কলকাতা: প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই ডিভিশন বেঞ্চে যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। এদিন মামলার শুনানি শেষে রায়দান স্থগিত রাখা হল। বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, আগামী ১৯ তারিখ ফের মামলার শুনানি হবে। সেদিনই নির্দেশ আসতে পারে। তার আগে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে কোনও স্থগিতাদেশ দেওয়া হল না আজও।
এদিন মামলার শুনানিতে পর্ষদের তরফে আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে যথেষ্ট ভুল রয়েছে। এই মামলা গ্রহণযোগ্যই ছিল না। একটি স্পাইরাল বাইন্ডিং দেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই স্পাইরাল বাইন্ডিংয়ের তথ্য হলফনামা আকারেও পেশ করা হয়নি। একই সঙ্গে এও জানান হয়, পর্ষদের তরফে নিয়ম মেনে ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। যদিও মামলায় অ্যাপটিটিউড টেস্টের কোনও উল্লেখই ছিল না। তাও সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি নিজেই ওই প্রসঙ্গ তুলে সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
এদিকে চাকরিহারানো প্রার্থীদের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যে অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীরা মামলা করেছেন তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ এনসিটিই-র গাইডলাইন অনুযায়ী ২০১৯ সালে প্রশিক্ষণের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে মামলাকারীদের মামলা কীভাবে গ্রহণ করা হল, সেটাই প্রশ্ন। এক্ষেত্রে আরও দাবি করে তিনি বলেন, পক্ষপাতিত্ব করে তাদের সুযোগ করে দিয়েছেন সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি। আইনজীবী আরও বলেন, সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশে বার বার দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। দুর্নীতি যদি হয়েও থাকে সেক্ষেত্রে যারা চাকরি হারিয়েছেন তারা কী ভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন? এই প্রশ্ন তাঁর।
” style=”border: 0px; overflow: hidden”” title=”আরও কতজন জড়িত এই দুর্নীতি কাণ্ডে? How many more involved in recruitment scam?” width=”789″>
এই প্রসঙ্গে নিয়োগ কাণ্ডে ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্যদের নামও নেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, তারা গ্রেফতার হয়েছেন বলেই ধরে নিতে হবে এক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে? তাদের বক্তব্য না শুনেই কী ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল? এক্ষেত্রে তাদের দোষ কোথায়? সেটা মামলায় উল্লেখ করা হয়নি এবং যাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া হল তাদের কোথাও এই মামলায় পক্ষ করা হয়নি। এটা ন্যায় বিচার হতে পারে না, এমনই বক্তব্য তাঁর। অন্যদিকে চাকরিহারানোদের পক্ষের আরেক আইনজীবী জয়দীপ কর বলেন, বিচারপতি আগে থেকেই নিজের মনোস্থির করে ফেলেছিলেন। আগে এই মামলা চলাকালীন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘ঢাকি সমেত বিসর্জন দিয়ে দেব’। পরবর্তী সময় সেটাই করা হয়েছে।
যদিও মূল মামলাকারী প্রিয়াঙ্কা নস্করের আইনজীবী বলেন, পর্ষদের প্রকাশিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এই মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তাছাড়া বার বার বলা হচ্ছে চাকরি হারানোদের কোনও সুযোগ দেওয়া হয়নি। একথা ঠিক নয়। সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতির তরফে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেননি। আবার পর্ষদও কোনদিনও ২০১৬ সালের নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য জনসমক্ষে আনেনি। আদালতে জনস্বার্থ মামলা হওয়ার পর মামলাকারীরা যখন তথ্য খতিয়ে দেখার সুযোগ পান তখন সমস্ত বিষয় সামনে আসে। বিচারপতি তালুকদার অবশ্য জানতে চান, তাঁর মক্কেলরা ইন্টারভিউ ও অ্যাপটিটিউড টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন কিনা। আইনজীবী জানান অ্যাপটিটিউড টেস্টই হয়নি।
কিন্তু একটা প্রশ্ন ওঠে যে, কেন ৩৬ হাজার থেকে নির্দেশ সংশোধন করে ৩২ করা হয়েছিল? পর্ষদ জানিয়েছে, এটা টাইপোগ্রাফিক্যাল ভুল ছিল। সে জন্য পরে তা সংশোধন করে ৩২ হাজার করা হয়েছিল। সঠিক সংখ্যাটা হবে ৩০ হাজার ১৮৫। কম্পিউটারাইজড তথ্য নথি লেখার জন্য একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বলেও জানিয়েছে পর্ষদ।