Indus Waters Treaty Suspended
নয়াদিল্লি: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের সিন্ধু জলচুক্তি অবশেষে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত। ১৯৬০ সালের এই চুক্তি তিনটি যুদ্ধ, একাধিক উত্তেজনা ও সংকট পার করেও টিকে ছিল৷ তবে সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর ভারত এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে, যা তার অর্থনীতি, কৃষি এবং সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
সিন্ধু জলচুক্তির স্থগিতের পর কী বদলাবে?
সিন্ধু জলচুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে রবি, বেয়াস ও সুতলেজ নদীর ওপর সম্পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয়েছিল, আর পাকিস্তান পেয়েছিল সিন্ধু, ঝিলম ও চেনাব নদী। এই চুক্তি বন্ধ হওয়ার ফলে পাকিস্তান এখন কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হারাবে, যার প্রভাব তাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পড়বে:
কমিশনারদের বৈঠক স্থগিত – এই চুক্তির অধীনে প্রতি বছর ভারত ও পাকিস্তানের জল কমিশনারদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। চুক্তি স্থগিত হওয়ায় সেই বৈঠক আর হবে না, যা জলবন্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা বন্ধ করে দেবে।
তথ্য আদান-প্রদান বন্ধ – এক সময় ভারত নিয়মিতভাবে পাকিস্তানকে নদীর জলস্তর, বন্যা পূর্বাভাস, এবং জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের তথ্য প্রদান করত। এখন সেই তথ্যের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাকিস্তান বন্যা, খরা, এবং জল সংকটের পূর্বাভাস জানার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে।
নতুন প্রকল্পের তথ্য বন্ধ – সিন্ধু জলচুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন হাইড্রোইলেকট্রিক প্রকল্পের নকশা নিয়ে আলোচনা করতে হতো। এখন সেই বাধ্যবাধকতা আর নেই, যা ভারতের জন্য তার প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সুবিধা দেবে, তবে পাকিস্তানকে তা নিয়ে কোন সুযোগ থাকবে না।
পাকিস্তানের কমিশনারের ভ্রমণ নিষিদ্ধ – পাকিস্তানের সিন্ধু জল কমিশনার জম্মু ও কাশ্মীরের পরিদর্শন করতে পারবে না, যার ফলে তারা প্রকল্পের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা তাদের জল ব্যবস্থাপনার ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেবে।
বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ বন্ধ – চুক্তির আওতায় প্রতি বছর পার্মানেন্ট সিন্ধু কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করত, যা দুই দেশের মধ্যে জলব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরত। চুক্তি স্থগিত হওয়ার ফলে পাকিস্তান এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন আর পাবে না, যা তাদের কৃষি ব্যবস্থায় বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক প্রভাব Indus Waters Treaty Suspended
ভারতের এই পদক্ষেপ পাকিস্তানের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, কারণ দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ কৃষি নির্ভরশীল সিন্ধু নদী এবং তার শাখা নদীগুলির ওপর। এই নদীগুলির জল সরবরাহে কোনও ধরনের ব্যাঘাত পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করবে।
পাকিস্তান, যেটি বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে জল সংকট এবং কোল আমদানির ওপর অত্যন্ত নির্ভরশীল, সে দেশে এই চুক্তি স্থগিত হওয়ার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সমস্যার সৃষ্টি হবে। বর্তমানে পাকিস্তান প্রায় ১৯ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করে, যার খরচ ২০২১ সালে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার হয়ে যেতে পারে।
বিদ্যুৎ ও কৃষিখাতে চ্যালেঞ্জ
এছাড়া, পাকিস্তানের যে সমস্ত বড় প্রকল্প চলছে, সেগুলোর ওপরও খরচ বৃদ্ধি পাবে, কারণ তারা জল সরবরাহে নির্ভরশীল। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে তার বিদ্যুৎ খাত ও কৃষি উৎপাদনের জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র পাকিস্তানের কৃষি ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলবে না, এটি পাকিস্তানের সামগ্রিক অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই প্রদেশ, পাঞ্জাব এবং সিন্ধ, ইতিমধ্যে পানি সংকটে ভুগছে, যা এই নতুন সংকটের পর আরও ঘনীভূত হতে পারে।
এখন বিশ্বের সামনে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হলো। ভারতের কঠোর কূটনৈতিক পদক্ষেপ একদিকে যেমন পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে, তেমনি এই অঞ্চলের জলনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারে।
India: India suspends Indus Waters Treaty (1960) after Pahalgam attack. Pakistan faces challenges to economy & agriculture due to water information & meeting halt. Details on treaty suspension impacts.