কলকাতা: আশঙ্কা ছিল৷ ছিল চূড়ান্ত উৎকণ্ঠা৷ ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বর্ধিত হারে বেতন কাঠামো ঘোষণা হলেও ধোঁয়াশা ছিল বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ও এরিয়ার নিয়ে৷ বকেয়া মহার্ঘ ভাতা নিয়ে খুব একটা স্পষ্ট বার্তা না মিললেও এরিয়ার প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করল রাজ্য সরকার৷ অর্থ দপ্তরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হল, বকেয়া এরিয়ার পাওয়া যাবে কি না৷
দেবীপক্ষের সূচনার আগে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বেশ খানিকটা ভাল খবর শুনিয়েছে নবান্ন৷ বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুমোদন দেওয়ার পর এবার রোপা আইন ২০১৯ চালু করেছে রাজ্য সরকার৷ আগামী বছর পয়লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে এই নয়া বেতন কাঠামো৷ তবে, সুখবর থাকলেও আছে বড়সড় অস্বস্তি৷ রাজ্য অর্থ দপ্তরের তরফে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কোন শাখায় কোন গ্রেডের কর্মীদের কত বেতন পাবেন, তার নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে৷ মূলত ষষ্ঠ বেতন কমিশনের পরিপ্রেক্ষিতে রোপা ২০১৯ জারি হয়েছে৷ রাজ্য সরকারের তরফে ‘রোপা’ জারি করা হয়েছে গত বুধবার৷ রিভিশন অফ পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্সেস ২০১৯ বা রোপা আইন ২০১৯ জারির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে অর্থ দপ্তরের ওয়েবসাইটে৷ কিন্তু, নয়া এই রোপা আইনে ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে সাফ উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি বকেয়া এরিয়ার পাবেন না৷ ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কোনও এরিয়ার দেওয়া হবে না৷ আর এতেই বাড়ছে সরকারি কর্মচারীরের মধ্যে ক্ষোভ৷
দেখে নেওয়া যাক নতুন রোপা ২০১৯ আইন অনুযায়ী বেতন কাঠামো কেমন হবে? (আরও বিস্তারিত জানতে রাজ্য সরকারের অর্থ দপ্তরের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি দেখুন এই লিঙ্কে- www.wbfin.nic.in/writereaddata/ROPA%202019.pdf)
বেয়কা মহার্ঘ ভাতা ইস্যুতে ষষ্ঠ বেতন কমিশন ও রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট না হওয়ায় ইতিমধ্যেই জারি হয়েছে কর্মচারী মহলে ক্ষোভ৷ রাজ্যের বেতন কমিশনের অনুমোদন দেওয়ার পর কনফেডারেশন অব স্টেট গভমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের একটাই কথা, সরকার পঞ্চম বেতন কমিশনের বকেয়া মহার্ঘ ভাতার কথা না জানিয়ে ষষ্ঠ বেতন কমিশন কবে থেকে কার্যকর হবে তা ঘোষণা করেছে৷ যা আদালতের নির্দেশকে অমান্য করা হয়েছে বলেই আমরা মনে করছি৷ আমরা এই নিয়ে আগামী দু’একদিনের মধ্যে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে রাজ্য ট্রাইবুনালে অভিযোগ জানাব৷’’
যদিও এর আগে মহার্ঘভাতা মামলায় স্যাটের তরফ সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কেন্দ্রের হারে রাজ্যের কর্মীদের দিতে হবে মহার্ঘভাতা৷ এই মর্মে রাজ্যকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাতে হবে মহার্ঘ ভাতার পরিমাণ৷ একই সঙ্গে রাজ্য কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতা ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হওয়ার আগে নগদ অথবা বেতনের মাধ্যমে মিটিয়ে দিতে হবে৷ কিন্তু বেতন কমিশনের সুপারিশে সেই বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় এবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন করছেন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের একাংশ৷ একই সঙ্গে ২০১৬’র পয়লা জানুয়ারি থেকে মিলবে এরিয়ার? তা নিয়ে উঠছিল নানান প্রশ্ন৷
সংবাদমাধ্যমে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার আগেই জানিয়েছিলেন, পে কমিশনের সঙ্গে এখন মিশে যাবে মহার্ঘ ভাতা৷ এই মুহূর্তে রাজ্যের কর্মীরা ১২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা পান৷ অভিরূপ বাবু জানিয়েছেন, বেতন কমিশনের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা মিশিয়ে দেওয়া হবে৷ নতুন বেতন কাঠামোর চালু হওয়ার পর পর যদি ফের মহার্ঘ ভাতার ঘোষণা করা হয় তাহলে মূল বেতনের সঙ্গে তা পাওয়া যাবে৷ বেতন কমিশনের হিসাব বলছে, যদি কোনও সরকারি কর্মীর বেতন যদি ১০০ টাকা ধরা হয়, তাহলে তার উপর ১২৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা মিলবে৷ অর্থাৎ দু’টি মিলিয়ে ২২৫ টাকা হবে৷ আর কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ওই ২২৫ টাকার ওপর আরও ১৪.২ শতাংশ হারে বাড়বে মূল বেতন৷ ফলে, মূল বেতন দাঁড়াবে ২৫৭ টাকার কাছাকাছি৷