ঘরে ঘরে জ্বরের উপদ্রব, এখন কী করণীয়? বর্জন করবেন কোন অভ্যাস?

কলকাতা: এ এক আজব আবহাওয়া৷ বৃষ্টি হচ্ছে বটে, তবে তাতে বিস্তর ঘাটতি৷ এদিকে জল জমলেই ঝড়ের গতিতে বাড়ছে মাশার বংশ৷ বাড়ছে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ৷ ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার আক্রমণে কাবু বঙ্গবাসী৷ ঘরে ঘরে জ্বর-ফ্লু৷ এক জন আক্রান্ত হলেই, বাকিদের রেহাই নেই৷ কিন্তু, এই জ্বর আদতে কী কারণে হল, নেপথ্যে কোন জীবাণু, তা বুঝতে গিয়ে নাজেহাল হচ্ছেন চিকিৎসকরাও৷ বিভিন্ন জ্বরের উপসর্গগুলির রূপ বদলে চিন্তায় পড়েছেন ডাক্তারবাবুরাও৷ তাই তাঁদের পরামর্শ, জ্বর এলে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনও ওষুধ খেয়ে বিপদ না বাড়ানোই ভাল৷ জ্বর না নামলে জলপট্টি, মাথা ধোওয়া, গা মোছানোর মতো চিরাচরিত পন্থা নেওয়া যেতেই পারে৷ এতেও কাজ না হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরমার্শ নিন৷ জ্বর যে কারণেই হোক না কেন, তাপমাত্রা বাড়লেই প্রচুর পরিমাণে জল (প্রয়োজনে ওআরএস) খাওয়ার পাশাপাশি বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শও দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷
এখন দেখা যাক ফ্লুয়ের বৈশিষ্টগুলি কী কী?
• ফ্লু হলে জ্বর-সর্দি-কাশি তো থাকছেই৷ পাশাপাশি পেশিতে ব্যথা, মাথা ব্যথা ও ভারী ভাব দেখা দিচ্ছে৷
• এছাড়াও গলা খুসখুস, নাক বন্ধ, নাক দিয়ে কাঁচা জল, চোখ জ্বালা, স্বাদহীনতার মতো সমস্যাগুলিও মাথাচারা দিচ্ছে৷
• জ্বরের স্থায়িত্ব বাড়ছে৷ তাপমাত্রা খুব ধীরে ধীরে নামছে৷
• ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠে যাচ্ছে৷ প্যারাসিটামল খেয়েও ৯৯-এর নীচে জ্বর নামছে না৷
ডেঙ্গির উপসর্গ-
• তিন থেকে পাঁচ দিন ধূম জ্বর৷ শরীরের তাপমাত্রা চট করে নামতে চায় না৷
• মাথা ও অক্ষিগোলক সহ গোটা শরীরে ব্যথা অনুভূত হওয়া৷
• দুর্বলতার পাশাপাশি ত্বরে ব়্যাশ, বমি ও ডায়েরিয়া৷
• সাধারণত ডেঙ্গিতে সর্দি-কাশি ও হাঁচি থাকে না৷
• হেমারেজিক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে মাড়ি ও নাক থেকে রক্তপাতের পাশাপাশি বমি, প্রস্রাব ও মলের সঙ্গেও রক্তপাত হতে পারে৷
• জ্বর আসার পাঁচ দিন পর্যন্ত এনএস-১ এলাইজা টেস্ট এবং পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলে আইজিএম পরীক্ষা করালে ডেঙ্গি ধরা পড়বে৷
চিকুনগুনিয়ার থাবা-
• এক্ষেত্রে দুই থেকে পাঁচ দিন থাকে জ্বর৷ সঙ্গে দুর্বলতা, গা বমি ভাব, কনজাংটিভাইটিস, স্বাদহীনতা
• হাড়ে ও গাঁটে মারাত্মক ব্যথা
• চার-পাঁচ দিন পরে চিকুনগুনিয়ার আইজিএম অ্যান্টিবডি টেস্টে ধরা পড়ে৷
টাইফয়েড হলে-
• টাইফয়েডে সাধারণত পাঁচ থেকে চোদ্দ দিন পর্যন্ত ধুম জ্বর থাকে৷ ১০৩ থেকে ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠে যেতে পারে৷
• সঙ্গে পেটে ও মাথায় ব্যথা, পেটের সমস্যা, বমি হওয়া৷
• জ্বরের পাঁচ দিন পর ‘ওয়াইডাল টেস্ট’ করালে রোগ ধরা পড়ে৷
এখন কী করণীয়-
• প্রচুর পরিমাণে জল খান৷ বিশ্রামের পাশাপাশি উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করান৷
• প্যারাসিটামল ছাড়া জ্বর বা ব্যথার ওষুধ নয়৷
• চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনও অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ নেবেন না৷
কী কী বর্জন করতে হবে-
• অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেনের মতো ওষুধ এড়িয়ে চলুন৷
• অসুস্থতা উপেক্ষা করে কায়িক পরিশ্রম করবেন না৷
• ধূমপান, অন্য তামাক বা মদ্যপান করবেন না৷