অতিমারীতে প্রভাবিত শিশুদের হাড়ের স্বাস্থ্য, কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা?

অতিমারীতে প্রভাবিত শিশুদের হাড়ের স্বাস্থ্য, কী পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা?

নয়াদিল্লি: করোনার দাপটে তাল কেটেছে জীবনের চেনা ছন্দে৷ অতিমারী বদলে দিয়েছে আমাদের জীবনধারাকে৷ প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্যের উপর৷ বাদ যায়নি শিশুরাও৷ ছোট বয়সেই তারা ভুগতে শুরু করেছে হাঁটু কিংবা কোমরের যন্ত্রনায়৷ 

আরও পড়ুন- সাধারণ সর্দি-জ্বর আর কোভিডের তফাৎ কী? জানুন ওমিক্রন আবহে

আসলে এই সমস্যাটা আগেও ছিল৷ শিশুরা মাঠ ছেড়ে অনেক বেশি সময় কাটাতে শুরু করেছিল মোবাইলে৷ যার প্রভাব পড়েছিল শিশুদের স্বাস্থ্যের উপরে৷ কিন্তু সেই সমস্যাকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে করোনা অতিমারী৷ যা বাড়ির চার দেওয়ালে বন্দি থাকা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা রাখেনি শিশুদের কাছে৷ আর এর প্রভাব শুধু তাদের স্বাস্থ্যের উপরেই নয়, প্রভাব ফেলেছে মানসিক বিকাশ এবং সামাজিক দক্ষতার উপরেও৷ 

ডাঃ হর্ষিতা সুরঞ্জ, ডিরেক্টর, ইন্টারভেনশনাল পেইন অ্যান্ড স্পাইন সেন্টার (আইপিএসসি) এবং ডাঃ সুনীল শেরাওয়াত, সিনিয়র কনসালটেন্ট, আইপিএসসি ইন্ডিয়া, স্পোর্টস ইনজুরি, আর্থোস্কোপি এবং জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট স্পেশালিস্ট জানালেন, ‘‘খুদেরা নিয়মিত পায়ের ব্যথা বা কব্জির ব্যথা নিয়ে আসছে। করোনা অতিমারী তরুণ প্রজন্মের হাড়ের স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে৷ ভবিষ্যতে তাদের জয়েন্ট পেইন বা ফ্র্যাকচারের ঝুঁকিও বাড়তে পারে। তবে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম দ্বারা এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’’

কোচির অমৃতা হাসপাতালের  অধ্যাপক এবং প্রধান  জেনারেল পেডিয়াট্রিক্স ডাঃ সি. জয়কুমারের কথায়, ‘‘কোভিড-১৯ অতিমারী বিশ্বজুড়ে সমস্ত শিশুর হাড়ের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করেছে। এখন বাড়ির বাইরে পার্কে বা খোলা জায়গায় খেলার কোনও উপায়ই নেই ছোটদের কাছে৷ বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যেই আটকে গিয়েছে তাদের জীবন৷ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে স্কুলগুলিও৷

বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে বাবা-মায়েরা যেন তাঁদের বাচ্চাদের হাড়ের স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখেন৷ বাচ্চারা যেন অবশ্যই ১৫-২০ মিনিট বাইরে শরীরচর্চা করে৷ বাইরে বলতে বাড়ির বারান্দা, বাগানে বা ছাদে শরীরচর্চা করা যেতে পারে৷ এর পাশাপাশি শিশুদের দিন ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার৷ বাবা-মায়েদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হল-তাঁরা যেন তাঁদের সন্তানদের সক্রিয় থাকতে উৎসাহিত করেন৷ কঠিন সময়ের মধ্যেও নিয়মিত শরীর চর্চা করলে ভবিষ্যতে অতিরিক্ত সমস্যায় ভুগতে হবে না৷  

গ্লোবাল হসপিটালস-এর সিনিয়র কনসালটেন্ট, অর্থোপেডিকস এবং জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট ডাঃ শ্রীধর আর্চিক  জীবনধারার কিছু পরিবর্তন শেয়ার করেছেন৷ যা ছোটদের হাড়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে৷ 

নিয়মিত ব্যায়াম করা: হাড়ের শক্তিবৃদ্ধিতে ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে৷ এটি পেশী শক্তি এবং জয়েন্টের নমনীয়তা বজায় রাখতেও সাহায্য করে৷ এছাড়াও  সাঁতার একটি চমৎকার অনুশীলন৷

ঠাণ্ডা বা গরম প্রয়োগ করা: স্টিফনেস  ইডিওপ্যাথিক আর্থারাইটিসে অনেক শিশু আক্রান্ত হয়ে থাকে৷ বিশেষ করে সকাল বেলায় এ সমস্যা দেখা দেয়। কিছু শিশু ঠান্ডায় ভালো সাড়া দেয়৷ কিন্তু, বেশিরভাগ শিশুই উষ্ণতা পছন্দ করে, যেমন হট প্যাক বা গরম স্নান বা সওয়ার৷ বিশেষ করে সকালে। 

সময়মতো খাওয়া-দাওয়া করা এবং ভালো খাওয়া: আর্থারাইটিসে আক্রান্ত কিছু শিশুর খিদে কম থাকে। ওষুধ বা শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে বাচ্চাদের অতিরিক্ত ওজন বাড়তে পারে৷  স্বাস্থ্যকর খাদ্য শরীরের উপযুক্ত ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে৷

হাঁটুর পাশাপাশি সম্প্রতি কব্জির ব্যাথাতেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন৷ প্রাপ্ত বয়স্ক বা কিশোর-কিশোরী, যারা ল্যাপটপ বা ডেস্কটপে বসে কাজ করেন তাঁরা হাতের যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে এই অভ্যাসগুলি ত্যাগ করুন-

•    দীর্ঘ সময় ধরে মাউসের ব্যবহার
•     দীর্ঘ সময় ধরে কব্জি পিছনে বা সামনে বাঁকানো (সম্প্রসারিত)
•    দীর্ঘ সময় শক্ত টেবিলের উপর কব্জি বা হাতের তালু রাখা 
•    কী বোর্ড এবং মাউসের পজিশন ঠিক না থাকা৷ 

 

ক্রমাগত টাইপ করার জেরে  ট্রিগার ফিঙ্গারের সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ যাকে চলতি ভাষায় আঙুল আটকে যাওয়া হবে৷ এটি সাধারণত বৃদ্ধাঙ্গুল এবং তর্জনীতে দেখা যায়। প্রথম দিকে শুধু ব্যথা থাকে৷ তবে পরবর্তী সময়ে আঙুল সোজা করতে বা আঙুল লক করতে অসুবিধা হতে পারে।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *