কলকাতা: জিকা ভাইরাসের পর এবার অ্যাডিনো ভাইরাসের কবলে শহর কলকাতা৷ সমীক্ষা বলছে, গত দু’মাসে প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে৷ বর্তমানে পার্কসার্কাসের এক হাসপাতালে এই ভাইরাসে আক্রান্ত ১২ জন শিশু চিকিত্সাধীন রয়েছে বলে খবর৷ কিন্তু সরকারিভাবে এখনও কোনও ঘোষণা করা হয়নি।
চিকিৎসকদের মতে, এই ভাইরাসে মূলত শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে। উপসর্গ সর্দি-কাশি-জ্বর। ২-৩ সপ্তাহ থেকে কখনও কখনও ৩০-৩৫ দিন পর্যন্ত থাকছে এই জ্বর। এছাড়া চোখ লাল থাকছে। অনেকে দেখে ভাবছেন কনজাংটিভাইটিস হয়েছে। ফলে কী অসুখ, সেটা বুঝতে দেরি হচ্ছে। এই ভাইরাসে মূলত আক্রান্ত হয় ফুসফুস। ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। অ্যাডিনো ভাইরাসে বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ কি? পার্কসার্কাসের ওই হাসপাতালের চিকিত্সক প্রভাস প্রসূন গিরি জানান, “প্রথমে স্বাভাবিক সর্দি,কাশি, জ্বর হয়। তার পরে ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।” তাহলে সতর্ক থাকার উপায় কি? চিকিত্সক বলেন, “এই ভাইরাসে যে আক্রান্ত হয়েছে, তার থেকে অন্যদের দূরে রাখতে হবে৷”
চিকিত্সকরা জানান, এই ভাইরাস ছোঁয়াচে তাই প্রতিরোধ খুব কঠিন। ছোটো থেকে বড়, যে কোনও বয়সের মানুষই এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন৷ ছোটরা যেহেতু এদিক ওদিক হাত দেয়, তাই তারা বেশি আক্রান্ত হয়। পাশাপাশিভাবে ছোটো এবং বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই কম। সেই কারণেই ছোটো এবং বয়স্করা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তা ভয়াবহতার রূপ নেয়৷
পরজীবী ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দী বলেন, ” কলকাতায় এখন এই রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতি হয়েছে। তাই এই ভাইরাসের সংক্রমণ বেশি ধরা পড়ছে। তা নাহলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রত্যেক বছরেই হয়।” চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন বাতাসে থাকে এই ভাইরাস। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে যাচ্ছে। ফলে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, নিউমোনিয়া হচ্ছে, ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে। ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণও ঘটছে। একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে।
পার্কসার্কাসের বেসরকারি ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, ”গত বছরের শেষের দিক থেকে এই রোগ নির্ণয় শুরু হয়েছে। গত বছর এইরোগের দাপট এতটা ভয়াবহ ছিল না। রোগ প্রতিরোধের কোনও উপায় এখনও পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। তাই ওষুধও নেই। রোগ নির্ণয় হলে অক্সিজেন, নেবুলাইজার ও প্রয়োজনে ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে।”