Aajbikel

অ্যাটাক হতে সাবধান! হৃদয় সম্পর্কে কিছু তথ্য জানা জরুরি

 | 
হার্ট অ্যাটাক

কলকাতা: 'তোমায় হৃদমাঝারে রাখব, ছেড়ে দেবো না...' কিন্তু হৃদয়ে যদি সমস্যার সূত্রপাত হয় তাহলে ছেড়ে যে দিতেই হবে। কারণ চিকিৎসা আগে দরকার। হার্ট অ্যাটাক নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। কেউ বিষয়টিকে ভীষণভাবেই ভয় পান। হৃদরোগ হলে চিকিৎসকের কাছে আগে যাওয়া ভালো নাকি সরাসরি হাসপাতাল, এ নিয়েও প্রশ্নের শেষ নেই। তবে মূল বিষয় হল, সবার আগে জেনে নেওয়া উচিত যে হার্ট অ্যাটাক কী, কেন হচ্ছে। তাহলেই অনেকটা মুশকিল আসান হয়ে যেতে পারে। 

হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা আজকের নয়। কিন্তু কোভিড পরবর্তী সময়ে এই সমস্যা যেন আগের থেকে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে বলে মনে করেন বহু মানুষ। সবথেকে বড় কথা, কম বয়সীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বিগত কিছু সময়ে বেশি ঘটায় আতঙ্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে জেনে রাখা দরকার যে হার্টের সমস্যা কী, কেন হয় এবং এর থেকে কী ভাবে প্রতিকার পাওয়া যায়। একই সঙ্গে, হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ কী, এটাও জানা ভীষণরকম গুরুত্বপূর্ণ। নাহলে আজকাল অনেকে বুকের ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা ভেবে গুলিয়ে ফেলছেন। তাই চিকিৎসাতেও অনেকটা দেরী হয়ে যাচ্ছে। 

হার্ট অ্যাটাক কী? 

সহজ ভাষায় বলতে হার্টে কোনও ব্লকেজ সৃষ্ট হলে যদি রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। এবার বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, হার্ট সারা শরীরজুড়ে রক্ত সরবরাহ করে। একই সঙ্গে সে নিজের ধমনীর মাধ্যমেও নিজেকে রক্তের মাধ্যমে সচল রাখে। এর কারণে হার্ট সর্বক্ষণ পাম্প হতে থাকে যাতে রক্ত সঞ্চালন ঠিক হয়। কোনও ব্লকেজ বা পেশির ক্ষতি হলে যদি এই সঞ্চালনে বাধা আসে তবে হার্ট বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এটাই হার্ট অ্যাটাক। 

ব্লকেজ হয় কী ভাবে?

সাধারণভাবে দেখতে গেলে অস্বাস্থ্যকর খাওয়া-দাওয়ার জন্য হৃদ-ধমনীতে মেদ জমে ব্লকেজ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া যাদের কোলেস্টেরল বেশি তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া লো ডেনসিটি লাইপ্রোপ্রোটিন এবং ট্রাই গ্লিসারাইডও ফ্যাক্টর করে যায় ব্লকেজের জন্য। 

হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ 

খুবই সাধারণ এবং ভুল ধারণা আছে যে, বুকে ব্যথা মানেই হার্ট অ্যাটাক। কিন্তু সেটা একদমই নয়। আবার বুকে ব্যথা হচ্ছে মানে গ্যাস বা পেটের কোনও সমস্যা হয়েছে, এটা ভাবাও ভুল। তাহলে কী করতে হবে? আসলে কিছু উপসর্গ আছে যেটা একটু খেয়াল রাখতে হবে বুকে ব্যথা হলে। যেমন হার্ট অ্যাটাকের কমন উপসর্গ, বুকের ওপর দিকে বাঁ দিক ঘেঁষে ব্যথা হওয়া এবং ধীরে ধীরে তা অস্বাভাবিক চাপ বাড়ানো। অনেক সময় এই ব্যথা পিঠের দিকে কাঁধ হয়ে বাঁ হাতে ছড়াতে পারে, তার সঙ্গে ঘাড়ে এবং চোয়ালেও যন্ত্রণা হতে পারে। শ্বাসকষ্টও হয় এমন সময়। এছাড়া অতিরিক্ত বা আচমকা ঘাম হতে পারে।

চিকিৎসকদের স্পষ্ট পরামর্শ, এমন কোনও উপসর্গ পরিলক্ষিত হলেই আগে হাসপাতালে চলে যাওয়া। কারণ এক্ষেত্রে যদি দেরি হবে, রোগীর জন্য ঝুঁকি আরও বেশি বাড়বে। তবে বুথে ব্যথা নিয়ে কোনও প্রকার সন্দেহ হলে ইসিজি করেই নেওয়া ভালো বলে মত তাঁদের। মূলত এর মাধ্যমেই হার্টের অসুখ ধরা পড়ে। ট্রোপোনিন টি-কিট টেস্ট খুব চালু পরীক্ষা। হার্ট ভালো রাখতে ব্লকেজ যাতে না হয় তার জন্য যাবতীয় নিয়ম মেনে চলাই শ্রেয়। কিন্তু এটাও ভুল ধারনা যে, ১ শতাংশ ক্লট কমালে নিশ্চিন্তে থাকা যাবে। 

গবেষকদের একটা বড় অংশের মত, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খেয়ে হার্টের ক্লট ১ শতাংশ কমানো গেলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা ২৫ শতাংশ কমানো যায়। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, হার্ট অ্যাটাক থেকে পুরো মুক্তি। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামান্য ক্লট কমিয়ে যে হার্ট অ্যাটাকের মাত্রা কমানো যায় এটা যুগান্তকারী গবেষণা। তবে হৃদকোষের পেশি মেরামতির দিকেও নজর দিতে হবে। এখন অবশ্য এর জন্য প্রোটিন আবিষ্কার করা হয়েছে, যার ফলে আগামী দিনে ওষুধ তৈরি হবে। ইজরায়েলের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হার্ট অ্যাটাকের পর হৃদপেশির কোষ মেরামতির জন্য শরীর নিজেই ইআরবিবি-২ নামের প্রোটিন তৈরি করে, তবে তা ক্ষণস্থায়ী। আগামী দিনে ওষুধ দিয়ে এই প্রোটিন তৈরির প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী করা গেলে হার্ট অ্যাটাকে বহু মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে। 

Around The Web

Trending News

You May like