কলকাতা: করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকেই বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন সাবান দিয়ে ধুয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখতে। করোনার মতো ভাইরাসকে মারতে এই দুটোই মোক্ষম অস্ত্র। কিন্তু সাবান না স্যানিটাইজার? করোনা তাড়াতে কোনটা বেশি কার্যকর? এই প্রশ্নটি বোধহয় সবার। বাজারে স্যানিটাইজারের চাহিদা বেশি। সাবান তেমন কেউ ব্যবহার করে না।
তবে চিকিসকরা কিন্তু সাবানকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁদের মত, করোনা ঠেকাতে স্যানিটাইজারের তুলনায় সাবান কিন্তু বেশি কার্যকর। এর কারণও বলেছেন চিকিৎসকরা। করোনা মূলত তিনটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এই ভাইরাসের বাইরের অংশে রয়েছে গ্লাইকোপ্রোটিনের কাঁটা। এর সাহায্যে ভাইরাস কোষে আটকে যায় ও তাকে সংক্রামিত করে। এছাড়া ভাইরাসে রয়েছে রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড বা আরএনএ। কোনও কোষে ভাইরাসটি ঢোকার পর সেটি আরএনএর প্রতিলিপি গঠন করে। তৃতীয় উপাদানটি একটি লিপিড স্তর। এটি ভাইরাসের অন্যান্য অংশকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এই লিপিড স্তরটি ভাঙতে পারলে তবেই ভাইরাসটিকে মারা সম্ভব।
সাবানের আণবিক গঠন অনুযায়ী এর দুটো অংশ। হাইড্রোফিলিক ও হাইড্রোফোবিক। হাইড্রোফিলিকের জলের অণুর প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। অন্যদিকে হাইড্রোফোবিকের জলের অণুর প্রতি একেবারেই আসক্তি নেই। সাবান দিয়ে হাত ধুলে সাবানের হাইড্রোফোবিক অংশ জলের সঙ্গে মিশে ভাইরাসের লিপিড স্তরের প্রতি আকর্ষিত হয়। এদিকে জলের অণু প্রতি হাইড্রোফিলিক অংশের আকর্ষণ থাকে। এই টানাপোড়েনের মধ্যে ভাইরাসের লিপিড স্তর ভেঙে যায়। ফলে ভাইরাসটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবায় নিযুক্ত ডাক্তার বা নার্সের পক্ষে বারবার সাবানজল দিয়ে হাত ধোয়া সম্ভব হয় না। তাই তাদের ক্ষেত্রে স্যানিটাইজারের ব্যবহার সুবিধাজনক।
স্যানিটাইজারের মূল উপাদান হল অ্যালকোহল। ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই অ্যালকোহল করোনা ভাইরাসের লিপিড স্তর ভেঙে ফেলতে সক্ষম। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়েছে। সাবানের মতো ভাইরাসের লিপিড স্তর ভাঙতে অ্যালকোহল ততটা সক্ষম নয়। ফলে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করতে স্যানিটাইজার অনেকটাই বেশি সময় নেয়। তাই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের থেকে সাবান করোনা ভাইরাসকে নষ্ট করতে বেশি কার্যকর। একান্তই যদি সাবান ব্যবহার করার সুযোগ না পাওয়া যায়, তখনই স্যানিটাইজার ব্যবহার করা উচিত।