আপনি কি উচ্চরক্তচাপের রোগী? ডায়াবেটিস আছে? ধূমপান করেন? মদও নিয়মিত না হলে চলে না? তাহলে এখনই সাবধান হোন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ক্রমাগত বাড়তে থাকা ব্রেন স্ট্রোকের জন্য এ সমস্ত কারণই সমান দায়ী। আর এই স্ট্রোক হওয়ার কোনও বয়সসীমা নেই। যে কোনও বয়সেই হতে পারে। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্তদের ২০শতাংশের বয়স ৪০ বছরের নিচে। ব্রেন স্ট্রোক সম্পর্কে সতর্ক করলেন নিউরো মেডিসিনের চিকিৎসকরা৷
ব্রেন স্ট্রোক বলতে কী বোঝায়?
হার্ট বা হৃদপিণ্ড সব সময় শরীরের সমস্ত কোষে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। এই রক্ত পৌঁছানোর কাজ করে বিভিন্ন ধমনি। কারও যদি রক্তচাপ বেশি থাকে কিংবা মাত্রাতিরিক্ত কোলেস্টেরল থাকে তাহলে তা ধমনির ভেতর জমে গিয়ে রক্ত চলাচলের পথ সরু বা একেবারে বন্ধ করে দিতে পারে। আর অক্সিজেন ঠিকমতো পৌঁছাতে না পারলে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত বা অকেজো হয়ে যেতে পারে। তখন রোগী সাময়িকভাবে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। শারীরিক এই সমস্যাকেই স্ট্রোক বলা হয়। একে আবার সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাটাক বা ব্রেন অ্যাটাক নামেও চিহ্নিত করা হয়। এই স্ট্রোকের আবার প্রকারভেদ আছে। মস্তিষ্কের ধমনিতে যদি কোনও ব্লাড ক্লট বা রক্তে জমাট বেধে যায় এবং স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে এই অবস্থাকে বলা হয় থ্রম্বোটিক স্ট্রোক। রক্তের ডেলা মস্তিষ্কের সূক্ষ্ম আর্টারিতে আটকে গেলে এম্বোলিক স্ট্রোক বা এম্বোলাস আর দুর্বল ধমনি যদি রক্তচাপ সামলাতে না পারে বা রক্তের ডেলা আটকে গিয়ে ধমনি ফেটে গিয়ে রক্তপাত শুরু হলে তাকে হেমারেজিক স্ট্রোক নামে চিহ্নিত করা হয়।
এই সমস্যা কাদের বেশি হওয়ার প্রবণতা থাকে?
বেশ কিছু কারণ দায়ী ব্রেন স্ট্রোকের জন্য। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ। অনেকেই হাইপ্রেশার আছে জানা সত্ত্বেও চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধ খান না। তাদের যুক্তি, এই ওষুধ একবার শুরু করলে আর বন্ধ করা যাবে না। ফলে ভেতরে ভেতরে রক্তচাপ বাড়তেই থাকে। আর এর ফলস্বরূপ ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তারা। এছাড়াও যে যে কারণে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে তা হলো, রক্তে অতিমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকা, ডায়াবেটিস, মেদবহুলতা, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া বা নাক ডাকার সমস্যা, ধূমপান, মদপান কিংবা কোকেনের নেশা, শরীরচর্চা না করা, হৃদরোগ। এছাড়া ৫৫ বছরের বেশি বয়স হলেও এর আশঙ্কা বেড়ে যায়।কিছুক্ষেত্রে ব্রেন-এর শিরা বা ধমনির জন্মগত বা গঠনগত ত্রুটির জন্যও এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ব্রেন স্ট্রোকের লক্ষণগুলো কী কী?
অজ্ঞান হয়ে যাওয়া তো আছেই। তবে অনেক সময় জ্ঞান থাকলেও স্ট্রোক হতে পারে। কাজেই যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে তা হলো —
- কথা জড়িয়ে যাওয়া। ফলে কথা বুঝতে অসুবিধা হয়।
- মনে একটা সংশয় দেখা দেওয়া।
- মুখ, জিভের কিছু অংশ, হাত, পা অবশ হয়ে যাওয়া। শরীরের একটা দিক অবশ হয়ে যাওয়ায় হাত, পা নাড়াতে না পারা।
- দুচোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা।
- কখনও আবার ডুয়াল ভিশন বা একটা জিনিসকে দুটো দেখার সমস্যা হয়।
- মাথা যন্ত্রণা। বমিভাব বা বমি হতে পারে।
দাঁড়িয়ে থাকার সময় এধরনের উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বসে পড়তে হবে। কাজেই স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আগে মনে করা হতো ছেলেদেরই সে সমস্যা বেশি হয়। যদিও মহিলাদেরও এই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার চান্স যথেষ্টই।
ব্রেন স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় কী?
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। হাই ব্লাডপ্রেশার থাকলে এর হার দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণও বেডে যেতে পারে। কাজেই অসুখ ধরা পড়লে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে এবং মনিটরিং করতে হবে প্রেশার ঠিক আছে কিনা জানার জন্য। এছাড়া নুন খাওয়া কমাতে হবে, খাওয়া চলবে না চিজ, বার্গার, আইসক্রিম, ধূমপান ছাড়তে হবে এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। ওজন কম রাখা। বাড়তি ওজন মানেই ব্লাডপ্রেশার, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি থাকা। আর এসবই ডেকে আনে ব্রেন স্ট্রোকের মতো দুর্ঘটনা। কাজেই ডায়েটিং করে, এক্সারসাইজ করে ওজন রাখতে হবে স্বাভাবিক।
ডায়াবেটিসের চিকিৎসা করানো। রক্তে সুগারের মাত্রা বেডে গেলে ব্লাডভেসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্ট্রোকের চান্স বাড়ে। ছাড়তে হবে ধূমপানের অভ্যাস। অনেকে আবার স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলেও গুরুত্ব দেন না। এতে সমস্যা জটিল হয়ে যায়। স্ট্রোক হওয়ার পর প্রতিটা মিনিটই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রতি মিনিটে রোগীর অবস্থা খারাপের দিতে এগোতে থাকে।