গণধর্ষণে তরুণী মা সন্তান কোলে আরও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিচারের আশায়

গণধর্ষণে তরুণী মা সন্তান কোলে আরও দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিচারের আশায়

ইংরেজবাজার: গণধর্ষণের ঘটনার পর কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন অসহায় কুমারি মা। কিন্তু সুবিচার মেলেনি। গণধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্তরা জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর এখন ধর্ষিতা যুবতী ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য খুনের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। এমনকি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ধর্ষিতা ও নির্যাতিতা যুবতীর দুই ভাইকে ষড়যন্ত্র করে পুলিশে ধরিয়েছে। গোটা ঘটনাটি নিয়ে অসহায় ওই যুবতীর পরিবার দ্বারস্থ হয়েছেন মালদার পুলিশ সুপারের। পাশাপাশি নতুন করে আদালতের কাছে বিচার চেয়ে দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্যাতিতা ওই যুবতী ও তার পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার কাউয়ামারী গ্রামে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণধর্ষণকাণ্ডে তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া'র সঙ্গে দেখা করেন নির্যাতিতা ওই যুবতী ও তার পরিবার। তাদের সঙ্গে ছিলেন মালদার আইনজীবী তথা গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস্ অ্যাওয়ারনেস সেন্টারের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাস। পুরো ঘটনাটি জানার পর পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই ঘটনায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রামবাসীরাও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে স্কুলে পড়াকালীন কাউয়ামারী গ্রামের ওই যুবতীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে প্রতিবেশী সাইদুর রহমান , তাহির আলি, তোরাব আলি। সেই সময় নির্যাতিতা ওই যুবতী নাবালিকা ছিলেন। এই ঘটনার পর অভিযোগের ভিত্তিতে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে তারা জামিনে ছাড়া পাই।  ২০১৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই গণধর্ষণের ঘটনার পর কেটে গিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। মাঝখানে অভিযুক্তরা কিছুদিনের জন্য জেল খেটেছে। পরবর্তীতে জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নির্যাতিতা ওই যুবতীর পরিবারকে এখন প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। এব্যাপারে চলতি বছর ২৫ জানুয়ারি নতুন করে নির্যাতিতা ওই যুবতীর পরিবার অভিযুক্ত তিনজনের বিরুদ্ধে আবারও হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। পরবর্তীতে ২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তরা নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করে। আর সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্যাতিতা ওই যুবতীর দুই ভাই আব্দুল মালেক এবং সিরাজুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । যা নিয়ে এখন গ্রামবাসীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ছড়িয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অসন্তোষ ছড়িয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।

নির্যাতিতা ওই যুবতী বলেন, আমাকে ২০১৭ সালে স্কুল যাওয়ার সময় অভিযুক্ত ওই তিনজন তুলে নিয়ে যায়। তারা ধর্ষণ করে । এরপর আমি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছি।  এখন সন্তানের বাবার অধিকারের দাবি চাইছি। পাশাপাশি ওরা এখন আমাদের খুনের হুমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ক্রমাগত প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এমনকি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে অভিযুক্তরা আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করিয়েছে।  হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ কোন বিচার করছে না। তারই পরিপেক্ষিতে এদিন পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি। নতুন করে আবার আদালতের দ্বারস্থ হবে। বিচার না পেলে প্রয়োজনে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানাব।

এদিন নির্যাতিতা ওই যুবতীর মা হাবিবা বিবি বলেন, ২৫ জানুয়ারি হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া অভিযোগ দায়ের করেছি। মেয়েকে ধর্ষণ করার পরেও অভিযুক্তরা থেমে থাকে নি। এখন ওরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য খুনের হুমকি দিচ্ছে। আমরা আতঙ্কে আছি । প্রাণভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছি না। দুই ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পুরেছে অভিযুক্তরা। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ অভিযুক্তদের মদত যোগাচ্ছে। আমরা এর বিচার চাই। তার জন্যই পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি। প্রয়োজনে আদালতে যাব । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নালিশ জানাব।

মালদার আইনজীবী তথা গৌড়বঙ্গ হিউম্যান রাইটস্ অ্যাওয়ারনেস সেন্টারের সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন,  ধর্ষণের ঘটনার পর ওই যুবতী কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। অথচ বাবার স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ঘটনার পর ডিএনএ টেস্ট করা হয়নি। অভিযুক্তরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখন হুমকি দিচ্ছে। পাশাপাশি একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে অভিযুক্তরা। যার কারণে নির্যাতিতা ওই যুবতীর দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । নির্যাতিতা যুবতী ও তার পরিবার কোন বিচার পাচ্ছে না। তারজন্য এদিন পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছে ওই যুবতী ও তার পরিবার । সমস্ত অভিযোগের কথা পুলিশ সুপারকে জানিয়েছেন। আমরা চাই দ্রুত এর বিচার হোক। অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি হোক। পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, পুরো ঘটনাটি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা পুলিশকে। পাশাপাশি ওই যুবতীর অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে  আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

1 × four =