কলকাতা: আজ থেকে ঠিক পাঁচ দশক আগে কথা৷ আজ, এই দিনেই বাজারে এসেছিল সেই পণ্য, যা এখনও বহু শিক্ষিত মানুষও মানসিক ট্যাবু কাটিয়ে ব্যবহার করে উঠতে পারেননি৷ হিন্দুস্তান ল্যাটেক্স লিমিটেড যা বর্তমানে রাজ্য পরিচালিত এইচএলএল লাইফকেয়ার লিমিটেড নামেই পরিচিত৷ তিরুবনন্তপুরমের কাছে তাদের কারখানায় এই দেশে প্রথম কন্ডোম তৈরি করেছিল৷ আজ দেশে কন্ডোম উৎপাদনের সুবর্ণজয়ন্তী। এইচএলএল লাইফকেয়ারে কন্ডোম উৎপাদন এখন বার্ষিক দুই বিলিয়ন অতিক্রম করেছে। এটিই বিশ্বের একমাত্র কোম্পানি যা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সবকিছু সরবরাহ করে। বহু বছর ধরে, বহু মানুষের শয্যাসঙ্গকে এই কোম্পানিটিই ‘নিরাপদ’ করে তুলেছে।
পিছনে ফিরে তাকালেই দেখা যাবে এই দেশে সরকার ১৯৫০-এর দশকে জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি চালু করে। সেই সময় কন্ডোম মূলত বাইরে থেকে নিয়ে আসা হত দেশে, এবং সেসবের দামও ছিল প্রচুর। সরকারের ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’ প্রচারাভিযানের সাফল্যের জন্য সুলভে ভারতের প্রত্যেক পরিবারের কাছে কন্ডোম পৌঁছানো ভীষণই প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে। ১৯৬০-এর দশকে কেন্দ্র ঠিক করে এই দেশের কন্ডোমের একটি কারখানা খোলা হবে। পরিকল্পনা মতো সুলভে কন্ডোম উৎপাদন করতে কেরলে কন্ডোমের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কেরলে মূলধনী ফসল ছিল রবার। ১৯৬৬ সালের ১ মার্চ, হিন্দুস্তান ল্যাটেক্স লিমিটেড স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কন্ডোম উৎপাদনের কাজ শুরু করে।
১৯৬৭ সালের ১৪ জানুয়ারি কেরলের পেরুরকাদা অঞ্চলে এই কারখানার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। সেই সময় কারখানায় কন্ডোম তৈরির উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৪৪ মিলিয়ন। আজকের দিনেই ১৯৬৯ সালে জাপানের ওকামোটো ইন্ডাস্ট্রিজেরপ্রযুক্তিগত সহযোগিতায় এদেশে কন্ডোমের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৭৬ সালে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে এক বছরে দেশে ২৮৮ মিলিয়ন কন্ডোম উৎপাদিত হয়। পরবর্তীতে, জাতীয় পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির জন্য কন্ডোমের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সংস্থাটি ১৯৮৫ সালে কর্ণাটকের বেলগাঁওয়ে আরেকটি কারখানা খোলে। ১৯৯০-এর দশকে, সংস্থাটি অন্যান্য বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবাও শুরু করে এবং বার্ষিক ১০০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। ২০১০ সালে এইচএলএল ১২৯৬ কোটির ব্যবসা করে। এই দীর্ঘ যাত্রার মধ্যে দিয়েই এইচএলএল গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যতীত সাতটি আরও প্রতিষ্ঠান চালু করেছে এবং এখানে ৬০,০০০ বর্গফুটের অত্যাধুনিক শিল্প ও গবেষণা কেন্দ্রও খুলেছে।