কলকাতা: চিকিৎসকরা বলেন, প্রতি মিনিটে যদি ১২ থেকে ১৫ বারের কম চোখের পাতা পড়ে তাহলে তা চোখের জন্য ভালো নয়। এর ফলে চোখ শুকিয়ে যায়। দূরের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই রোগের নাম মায়োপিয়া। দিনের পর দিন বাড়িতে বসে অনলাইনে পড়াশোনা করে অধিকাংশ পড়ুয়া এখন এই রোগের শিকার। বিশেষ করে বেসরকারি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চোখে দানা বেঁধেছে এই অসুখ।
কলকাতার রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজিতে এই সমস্যা নিয়ে বহু স্কুলপড়ুয়া আসছে। এছাড়া অন্যান্য সরকারি বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চোখের সমস্যা নিয়ে স্কুল পড়ুয়ারা দেখাতে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তরে তরফে জানানো হয়েছে যে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণীর পড়ুয়াদের মধ্যেই এই প্রবণতা বেশি। এই বয়সের পড়ুয়ারাই এই অসুখে বেশি ভুগছে বলে জানিয়েছে দপ্তর। তবে তাদের অসুখ মায়োপিয়া নয়। সিউডো মায়োপিয়া। কিন্তু কেন বাড়ছে এই সিউডো মায়োপিয়া?
এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথালমোলজির অধ্যাপক চিকিৎসক অসীম কুমার ঘোষ। তিনি জানিয়েছেন করোনা পরিস্থিতিতে পড়ুয়ারা ঘরবন্দি। ট্যাব, ল্যাপটপ এবং স্মার্ট ফোনের সাহায্যে চলছে পড়াশোনা। তাই পড়াশোনার খাতিরেই তাদের এই সমস্ত গ্যাজেটের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘক্ষণ। ফলে চোখের পাতা অনেকক্ষণ যাবৎ পড়ছে না। তাই চোখের পেশি গুলি সংকুচিত হয়ে কাছের জিনিসে দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখছে। এমন ক্ষেত্রে দূরের জিনিস দেখার ক্ষেত্রে ঝাপসা দৃষ্টি তৈরি হয়। চোখ লাল হচ্ছে ও ব্যথা হতে থাকছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মালদহ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন যে বেসরকারি স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যেই সমস্যা বেশি করে দেখা দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে দুটি ক্লাসের মধ্যে সময়ের ব্যবধান অত্যন্ত কম। চোখ বিশ্রাম পাচ্ছে না। ক্রমে এই সমস্যা এতটাই জোরদার হয়ে উঠেছে যে ইতিমধ্যেই কিছু কিছু পড়ুয়াকে মাইনাস পাওয়ারের চশমা নিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই এই সমস্যা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার উপায়ও তাঁরা বাতলে দিয়েছেন।
এক্ষেত্রে আধ ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে চোখকে বিশ্রাম দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এছাড়া দুইটি ক্লাসের মাঝখানে যতটা সম্ভব চোখের জলের ঝাপটা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এও বলেছেন যে একটা ক্লাসের পর অন্তত কুড়ি মিনিট যদি চোখকে বিশ্রাম দেওয়া যায় তবে সমস্যা অনেকটাই কমে।