কলকাতা: আদালত অবমাননা মামলায় মুখ পোড়াল স্কুল সার্ভিস কমিশন৷ হাইকোর্টের নির্দেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রকাশ করতে হবে নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগের মেধাতালিকা৷ কিন্তু, গত ১৮ সেপ্টেম্বর আদালতের নির্দেশ মতো ৪ সপ্তাহের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশ করল না কমিশন? তাহলে কী তালিকায় রয়েছে ‘জল’? বেরিয়ে আসবে না তো ভূতুড়ে প্রার্থীদের অস্তিত্ব? প্রশ্ন চাকরিপ্রার্থীদের৷ যে তালিকা চার মাসে প্রকাশিত হল না, তা মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে প্রকাশ করবে কমিশন? নির্দেশ মেনে যদি তা প্রকাশও করা হয়, তাহলে কী ইচ্ছাকৃত ভাবেই মেধাতালিকা চেপে রেখেছিল কমিশন? আদালতে হলফনামা পেশ করে কী জবাব দেয় কমিশন, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যের কয়েক লক্ষ চাকরিপ্রার্থী৷
২০১৬ সালের নবম-দশমে শিক্ষক নিয়োগে মেধাতালিকা সংক্রান্ত মামলায় আজ হাইকোর্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্তাদের হাজির থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়৷ সোমবার সকালে সকালে শুরু হয় মামলা৷ মামলার শুনানিতে কমিশনের তরফে নবম-দশমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়েছে কি না তা জানতে চান বিচারপতি রাজশেখর মান্থা৷ মঙ্গলবার হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে তা জানাতেও নির্দেশ দেন বিচারপতি৷ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ না হলে স্কুল সার্ভিস কমিশনের সেক্রেটারি অশোক সাহার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও সাফ জানিয়ে দেন বিচারপতি মান্থা৷
এদিন মামলার শুনানির শুরুতেই মামলাকারী আইনজীবীর তরফে জানানো হয়, চাকরিপ্রার্থী মনিকা রায় ও অন্য কয়েকজন ২০১৮ সালের অগাস্টে স্কুল সার্ভিস কমিশের বিরুদ্ধে মামলা করেন৷ মেধাতালিকা প্রকাশ না করে নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়৷ প্রথম শুনানি হয় গত ১৮ সেপ্টেম্বর৷ বিচারপতি রাজশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ২০১৬ সালের গেজেট নোটিফিকেশন অনুযায়ী, চার সপ্তাহের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে৷ কিন্তু সেই নির্দেশ মানেনি কমিশন৷ এই অভিযোগ তুলে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়৷ সোমবার ছিল আদালত অবমাননার মামলার শুনানি৷ গত ২৮ জানুয়ারি চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারির বিরুদ্ধে রুল জারি হয়৷
এদিনের মামলার শুনানিতে সেক্রেটারি কোর্টে হাজি হয়ে এজলাশে জানান, স্কুল সার্ভিস কমিশন নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রকাশ করেছিল৷ কিন্তু, এই মন্তব্যের পেছনে কোনও প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় হলফনামার মাধ্যমে গোটা বিষয়টি জানোনর নির্দেশ দেন বিচারপতি মান্থা৷
জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে এসএসসির নবম-দশম শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালের মার্চে৷ অভিযোগ, ওই পরীক্ষার মেধাতালিকা প্রকাশ না করে সরাসরি নিয়োগ করে কমিশন৷ যা কমিশনের গেজেট নোটিফিকেশন বিরোধি৷ মেধাতালিকা প্রকাশের দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন চাকরিপ্রার্থীরা৷ গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর এক রায়ে আদালত নির্দেশ দেয়, পরীক্ষার্থীদের দাবি মতো ৪ সপ্তাহের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশ করতে হবে কমিশনকে৷ হাইকোর্টের নির্দেশের ৪ মাসের মধ্যেও মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়নি৷
সোমবার মামলায় প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ঘুরছে নানান প্রশ্ন৷ অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, ‘‘চার মাসে হল না, তাহলে কীভাবে ২৪ ঘণ্টায় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে? কমিশনের নয়া জাদুতে ভূতুড়ে প্রার্থীর আগমন ঘটবে না তো?’’