পিপিই বিতর্কে তোলপাড় দেশ, কিন্তু জানেন, কী এই পিপিই?

পিপিই বিতর্কে তোলপাড় দেশ, কিন্তু জানেন, কী এই পিপিই?

নয়াদিল্লি: করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারত সরকারের উদ্যোগ এবং পদক্ষেপ এই মুহুর্তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাররও নজর কেড়েছে। যথেষ্ট প্রসংশাও পেয়েছে। কিন্তু এমন অভিযোগও উঠেছে যে কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী মহামারী বলে ঘোষিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ হিসেবে ভারতের যে ধরণের প্রস্তুতির প্রয়োজন ছিল যথাযথভাবে তা গ্রহণ করতে পারেনি সরকার। এরমধ্যে প্রাথমিক এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হওয়া উচিত ছিল এই মারন ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব।  তেমন টেস্টিং কিট এবং নতুন এই মারণ রোগের মোকাবিলায় চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মনে করে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সংক্রমণ প্রায় ৩০ ভাগ কমিয়ে আনা যেতে পারে।

এই মুহূর্তে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই অভিযোগ আসছে যে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এই মারণ রোগের চিকিৎসার কাজে  নিযুক্ত চিকিৎসক, থেকে নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা উপযুক্ত সুরক্ষা ও চিকিৎসা সামগ্রী পাচ্ছেন না। এরমধ্যে চাহিদার শীর্ষে রয়েছে পিপিই কিট, যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের একাধিক রাজ্যে সোচ্চার চিকিৎসক এবং বিশেষত নার্সরা। আরও ভয়ঙ্কর অভিযোগ হল যে  অনেক হাসপাতালে এমন কিট দেওয়া হয়েছে যা অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে সরাসরি করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় নিযুক্ত কর্মীদের সংক্রমণের ঝুঁকি প্রবল। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে একজন রোগী চিকিৎসকদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হন। সুতরাং স্বভাবতই কৌতূহল জাগে কি এই পিপিই?

করোনা প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম এই পিপিই-র পুরো মানে হলো পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম।

কেন এবং কাদের জন্য এই পিপিই?

পিপিই মূলত তাঁরাই ব্যবহার করেন যারা ভয়ঙ্কর সংক্রামক কোনো রোগের চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত যেখানে সংক্রমণের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। এক্ষেত্রে শুধু যে তিনিই সংক্রমিত হবেন তা নয়, বরং তার মাধ্যমে আরো অনেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। এই পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টগুলি নানান ধরনের হয় – আর সেটা নির্ভর করে কী ধরণের কাজে তা ব্যবহার করা হচ্ছে, তার ওপর। সেক্ষেত্রে সংক্রামক রোগের চিকিৎসা করেন এমন চিকিৎসকদের জন্য পিপিই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এপর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে বহু স্বাস্থ্য কর্মীও রয়েছেন, যারা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি আক্রান্ত চিকিৎসকদের মৃত্যুর খবরও আছে।

পিপিই-কিটে কি কি থাকে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পর্যাপ্ত সুরক্ষার জন্য পিপিই-তে মূলত পাঁচটি উপকরণ রাখতেই হয়। সেগুলি হলো –

১. গাউন
২. গ্লাভস
৩. মুখের আবরণ (ফেস শিল্ড)
৪. চোখ ঢাকার জন্য মুখের সাথে লেগে থাকে এমন চশমা
৫. মাস্ক

এই উপকরণগুলি ব্যবহারেরসময়  ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে পিপিই পরতে এবং খুলতে হয়, কারণ ঠিক মাস্কের মতোই এই পোশাকের বাইরের দিকে ভাইরাস থাকতে পারে বা অনেক সময় পিপিই দূষিত হয়ে পড়তে পারে। পিপিই কিটের মধ্যে মুখের আবরণটি তখনই আবশ্যক, যখন ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায়। মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা এনএইচএস- এর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে যে করোনাভাইসের জন্য যে পিপিই তৈরি করা হচ্ছে সেটি যাতে অবশ্যই মুখ, নাক ও চোখ সুরক্ষিত রাখতে পারে। সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গাও রাখতে হবে।

মার্কিন সংস্থা এনএইচএস, পিপিই-তে নির্দিষ্ট করে চারটি উপকরণ রাখার কথা বলছে সেগুলি হল –
১. সার্জিকাল মাস্ক
২. পুরো শরীর ঢাকা থাকে এমন অ্যাপ্রোন
৩. গ্লাভস
৪. চোখ সুরক্ষাকারী চশমা
তবে সব ক্ষেত্রে নয়, বরং সরাসরি স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত থাকলে এইধরণের পিপিই প্রয়োজন বলে মনে করছে এনএইচএস।
তবে করোনা আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলে সেই চিকিৎসা কর্মীদের পুরো সেট প্রয়োজন নেই।
সেক্ষেত্রে সার্জিকাল মাস্ক এবং গ্লাভস হলেই হবে।

পিপিই তৈরীর উপকরণেও বিশেষত্ব আছে। এনএইচএস বলছে, পিপিই তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করতে হবে, যা ওয়াটার প্রুফ হবে অর্থাৎ জলীয় পদার্থ পড়লেও তা গড়িয়ে পড়ে যাব এই।  আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল,  পিপিই নিয়মিত পরিবর্তন করা এরকজন রোগীর একটি নির্দিষ্ট কাজের পরই পিপিই পরিবর্তন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত,দেশে যেখানে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যাপক ঘাটতি। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার উপকরণেও ঘাটতি দেশজুড়ে, সেখানে বিপুল পরিমাণে এই চিকিৎসা সামগ্রী রফতানি করা হচ্ছে ভিনদেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *