করোনা চিকিৎসায় কার্যকরী ফল দিচ্ছে মানসিক রোগে ব্যবহৃত ওষুধ

গবেষণায় দেখা গেছে যে 'এবেসেলেন' ওষুধটি অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ, ব্যাকটিরিয়াঘটিত এবং কোষ প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি রাসায়নিক যৌগ যা 'এমপ্রো'র বিরুদ্ধে নিশ্চিত অস্ত্র হিসেবে কাজ করে।

 নয়াদিল্লি: করোনা প্রতিরোধক প্রতিষেধকের পাশাপাশি এই রোগের একটি কার্যকরী ওষুধের খোঁজও চালিয়ে যাচ্ছেন গবেষকরা। নতুন ওষুধের সঙ্গে এমন কিছু কার্যকরী ওষুধেরও সন্ধান পাওয়া গেছে যা অন্যান্য রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে বহু আগে থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। ম্যালেরিয়া, এইডস,ক্যান্সারের ওষুধের পর করোনা চিকিৎসায় এমনই আরো এক ওষুধের সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা পেয়েছেন গবেষকেরা যা  বাইপোলার ডিসঅর্ডার বা মানসিক সমস্যা এবং শ্রবণশক্তি হ্রাস সহ একাধিক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ওষুধটির নাম 'এবেসেলেন'। এই ওষুধটি নোভেল করোনাভাইরাসকে হোস্ট কোষে রূপান্তরিত হওয়া থেকে বাধা দিতে সক্ষম।

সায়েন্স অ্যাডভান্সেস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় অণু প্রধান সুরক্ষা, 'এমপ্রো' নামে একটি এনজাইম বা উৎসেচকের মূল্যায়ন করা হয়েছে যা একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম এবং এই করোনো ভাইরাসের জীবনচক্রের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে 'এবেসেলেন' ওষুধটি অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি-অক্সিডেটিভ, ব্যাকটিরিয়াঘটিত এবং কোষ প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্যযুক্ত একটি রাসায়নিক যৌগ যা 'এমপ্রো'র বিরুদ্ধে নিশ্চিত অস্ত্র হিসেবে কাজ করে।

গবেষকরা এমনটাও জানিয়েছেন যে বেশ কয়েকটি ক্লিনিকাল ট্রায়ালের পর ওষুধটি মানুষের ব্যবহারের জন্য সুরক্ষিত বলেই প্রমাণিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সহ একাধিক গবেষকদের মতে এই 'এমপ্রো' এনজাইমটি ভাইরাসের জিনগত উপাদানগুলি – আরএনএ – থেকে সহজেই প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং হোস্ট কোষের মধ্যে ভাইরাস প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম করে।

জৈবিক অণুগুলির গঠনে এই বিশেষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা অনুসারে বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ব্যবহারের জন্য হাজার হাজার বিদ্যমান যৌগিক নিয়ে একের পর এক পরীক্ষা করে দেখেছেন। গবেষণাটি র সহ লেখক শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জুয়ান ডি পাবলোর মতে “গবেষনায় বিবেচিত যৌগে বিপুল সংখ্যক যৌগের উপস্থিতির ফলে, সেই পরিমাপগুলি অবশ্যই অবিচ্ছিন্নভাবে সরলীকরণের প্রয়োজন আছে  এবং তারপরে পরীক্ষা ও আরও ভালোভাবে গণনা করে ফলাফলগুলি মূল্যায়ন করতে হবে। 

গবেষণায়, ডি পাবলো এবং তার দল এনজাইম এবং ড্রাগের বিশদ গঠন তৈরি করেছিলেন এবং  কম্পিউটারে জটিল ও অত্যাধুনিক পদ্ধতির সাহায্যে তারা আবিষ্কার করেছিলেন যে এবেসেলেন দুটি ভিন্ন উপায়ে এমপ্রোর ক্রিয়াকলাপ হ্রাস করতে সক্ষম। “এনজাইমের অনুঘটক এর স্থানটি আটকে দেওয়ার পাশাপাশি, 'এবেসেলেন' এই স্থানের আশেপাশে অনেকটা অংশ জুরে শক্তিশালী সুরক্ষা বলয় তৈরি করে যা এনজাইমের অনুঘটক ক্রিয়াকলাপকে প্রভাবিত করে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে হয় যেখানে একটি বড় অণুর এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে তথ্য সরবরাহ করা হয়। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি পুনর্বিবেচিত ওষুধ হিসাবে এবেসেলেন-এর সম্ভাব্য কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করছে এবং ভাইরাসটির ক্ষেত্রে একটি নতুন দুর্বলতা প্রকাশ্যে আনছে যা আগে জানা ছিল না এবং এটি কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে কার্যকর হতে পারে। 'এবেসেলন' ওষুধটিকে কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে চিকিৎসার বড়সড় সমাধান বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ওষুধটিকে করোনা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সার্বজনীন ভাবে এখনই ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মূল্যায়ন বাকি আছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও ইতিমধ্যেই সংক্ষিপ্ত আকারে ট্রায়াল শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

15 − 7 =