র পাইনি৷ অধিকাংশ নিয়োগই হয়েছে দুর্নীতি করে৷ এই ছ’বছরে বয়সও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷ আমরা জানি না ফের কবে পরীক্ষা হবে৷ সেই পরীক্ষায় আদৌ বসতে পারব কিনা, সন্দেহ রয়েছে৷
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”YouTube video player” width=”560″>