নয়াদিল্লি: ভারতের অন্যতম বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB)-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে। মুম্বইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখা থেকে উৎপত্তি হওয়া এই জালিয়াতির অঙ্ক ছিল প্রায় ১৩,৫০০ কোটি টাকা৷ যা ভারতের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবল ধাক্কা দেয়। ঘটনায় নাম জড়ায় দুই হাই-প্রোফাইল শিল্পপতির—বিলিয়নিয়ার জুয়েলারি ব্যবসায়ী নীরব মোদী ও তাঁর মামা তথা গীতাঞ্জলি জেমসের কর্ণধার মেহুল চোকসির।
কীভাবে শুরু হল প্রতারণা? Nirav Modi Mehul Choksi fraud
নীরব মোদী ও মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ব্যাঙ্কের কিছু অসৎ কর্মীর সঙ্গে মিলে মিথ্যা Letter of Undertaking (LoU) তৈরি করে বিপুল অঙ্কের অর্থ তুলে নেন। LoU হলো ব্যাঙ্কের তরফে এক ধরনের গ্যারান্টি, যা বিদেশি ব্যাঙ্ক শাখা থেকে ব্যবসায়িক ঋণ নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। সাধারণ গ্রাহকের জন্য এই সুবিধা নেই৷ এটি শুধুমাত্র আমদানি-রফতানি ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।
পিএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে নীরব মোদীর সংস্থাগুলির নামে জারি করা হয় ১,২১২টি LoU—যার মধ্যে মাত্র ৫৩টি ছিল প্রকৃত। বাকিগুলো ছিল জাল বা ভুয়ো। মুম্বইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখার তৎকালীন ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার গোকুলনাথ শেঠির নেতৃত্বে মূল কেলেঙ্কারির পরিকল্পনা হয়। ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় সফটওয়্যার বাইপাস করে, অভ্যন্তরীণ নিয়ম ভেঙে জারি করা হয় এই ভুয়ো গ্যারান্টিগুলি।
এই ভুয়ো LoU ব্যবহার করে নীরব মোদী ও চোকসির সংস্থাগুলি বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে ডলারে ঋণ তুলতেন। দাবি করা হত, এই অর্থ ব্যবহার করা হবে মুক্তো আমদানির জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই অর্থ বিদেশে পাচার করা হয় এবং একটি বৃহৎ ‘মানি লন্ডারিং’ চক্রের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে যায় বিভিন্ন কোম্পানি ও অ্যাকাউন্টে।
তদন্ত এবং মামলা Nirav Modi Mehul Choksi fraud
২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি RBI-কে প্রথম প্রতারণার রিপোর্ট পাঠায় PNB। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রিপোর্টে আরও বিস্তৃত তথ্য উঠে আসে। ১৩ ফেব্রুয়ারি CBI একটি FIR দায়ের করে নীরব মোদী গ্রুপ, গীতাঞ্জলি গ্রুপ ও চাঁদরি পেপার অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে। সমান্তরালভাবে, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED) শুরু করে তদন্ত মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে।
মেহুল চোকসির ভূমিকা Nirav Modi Mehul Choksi fraud
মেহুল চোকসি ও তাঁর কোম্পানি গীতাঞ্জলি জেমস এবং অন্যান্য সহযোগী সংস্থাগুলি এই জালিয়াতির অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র। ED-র অভিযোগ অনুযায়ী, চোকসি ও তাঁর সহযোগীরা বেআইনি ভাবে LoU সংগ্রহ করেন এবং ঋণের সীমা বাড়িয়ে নেন, ব্যাংকিং নিয়মকে তোয়াক্কা না করেই। CBI ও ED ইতিমধ্যেই তিনটি চার্জশিট দায়ের করেছে চোকসির বিরুদ্ধে, যেখানে তাঁকে ষড়যন্ত্র, অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পলায়ন, নাগরিকত্ব ও বিতর্ক Nirav Modi Mehul Choksi fraud
কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার ঠিক আগেই ভারত ছাড়েন নীরব মোদী ও মেহুল চোকসি। নীরব মোদী গা-ঢাকা দেন প্রথমে লন্ডনে, পরে গ্রেপ্তার হন ২০১৯ সালে। বর্তমানে তিনি ব্রিটেনে বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অন্যদিকে, চোকসি আশ্রয় নেন অ্যান্টিগা ও বারবুডায়, যেখানে তিনি নাগরিকত্ব পান একটি বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে।
২০২১ সালে ঘটে এক নাটকীয় মোড় নেয় এই ঘটনা৷ অ্যান্টিগা থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হন চোকসি, পরে তাঁকে পাওয়া যায় ডমিনিকায়। চোকসির দাবি, তাঁকে অপহরণ করে ডমিনিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যদিও ভারত সরকারের তরফে সেই দাবি নস্যাৎ করা হয়। এই ঘটনায় তাঁর প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে।
গ্রেপ্তারি ও প্রত্যর্পণ Nirav Modi Mehul Choksi fraud
চোকসির বিরুদ্ধে ভারতের করা প্রত্যর্পণ আবেদনের ভিত্তিতে তিনি সম্প্রতি বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হন। ভারত সরকারের আশা, এবার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।
India: India’s biggest banking fraud: PNB scam worth ₹13,500 crore. Nirav Modi and Mehul Choksi accused of issuing fake LoUs with insider help. Mumbai branch at the center of the controversy. Stay updated on this high-profile financial scandal and its legal proceedings.