নয়াদিল্লি: বিজ্ঞাপনী চটকে আমাদের অনেক সময় হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। খাবার, পানীয়ের পাশাপাশি কসমেটিক্স বা অন্যান্য জিনিসপত্রের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে আমরা সেগুলি পাওয়ার জন্য কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু তার সব কটি আমাদের শরীরের পক্ষে কতটা ভাল তা বিচার করে দেখি না।
মাত্র কয়েক বছর আগের কথা, একটি জনপ্রিয় ক্রিমের নাম নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় দেশ জুড়ে। সেই ক্রিম মেখে ফর্সা হোন এবং নিজেকে সুন্দর করে তুলুন। এমন ভাবে প্রচার করা হতো। এই ফর্সা কথাটা নিয়ে ছিল একরাশ আপত্তি। অবশেষে সেঈ ক্রিমের নাম থেকে ফর্সা শব্দটি বাদ যায়। আসলে মহিলাদের একটা বড় অংশ নিজেদের ফর্সা দেখতে চায়। ফর্সা এবং উজ্জ্বল ত্বক মহিলাদের কাছে একটা বিশেষ চাওয়া। সেই কারণে কম ফর্সা বা কালো এমন প্রচুর মহিলা নিয়মিত স্কিন কেয়ার ক্রিম ব্যবহার করে আসছেন বছরের পর বছর ধরে। আর বিপদটা কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে সেখানেই। তার কারণ বেশ কিছু স্কিন কেয়ার ক্রিমে মার্কারি বা তার কোনও যৌগ থাকে বলে বহুদিন ধরেই বলছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। সেই কারণে স্কিন কেয়ার ক্রিম কিনে ত্বকে লাগাবার আগে অবশ্যই ভাল করে দেখে নিতে হবে সেই ক্রিমে কি কি উপাদান রয়েছে। যদি তাতে মার্কারির সামান্যতম অস্তিত্ব থাকে তবে সেই ক্রিম একেবারেই ব্যবহার করা উচিত কাজ হবে না।
কয়েক বছর আগের কথা। আমেরিকায় ৪৭ বছরের এক মহিলা হঠাৎই জটিল স্নায়ুর রোগে ভুগতে শুরু করলেন। গায়ে দেখা গেল প্রচুর কালচে দাগ। এছাড়া অসুবিধা হতে লাগল হাঁটাচলা করতেও। একটা সময় সমস্যা আরও বাড়লে তিনি চিকিৎসকের দ্বারস্থ হলেন। চিকিৎসকরা তাঁর রক্তসহ বিভিন্ন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে শুরু করলেন। একটা সময় সব রিপোর্ট আসার পর রক্তের রিপোর্ট দেখে চিকিৎসকদের মাথায় হাত। দেখা গেল ওই মহিলার রক্তে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ মার্কারির উপস্থিতি রয়েছে। সেই কারণেই তাঁর জটিল স্নায়ু রোগ হয়েছে বলে জানালেন চিকিৎসকরা। তখন সেই মহিলা চিকিৎসকদের জানিয়েছিলেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্কিন কেয়ার ক্রিম ব্যবহার করতেন। শুধু স্নায়ু সংক্রান্ত রোগ নয়, শরীরে অত্যধিক পরিমাণ মার্কারি প্রবেশ করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে ত্বকের পাশাপাশি প্রবলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখ, ক্ষুদ্রান্ত্র, কিডনি, ফুসফুস। একটা সময় এইসব উপসর্গ ক্রমাগত বাড়তে বাড়তে একজন মানুষকে মৃত্যুর দিকে তা ঠেলে দিতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিশেষ জোর দিয়েছে এই ধরনের ক্রিমের ব্যবহার বন্ধ করতে। স্কিন কেয়ার ক্রিমে যাতে মার্কারি বা তার অন্য কোনও যৌগ ব্যবহার করা না হয় সে জন্য কঠোর নির্দেশ আরোপ করা আছে। কিন্তু তারপরেও এই ধরনের স্কিন কেয়ার ক্রিমে মার্কারির ব্যবহার অন্য নামে হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। ভারতীয় স্কিন কেয়ার ক্রিমগুলিতেও কি কি উপাদান আছে তা দেখে নিয়ে সেগুলি ব্যবহার করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের কথায় এই ধরনের ক্রিমে মার্কারির জৈব এবং অজৈব দুই ধরনের যৌগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে জৈব মার্কারি যৌগ আরও বেশি করে মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের পাশাপাশি ফুসফুস, কিডনি, চোখ, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র নষ্ট করে দেয়। তাই ফর্সা এবং উজ্জ্বল হওয়ার ক্রিম ব্যবহার করার আগে যে বিশেষ সতর্ক হতে হবে সবাইকে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।