ওয়াশিংটন:করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক সঙ্গে দোসর সোয়াইন ফ্লু। একের পর এক ভাইরাসের প্রকোপ এখন বিশ্ববাসীর ঘুম কেড়েছে। তবে এটা নিতান্তই কথার কথা। কর্মব্যস্ত জীবনে সারাদিনে একবার অন্তত বিছানায় গা এলিয়ে দুচোখের পাতা এক না করতে পারলে শুধু এই আতঙ্ক কেন কোনো আতঙ্কই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। অর্থাৎ ঘুম আমাদের জীবনের সেই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, যা কিছুক্ষনের জন্য হলেও আমাদের সমস্ত মানসিক এবং শারীরিক চাপ মুক্ত করে। শুধু তাই নয়, পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
আর বিগত কয়েক বছর ধরে অজানা ভাইরাসের প্রকোপ যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা প্রতিরোধে একমাত্র পর্যাপ্ত ঘুমের কথাই উল্লেখ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে সমস্ত রকম সংক্রমণ সে সাধারণ হোক বা ভাইরাস ঘটিত সব ক্ষেত্রেই শরীরের ভিতরের প্রতিরোধ ক্ষমতাই একমাত্র রক্ষাকবচ। যেমন এই মুহুর্তে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও এই প্রতিরোধ ক্ষমতাই একমাত্র উপায়। এপর্যন্ত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে করোনা ভাইরাসের শিকার হয়েছেন বেশিরভাগ মাঝবয়সী থেকে বৃদ্ধ বয়সীরা। স্বাভাবিক নিয়মেই বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে। তবে স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ যাদের ধূমপান বা আ্যালকোহল জাতীয় কোনোকিছুর আসক্তি নেই, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন, স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে থাকেন এবং অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস নিয়ে বলতে গিয়ে গবেষকরা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পর্যাপ্ত ও পরিমিত ঘুমকেই প্রাধান্য দিতে চেয়েছেন। এখানে ঘুম'কে ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন। ঘুম দাওয়াই বা স্লিপ এইডস আপনার ইমিউন সিস্টেম বা প্রতিরোধ ক্রিয়াকে পুনরুদ্ধার করে। কারণ ঘুমানোর সময় এই ইমিউন সিস্টেম থেকেই সাইটোকাইনস নামক একধরনের প্রোটিন নিঃসরণ হয়। সংক্রমণ বা প্রদাহ কমাতে এই প্রোটিন নিঃসরণ বাড়ানো দরকার। ঘুম না হলে এই প্রতিরক্ষামূলক সাইটোকাইনগুলির নিঃসরণ কমে যেতে পারে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে, সংক্রমণের সাথে লড়তে পারে সেই ধরনের অ্যান্টিবডি এবং কোষগুলি কমতে শুরু করে।
নিয়মিত ও পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন, অনিদ্রার চিকিৎসা সবমিলিয়ে ঘুমের গুরুত্ব ও এসম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে (বিশ্ব নিদ্রা দিবস) একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সচেতনতামূলক পদক্ষেপ। সুনিদ্রার প্রয়জনীয়তা তুলে ধরতে ২০০৮ সাল থেকে প্রতিবছর ১৩ মার্চ, বিশ্ব নিদ্রা দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় ওয়ার্ল্ড স্লিপ সোসাইটি।
মূলত গবেষক, স্বাস্থ্য পেশার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও রোগীদের মধ্যে একসাথে এই ধারণা থাকাটা প্রয়োজন যে স্বাস্থ্যের উপর ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব কতটা। তাই ২০২০-র বিশ্ব নিদ্রা দিবসের মূল ভাবনা হলো “ভালো ঘুম, ভালো জীবন,ভালো পৃথিবী”। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এমনকি আমাদের পৃথিবীর মত বৃহত্তর বিষয়ে জ্ঞানভিত্তিক উপলব্ধির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের ভিত হিসেবে ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে তুলে ধরতেই এই ভাবনা। বিস্তারিত অর্থে, জীবনের মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ঘুমের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
ওয়ার্ল্ড স্লিপ ডে কমিটির প্রধান ডঃ লিবারিও প্যারিনো বলছেন,পৃথিবীকে বাঁচাতে যদি কোনো অবদান রাখতে চান তাহলে সুবিবেচিত কর্মপ্রক্রিয়ার হিসেবে ঘুমের সময়সীমা বাড়ানো উচিত।
সবশেষে পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য বহু উপায়গুলির মধ্যে সহজ কয়েকটি উপায় বলেছে 'স্লিপ ফাউন্ডেশন' যা সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক-
তবে প্রথমেই বলে নেওয়া উচিত যে ১৮-৬৪ বছর বয়সীদের জন্য ৭ থেকে ৯ ঘন্টা পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। সেখানে এর থেকে বেশী বয়সীদের জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের সময় ৭ থেকে ৮ ঘন্টা।
-
শোওয়ার ঘর ঠান্ডা ও অন্ধকার হবে।
-
শোওয়ার ঘর শুধুমাত্র শোওয়ার জন্যই ব্যবহার করতে হবে।
-
শোওয়ার আগে চা বা কফি জাতীয় পানীয় খাওয়া যাবেনা।
-
ঘুমের অন্তত একঘন্টা আগে থেকে প্রস্তুতি হিসেবে টিভি বা মোবাইল স্ক্রিন থেকে দূরে থাকতে হবে।
-
টিভি চালিয়ে রেখে ঘুমোনো যাবেনা।
-
সময় মতো ঘুমোনো এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করতে হবে। অর্থাৎ ঘুমের জন্য রুটিন মেনে চলতে হবে।