করোনা-টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে কীভাবে, কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

বেইলার ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের সহকারী ডিন মারিয়া এলেনা বোত্তাজির কথায়, একটি ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেলে হয়তো সেটি সকলের জন্য কার্যকর নাও হতে পারে বা বেশি দিন পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা ধারণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে কিন্তু এটা শুভারম্ভ বলাই যায়। একটি মাঝারি ক্ষমতা সম্পন্ন ভ্যাকসিন বেশ কিছু মানুষকে সংক্রমিত হওয়ার থেকে রক্ষা করতে পারে পাশাপাশি এবং সংক্রমণ এর মাত্রা কম করতে পারে।

ওয়াশিংটন: মাত্র কয়েক মাস আগে করোনা সংক্রামণ মহামারীর আকার নিতে শুরু হওয়ার পরে বিগত একমাসের মধ্যেই এই রোগের ৩০ টিরও বেশি প্রার্থীর ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে পৌঁছেছে। কিন্তু যে বেশিরভাগ ভ্যাকসিনগুলির বিকাশ হতে কয়েক বছর সময় নিলে, আমরা কীভাবে জানব যে অনুমোদনের জন্য প্রথম করোনভাইরাস ভ্যাকসিন ব্যাপকভাবে ব্যবহারের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর?

বিশেষজ্ঞরা লাইভ সায়েন্সকে বলেছেন, যে সমস্ত প্রার্থী কোভিড -১৯ এর ভ্যাকসিনগুলি অন্য ভ্যাকসিনগুলির মতোই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন(এফডিএ) এর অনুমোদনের আগে ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলির একই পর্যায় অতিক্রম করতে হবে। হাজারখানেক অন্যান্য বহু অংশগ্রহণকারী এই শর্তাবলীর অধীনে আছে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি সনাক্ত করার জন্য সম্পূর্ণ প্রোটোকলের অন্তর্ভুক্ত। রাতে জনগণ নিশ্চিত হতে পারে যে অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলি নিরাপদ।

ইউনিভার্সিটি অফ আইওয়া কলেজ অফ ফার্মাসির ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্সের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক আলী সালেম একটি ইমেইলের মাধ্যমে লাইভ সায়েন্সকে জানিয়েছেন, “একটি সধারণ ভ্যাকসিন যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা না করেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা সমস্যাযুক্ত হবে।” তবে এ জাতীয় একটি ভ্যাকসিন মা “কার্যকারিতা এবং সুরক্ষা সম্পর্কিত এফডিএ-র গাইডলাইনের মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হবে এবং এরজন্য তা বাজারে ছাড়ার উপযুক্ত হবে না বলেই আশা করা যায়।”

জার্নাল বায়োস্ট্যাটাস্টিকস-এর ২০১৯ সালের এক গবেষণায় বলা হয়েছে যে সর্বোপরি, একটি কার্যকর টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে ভালো সম্ভাবনা রয়েছে : সংক্রামক রোগের ভ্যাকসিন প্রার্থীরা অন্যান্য ওষুধের ধরণের তুলনায় নিয়মিত বেশি হারে এফডিএ অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি অতিক্রম করে; উদাহরণস্বরূপ, এই ভ্যাকসিন প্রার্থীদের প্রায় এক তৃতীয়াংশই চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হয়, যা ক্যান্সারের ওষুধের তুলনায় ৮ শতাংশেরও কম। 

একটি ভ্যাকসিনটি সমস্ত প্রাপকদের মধ্যে তখনই নিরাপদ হবে, যখন তরুণ, বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান বা মারাত্মক করোনা সংক্রামণের ঝুঁকির কারণ রয়েছে, একটি জনগোষ্ঠীর এমন প্রত্যেক ধরণের মানুষ ক্লিনিকাল ট্রায়ালে প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে জানিয়েছেন বেইলার ইউনিভার্সিটির ন্যাশনাল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের সহকারী ডিন মারিয়া এলেনা বোত্তাজি। এই ধরণের পরীক্ষাগুলি আরও নিশ্চিত করবে যে, কোনও ভ্যাকসিন একটি গ্রুপে ভালভাবে কাজ করলেও অন্য গ্রুপের জন্য তার কার্যকর নয়। সেক্ষেত্রে যে গ্রুপের ওপর ভ্যাকসিন কাজ করছে তাদের জন্য সেটি নিশ্চিত করা যাবে।

জুনে, এফডিএ- এর পক্ষ থেকে ভ্যাকসিনগুলির অনুমোদনের জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকাগুলিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সংস্থাকে একটি ভ্যাকসিনের কী কী নিরাপত্তা মূল্যায়নগুলি পাস করতে হবে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে একটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কার্যকারিতা দেখাতে হবে, এর অর্থ উপযুক্ত আবহে যারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তাদের করোনা সংক্রমণ যারা ভ্যাকসিন নেননি এমন ব্যক্তিদের তুলনায় কমপক্ষে অর্ধেক কম হবে। ফ্লু ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একইভাবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়।

সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটির, ইনফেকশান ডিজিজ অ্যান্ড ইমিউনোলজির সহকারী অধ্যাপক সারা জর্জ জানিয়েছেন, কোনো ভ্যাকসিনের ৫০ শতাংশের এর কম কার্যকারিতা থাকলে তখন আমরা অন্য ভ্যাকসিনের কথা চিন্তা ভাবনা করি। কিন্তু ৫০ শতাংশ কার্যকর হলেও তা অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আলার্জি অন ইনফেকশাস ডিসিজেস-এর ডঃঅ্যান্থনি ফৌসি এপ্রিলে জানিয়েছিলেন, কোন ভ্যাকসিন তৃতীয় বা শেষ পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সম্পন্ন করার আগেই যদি জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহার করতে হয় তবে সেটির দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে ইমিউনিটি তৈরীর ক্ষেত্রে শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হওয়া উচিত।

তবে অধ্যাপক আলী সালামের মতে, একমাত্র ইমিউনিটি তৈরীর ক্ষেত্রে শক্তিশালী এই একটি বিষয়ে গুরুত্ব দিলে চলবে না। সেক্ষেত্রে তৃতীয় পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ এবং তার দীর্ঘ সময়ের ফলাফল দেখেই কোন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। সম্প্রতি ব্রিটেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার স্থায়িত্ব খুব কম। ডঃ বোত্তাজিও এবিষয়ে সহমত পোষণ করে জানিয়েছেন যে একটি ভ্যাকসিন কত সময় পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখতে পারছে সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নন। 

তবে তিনি এও বলেছেন একটি ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেলে হয়তো সেটি সকলের জন্য কার্যকর নাও হতে পারে বা বেশি দিন পর্যন্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা ধারণ করতে সক্ষম নাও হতে পারে কিন্তু এটা শুভারম্ভ বলাই যায়। আরও বলেন, একটি মাঝারি ক্ষমতা সম্পন্ন ভ্যাকসিন বেশ কিছু মানুষকে সংক্রমিত হওয়ার থেকে রক্ষা করতে পারে পাশাপাশি এবং সংক্রমণ এর মাত্রা কম করতে পারে। ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যাক্তিদের কেউ যদি ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকেন তবে সেক্ষেত্রে তারা সম্ভবত কম গুরুতর অসুস্থতায় আক্রান্ত হবেন এবং সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্যপরিষেবা ব্যবস্থা ও মৃত্যুর হারের বোঝা কম করবেন।  সংক্রমণের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অজানা থাকার কারণে, একটি ভ্যাকসিন ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য অন্যান্য জটিলতাগুলি থেকেও মানুষকে রক্ষা করতে পারে, বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =