Aajbikel

পেটের সঙ্গে মনের যোগ! অনেকেই আক্রান্ত IBS রোগে, ধারণা নেই

 | 
belly ache

কলকাতা: রোগের কোনও শেষ নেই। কোভিড পরবর্তী সময়ে একাধিক অন্য রোগের কথা জানা গেলেও ছোট ছোট রোগ কিন্তু ফুরিয়ে যায়নি পৃথিবী থেকে। এমন অনেক রোগ আছে যার উপসর্গ আমরা খুব একটা পাত্তা দিই না কিন্তু পরে সেগুলিই বড় আকার ধারণ করে। আর পেট থেকে যে অনেক রোগের উৎপত্তি হয় সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। চিকিৎসকরা বলেন, পেট ব্যাথার উপসর্গের খেয়াল রাখলে অনেক রোগের বিরুদ্ধে আগে থেকেই লড়াই করা যায়। এখানেই একটা বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, পেটের অসুখের সঙ্গে মানসিক সমস্যার সম্পর্কও আছে। শুনতে অবাক লাগলেও এটা সত্যি। 

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলছে, মানসিক চাপের জন্য পেটের সমস্যা বাড়ে আবার পেটের রোগ থেকে মানসিক সমস্যাও বাঁধে। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে যে এমনটা কী ভাবে সম্ভব। তার উত্তরও আছে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয়, 'ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম' বা আইবিএস। অনেকের সঙ্গেই এমন হয় যে, কিছুতেই পেট সাফ হয়নি বলে মনে হয়। বারবার বাথরুম গেলে ভালো হয় বলে ধারণা আসে। কোষ্ঠকাঠিন্য নয়, তবে এই সমস্যা অহরহ বাড়ছে সাধারণের মধ্যে। বলাই বাহুল্য দিনের বেশির ভাগ সময় এমন মনে হলে বিরক্ত হতেই হয়। এই সমস্যাকেই বলা হচ্ছে আইবিএস। এই সমস্যার মূল কারণ, উপসর্গ সবকিছুই মানুষ হয়তো জানে, কিন্তু এতদিনে পাত্তা দেয়নি। 

আইবিএস কী

নাম শুনেই বোঝা যায়, পেটের একাধিক টুকরো সমস্যার সঙ্কলন হচ্ছে এই রোগ। কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়ার মতো কোনও রোগ নেই অথচ বারবার পেটে সমস্যা, কনকনে ভাব, ব্যথার কারণে বিরক্তি, এটাই মূলত এই রোগের পরিচয়। 

কেন হয় আইবিএস

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, আইবিএস কেন হয় তার পারতপক্ষে কোনও কারণ না থাকলেও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাত্রা, কম ঘুম, মানসিক চাপ থেকে এই রোগ হতে পারে। টানা বেশ কয়েকদিন কাজ বা অন্য কিছুর জন্য মানসিক চাপ থাকলেও এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। অর্থাৎ এই রোগের ক্ষেত্রে শরীরের চেয়ে মনের সমস্যা বেশি জড়িত।   

আইবিএস রোগের উপসর্গ

আদতে বড় কোনও উপসর্গ না থাকলেও গ্যাসের সমস্যা, বারবার বাথরুম যাওয়ার প্রবণতা, পেটের ব্যথায় অস্বস্তির মতো উপসর্গ লক্ষ্য করা হয়। এই রোগ আদতে বিপজ্জনক বা প্রাণঘাতী না হলেও জীবন অতিষ্ট করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কোনও কোনও সময়ে বাড়ি থেকে বেরনো দায় হয়ে যায়। 

রোগের প্রতিকার

দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, আইবিএস রোগের সেইভাবে কোনও প্রতিকার নেই। রোগী অনুযায়ী চিকিৎসা প্রয়োজন। এই রোগ নিয়ন্ত্রণে জীবনযাপন স্বাভাবিক করতে হবে। একেক সময়ে সাইকোথেরাপিতেও ভালো ফল মেলে। এছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা, ভাল খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মতো দিকগুলি মাথায় রাখতে হবে। ধূমপান, মদ্যপানও নিয়ম মেনে করা উচিত। তবে একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যারা রেড মিট বেশি খেয়ে শাক-সবজি কম খান, বেশি টেনশন করেন, তাদের এই রোগ বেশি হয়। তাই প্রচুর জলপান করতে হবে, শাক-সবজি, ফাইবার যুক্ত খাবার, ফল খেতে হবে।

নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অফ ক্লিনিক্যাল মেডিসিন বিভাগ এক গবেষণা করে এই রোগের সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক কার্যত প্রমাণ করেছে। সেই গবেষণায় বলা হয়েছে, মানুষের অন্ত্রে অন্তত ১৩২টি কমন জিনোম আছে যেগুলি আইবিএস-এর জন্য দায়ী আবার মানসিক রোগের জন্মও দেয়। ৫৩ হাজার ৪০০ জন আইবিএস রোগী এবং ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ২০১ জন সুস্থ মানুষের ওপর হয়েছে এই গবেষণা, তাতে প্রমাণিত একই জিন ভাণ্ডারের ইশারায় অন্ত্র, মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তিও কার্যকলাপ হয়। সাইটোকাইনস এবং কেমোকাইনস এই দুটি কমন রাসায়নিক যা অন্ত্র থেকে রক্তবাহিত হয়ে মস্তিষ্কে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং তাতেই বেশিরভাগ মানসিক রোগের জন্ম হয়। গবেষণা আরও বলছে, সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের ভারসাম্যের ভিন্নতার জন্য মানসিক রোগ হয়। চমকের ব্যাপার, এই ভারসাম্যহীনতা ৯০ শতাংশ হয় অন্ত্র, ১০ শতাংশ হয় মস্তিস্কে। 

এখন বিষয় হল, আইবিএস যে হয়েছে তা বোঝেই না অধিকাংশ সাধারণ মানুষ। পেটের গণ্ডগোল তো আখছার হচ্ছে, ঘরে ঘরে হচ্ছে। কিন্তু কোনটা সাধারণ গ্যাস আর কোনটা আইবিএস তা ধারণা করা যায় না। বেশিরভাগ সময়ে ডাক্তার না দেখিয়ে শুধু ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ খাওয়া হয় বলে রোগ সারে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ৪২ লক্ষ মানুষ আইবিএস-এর শিকার। কিন্তু সিকিভাগ মানুষ এর সম্পর্কে জানেন। এমনটাও আবার দেখা গিয়েছে, পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশি এই রোগ হয়, তবে ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে এই রোগের প্রকোপ কম।   
 

Around The Web

Trending News

You May like