নয়াদিল্লি:বিশ্বায়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন একইসঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে জীবজগতের স্বাভাবিক জীবন শৈলী । ফলে রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাসের সংক্রমণেও পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রকৃতিগত পরিবর্তন। যার ফলে রোগের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র দেখা দিচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই নতুন এবং বিরল রোগের ভাইরাসগুলির সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতি আগে থেকে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। প্রাণীদের শরীরেই বাসা বাঁধে এই ভাইরাস বা ব্যাকটিরিয়া। এখন যা প্রায় প্রতি বছরই নতুন নতুন নামে মানুষের মধ্যে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে।
যেমন এই মুহুর্তে নতুন 'নোভেল করোনা' ভাইরাসের দাপট চীন সহ বিশ্বের অন্তত ২৪ টি দেশে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসের মূল উৎসস্থল চিনে এই ভাইরাসজনিত মারণ রোগ মহামারীর আকার নিয়েছে। এপর্যন্ত সেখানে এই রোগে মৃতের সংখ্যা সাড়ে চারশোরও বেশি। তবে চীনের বিশেষজ্ঞ মহল বলছে এটা প্রত্যক্ষ হিসেবে। পরোক্ষভাবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে।
প্রাণীর শরীরে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসকে বলা হয় প্যাথোজেন। এরা একধরনের অনুজীব যা প্রাণীদের শরীরেই অবস্থিত প্রতিরোধক গুলির সঙ্গে লড়াই করে নিজেদের অস্তিত্ব ও বংশবৃদ্ধির আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এদের প্রয়োজন নতুন প্রাণীর দেহ বা 'হোস্ট'। ক্রমাগত মিউটেশন বা পরিবর্তনের মাধ্যমে এরা নতুন নতুন প্রাণীর দেহে খুব সহজেই নিজের বাসা তৈরি করে নেয়। এরপর সেই নতুন দেহে আরো বেশি শক্তিশালী এবং সংক্রামক হয়ে ওঠে। নোভেল করোনা (2019-nCoV) ভাইরাসের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী এই রোগ মহামারীর আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সিডিসি। সেক্ষেত্রে প্রতিরোধের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন(সিডিসি)- এর তরফে জানানো হয়েছে এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য বর্তমানে কোনও ভ্যাকসিন নেই। তাই এর সংক্রমণ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হ'ল এই ভাইরাসের সংস্পর্শ এড়ানো। সাবধানতা হিসাবে, শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে প্রতিদিনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে সিডিসি যে বিষয়গুলির সুপারিশ করেছে তা হল:-
১.হাতের ময়লা দৃশ্যমান হোক বা না হোক, প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান এবং জল দিয়ে হাত ধুতে হবে , বিশেষত বাথরুমে যাওয়ার পরে; খাওয়ার আগে; এবং আপনার নাক ঝেড়ে নেওয়ার পর, কাশি বা হাঁচি দেওয়ার পরে।
২.যদি সাবান এবং জল সহজেই না পাওয়া যায় তবে কমপক্ষে ৬০% অ্যালকোহল সহ অ্যালকোহল যুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
হাত না ধুয়ে চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা যাবে না।
৩.বাড়িতে থাকলে পরিবারের কোন অসুস্থ মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখা যাবে না।
নিজের অসুস্থ হলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৪.হাঁচি-কাশির জন্য ব্যবহৃত রুমাল বা টিস্যু ব্যবহারের পরেই এমন জায়গায় ফেলে দিতে হবে যেখান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর কোন উপায় নেই।
৫.ঘর, ঘরের মেঝে বা অন্যান্য জিনিসপত্র পরিষ্কারের জন্য নিয়মিত জীবাণু নাশক স্প্রে বা লিকুইড ব্যবহার করতে হবে।
৬.করোনা প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে চাইছে না সিডিসি। কারণ তাদের মতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাতাসের জীবাণু প্রতিরোধকারী উন্নত মানের মাস্ক সংগ্রহ করা কঠিন। এরপর সেই মাস্ক সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও গাফিলতি থাকে। তবে এক্ষেত্রে সিডিসি-র মতে সর্দি-কাশি হলে ধোঁয়া-ধুলোর হাত থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করা যেতেই পারে ।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য 'আক্রমনাত্মক পদক্ষেপ'-এর কথা উল্লেখ করে একাধিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই ১১ জনের দেহে এই ভাইরাস চিহ্নিত করা গেছে আমেরিকায়।
এক্ষেত্রে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আমেরিকায় চীনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। চীন থেকে আগতদের আলাদা রেখে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে । দেশের সমস্ত রাজ্য এবং স্থানীয় চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করছে সিডিসি। আটলান্টায় সিডিসি প্রধান কার্যালয় এই মুহূর্তে ওই দেশের একমাত্র 'নোভেল করোনা' ভাইরাসের পরীক্ষাকেন্দ্র । পরীক্ষা কেন্দ্রে রক্তের নমুনা পাঠানো থেকে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে রিপোর্ট পৌঁছানো পর্যন্ত সময় লাগছে ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টা। এর সঙ্গে আর অতিরিক্ত ৬ ঘন্টা লাগছে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করতে। জনসাধারণের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে রক্তের পরীক্ষার জন্য এমার্জেন্সি ইউজ অথরাইজেশন বা জরুরী ব্যবহারের অনুমোদনের অধীনে এই প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে।