ব্যথায় এগিয়ে বাংলা! দেশে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণায় কাবু রাজ্য

ব্যথায় এগিয়ে বাংলা! দেশে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণায় কাবু রাজ্য

3b1a6ad1bc66347fb358dea31946c3fa

কলকাতা: ব্যথায় কাবু বাংলা!  

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ব্যথা-বেদনার উপদ্রব৷ কারও হাঁটু তো কারও আবার কোমর, কিংবা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সঙ্গী হয়ে ওঠে ব্যথা৷ কিন্তু জানেন কি আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যথায় ভোগে কোন রাজ্যের মানুষ?  

দেশজোড়া চালানো একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রায় অর্ধেক বঙ্গবাসীর জীবনই ব্যথায় জেরবার৷ দু’টি ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই সমীক্ষাটি চালায় মুম্বইয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন স্টাডিজ (আইআইপিএস)৷ সম্প্রতি গবেষণাপত্রের আকারে এই সমীক্ষাটি প্রকাশিত হয় বিজ্ঞানপত্রিকা ‘পেন’-এ৷ 

আইআইপিএস-এর অধ্যাপক এবং এই প্রকল্পের মুখ্য গবেষক সঞ্জয় মোহান্তি জানিয়েছেন,  ৪৫ বছরের বেশি বয়সি প্রতি তিন জন ভারতীয়ের মধ্যে গড়ে একজন (৩৭%) ব্যথায় কাবু। সেই ব্যথার তীব্রতা এতটাই প্রবল যে, রীতিমতো তা প্রভাব ফেলে তাঁদের রোজনামচায়। আর এই তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যে অর্ধেকের কাছাকাছি (৪৬%) মানুষ ব্যথা-যন্ত্রণার শিকার৷ এঁদের মধ্যে আবার ৩৯.৮ শতাংশ মানুষ আবার ব্যথার দাপটে ঠিক মতো দৈনিক কাজকর্মটুকুও করে উঠতে পারে না৷ পাশাপাশি সমীক্ষাও এও দেখা গিয়েছে, ব্যথার সমস্যা নিয়ে চিকিৎসাধীন ৬৪% মানুষ৷ 

দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ৬৩,৯০০ ব্যক্তির উপর এই সমীক্ষাটি করা হয়। ২০১৭ থেকে শুরু হয় তথ্য সংগ্রহের কাজ। তাতে দেখা গিয়েছে, লিঙ্গ ভেদে ৪৫-ঊর্ধ্ব ১৫% মানুষ সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ব্যথা-যন্ত্রণায় কষ্ট পান। 

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রাজেশ প্রামাণিকের কথায়, ‘‘ব্যথা নিয়ে এত বড় সমীক্ষা এর আগে আমাদের দেশে হয়নি। সে দিক থেকে দেখলে এই সমীক্ষা নিশ্চিত ভাবেই তাৎপর্যপূর্ণ। আর এই বিষয়ে পয়লা নম্বরে রয়েছে বঙ্গবাসী৷ অথচ এতদিন এই বিষয়টা এতদিন অজানা ছিল৷ তবে গত কয়েক বছরে ব্যথায় কষ্ট পাওয়া রোগীদের ভিড় যে ক্লিনিকগুলিতে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। জীবনশৈলির বদল এর জন্য দায়ী কিনা, তা অবশ্য জানা নেই৷’’ 

মুখ্য গবেষক সঞ্জয় জানান, তাঁরা সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ব্যথা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেছিলেন। তবে সে যন্ত্রণার উৎস কী, আর্থ্রাইটিস নাকি মাইগ্রেন নাকি ক্যান্সার না অন্য কোনও অসুখ— তা অবশ্য জানতে চাওয়া হয়নি। তাঁর কথায়,  ‘‘ব্যথার কারণ অনুসন্ধান করাটাই আমাদের গবেষণার পরবর্তী ধাপ।’ 

প্রবীণ পেন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ সুব্রত গোস্বামী জানান, ২০১৩ সালে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন তাঁরাও৷ দেশের আটটি বড় শহরকে কেন্দ্র করে চালানো ওই সমীক্ষায় জানা যায়, ক্রনিক ব্যথায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত চেন্নাইয়ের (২২%) মানুষ৷ তার পরেই রয়েছে কলকাতা (২১%)। এর কারণ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেও জানান তিনি৷ তবে তাঁর মতে, ডাক্তার না-দেখিয়ে ওষুধের দোকান থেকে মুখে বলে ব্যথার ওষুধ কিনে খাওয়ার প্রবণতা বাংলার মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তাই  অসুখের প্রকৃত কারণটা চিহ্নিতই হয় না৷ ফলে চট করে ব্যথাও সারে না৷