আদালতে ঝুলছে ৪টি মামলা! শিক্ষক নিয়োগে কী কৌশল রাজ্যের?

আদালতে ঝুলছে ৪টি মামলা! শিক্ষক নিয়োগে কী কৌশল রাজ্যের?

কলকাতা: স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা হোক কিংবা টেট৷ দু’টি ক্ষেত্রেই রাজ্য সরকারের দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার কারণে লক্ষাধিক বেকার যুবক-যুবতী শিক্ষক পদে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন৷ পরীক্ষায় যোগ্যতা অর্জন করলেও বিভিন্ন কারণে বেকার যুবক-যুবতীদের শিক্ষা দপ্তর নিয়োগ করছে না৷ কলকাতা হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের মামলা ঝুলছে৷  বহু ক্ষেত্রেই আদালতের নির্দেশ মানা হচ্ছে না৷ প্রাথমিক হোক কিংবা উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এসএসসি কিংবা টেট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া লক্ষাধিক পরীক্ষার্থীকে নিয়োগ করতে পারছে না রাজ্য৷ তবুও নিয়োগ নতুন পদ্ধতিতে নিয়োগের কথা বলছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ আর শিক্ষামন্ত্রীর এই ঘোষণায় চাকরিপ্রার্থীদের মহলে তৈরি হয়েছে তুমুল অসন্তোষ৷

২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য টেট নেওয়া হয়েছিল৷ সেই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ছটি প্রশ্ন ভুল ছিল৷ তা স্বীকার করে নিয়েছে সরকার৷ কলকাতা হাইকোর্টে বহু বিচার-বিশ্লেষণ করে, বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশ্ন পত্র যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল৷ যে ছ’টি প্রশ্ন ভুল রয়েছে, তার পুনর্মূল্যায়ন করে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলা হয়৷ বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, যা ওই ভুল প্রশ্নের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, সেই মামলকারীদের শিক্ষক পদে চাকরিতে যোগ দিতে পারতেন৷ এই নির্দেশ অমান্য হওয়ায় গত ১৪ অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিক শিক্ষা সচিব রত্না বাকচীকে আদালতে ডেকে পাঠিয়েছিল হাইকোর্ট৷ সেই নির্দেশ বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে গড়ায় মামলা৷ গত সেপ্টেম্বর মাসে সুপ্রিমকোর্ট রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে সেই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে৷ কলকাতা হাইকোর্টে নির্দেশ কার্যকর হলে ৩০ হাজার প্রার্থী নিয়োগ পেতেন৷

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অচলাবস্থার কারণে উচ্চ প্রাথমিক টেট (২০১১, ২০১৫) বহু যোগ্যপ্রার্থী চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থী৷ উচ্চ প্রাথমিকে মামলা দায়ের করে অভিযোগ জানিয়েছেন, শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রমাণ না নিয়ে পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে৷ আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ জারি হয়েছে৷ তালিকায় অপ্রশিক্ষিত নাম রয়েছে বলে অভিযোগ দায়ের হয়েছে৷ আদালতে শুনানির সময় এনসিটিই নিয়ম অনুযায়ী প্রশিক্ষিতরা জানিয়েছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে টেট নম্বর, ইন্টারভিউ নম্বর এবং প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য প্রাপ্ত নম্বর যোগ করে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর যোগ্যতা নির্ধারণ করার কথা৷ কিন্তু দেখা গিয়েছে, সমস্ত প্রার্থীর নিজস্ব শিক্ষাগত যোগ্যতার মান ইন্টারভিউয়ের নম্বর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে৷ আদালতে অভিযোগ ছিল, পছন্দের প্রার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আদালতের৷ বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে এই মামলা পড়ে রয়েছে৷ মামলার নিষ্পত্তি হলে কয়েক হাজার বেকার যুবক-যুবতী চাকরি পাবেন৷ 

এনসিটিই আইনে প্রতিবছর এই পরীক্ষা গ্রহণের কথা বলা আছে৷ রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর এই আইনকে মানতা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ৷ ফলে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী শিক্ষক পদে পরীক্ষা দিতে পারছেন শিক্ষক পদে প্রার্থীদের বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে৷ বয়সের কারণে অনেকের আবার পরীক্ষায় বসার সুযোগ থাকছে না৷ ২০১৫ সালের পর ২০১৯ সালে প্রাথমিক টেট না হওয়ার ফলে কয়েক লক্ষ পরীক্ষার্থীর বয়সজনিত কারণে চাকরির পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ মামলায় আবেদনকারীরা এই ব্যাপারে আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন৷ এই মামলা বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় জানতে চেয়েছেন, কেন এই পরীক্ষা কয়েক বছর ধরে বন্ধ আছে৷ এখনও সরকারের কোনও উত্তর মেলেনি৷ 

এছাড়াও নবম-দশম শ্রেণি শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএসসি পরীক্ষার দুর্নীতি হয়েছে৷ এমন অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে৷ শিক্ষক পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে প্রার্থী নামসহ প্রাপ্ত নম্বর প্রকাশ করা হয়নি৷ বহু যোগ্যপ্রার্থী আছেন, যাঁরা আদালতে মামলা দায়ের করে জানিয়েছেন, ইন্টারভিউয়ের প্রাপ্ত নম্বর সহ মেরিট লিস্ট মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে৷ যারা নিয়োগের জন্য অপেক্ষমান তালিকায় রয়েছেন, তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে আনতে হবে৷ তারা দাবি করেছেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি যথাযথভাবে মানতে হবে৷ এই মামলা এখনও নিষ্পত্তি হয়নি৷ 

লাগাতার চারটি মামলা এই মুহূর্তে কলকাতা আদালতে ঝুলে রয়েছে৷ আর এরপরেও শিক্ষা মন্ত্রী বলছেন, নতুন নিয়মে শিক্ষক নিয়োগ করা হবে৷ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, আদালতে থাকা মামলাগুলি নিষ্পত্তি না করে কীভাবে বিধানসভা নির্বাচনের আগে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবে রাজ্য? নাকি লোক দেখানো প্রস্তুতি? প্রশ্ন তুলছেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *