কলকাতা: পুজোর পর করোনার গ্রাফ আবার উর্ধমূখী। এর মধ্যেই অনেকে আছেন, তাদের দুটো করে ভ্যাকসিন ডোজ হয়ে গিয়েছে।
দেশে এরই মধ্যে করোনার টিকা নিয়েছেন অনেকে। তাতে কি ভাইরাসটি প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়েছে শরীরে? রক্তে কি প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে? অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কোনো দরকার আছে কি না। এখন এমন বেশ কিছু প্রশ্ন ঘুরছে অনেকের মনে।
মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধশক্তির অংশ হচ্ছে অ্যান্টিবডি। এটি হল জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি। কেবল টিকা নেওয়ার পরই নয়, করোনা হওয়ার পরও শরীরে এই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অ্যান্টিবডি তৈরি হয় প্রোটিন দিয়ে। জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর আগে থেকে রক্তে অ্যান্টিবডি থাকলে তা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যদি অ্যান্টিবডি আগে থেকে শরীরে না থাকে, তাহলে করোনা সংক্রমণের পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। তবে তার জন্য অবশ্য একটা নির্দিষ্ট সময় লাগে।
এখানে মনে রাখা প্রয়োজন, কিছু রোগের ক্ষেত্রে শরীরে একবার অ্যান্টিবডি তৈরি হলে সারা জীবন তা সুরক্ষা দেবে। আবার কিছু সংক্রামক রোগে অ্যান্টিবডি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যায়। একটি নির্দিষ্ট সময় পর আবার একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
বিভিন্ন সমীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, করোনার ক্ষেত্রে মাত্র ৩৮ শতাংশ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফল ঠিকঠাক পাওয়া যায়। ব্রিটেনের ফুড এবং ড্রাগ কন্ট্রোল অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, অ্যান্টিবডির উপস্থিতির কারণে করোনার সংক্রমণ থেকে কতটা সুরক্ষা পাওয়া যাবে, তা এই পরীক্ষার মাধ্যমে স্থির করা যায় না। বলা যায়, অ্যান্টিবডি পজিটিভ আসার পরও যে কেউ করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন এবং উপসর্গহীন থাকতে পারেন। এতে নিজের অজান্তে এই রোগী অনেকের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুধু অ্যান্টিবডি থাকলেই সংক্রমণ মোকাবিলা করা যায় না। সামগ্রিক পুষ্টিমান, রোগ প্রতিরোধক্ষমতাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় মিলেই যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আবার ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়ার পর বা সংক্রমণের পর অ্যান্টিবডি ছাড়াও কোষভিত্তিক একধরনের প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যা অ্যান্টিবডির পরিমাপ দিয়ে বোঝা সম্ভব নয়। অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফলই শেষ কথা নয় বা এটি প্রয়োজনীয় কিছু নয়। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো ভ্যাকসিন ডোজ নেওয়া, মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, যতটা সম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলা।