yahya sinwar
নয়াদিল্লি: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধ পরিস্থিতি৷ মৃতের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে৷ আতঙ্কের রাত নেমেছে গাজায়৷ লাগাতার চলছে এয়ারস্ট্রাইক৷ যদিও দু’ দেশের মধ্যে সংঘাতের ইতিহাস বহু পুরনো৷ সেই জন্মলগ্ন থেকেই একে অপরের জাত শত্রু প্যালেস্তাইন ও ইজরায়েল৷ প্যালেস্তাইনীয় পার্লামেন্টে সংখ্যা গরিষ্ঠা হামাস গোষ্ঠীর সঙ্গে ফের যুদ্ধ বেঁধেছে ইজরায়েলের৷ আর চলতি এই সংঘাতের নেপথ্যে রয়েছে নাকি তাঁরই মস্তিষ্ক৷ হামাসের হয়ে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে অতর্কিতে হামলা চালানোর নেপথ্য খলনায়ক ইয়াহা সিনবার।
৬৩ বছর বয়সি এই সিনবার তাঁর জীবনের ২৪টি বছর কাটিয়েছেন ইজরায়েলের জেলে। অনেক আগেই তাঁর মাথায় ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা সেঁটে দিয়েছে আমেরিকা। ইজরায়েলের কাছে তিনি ‘প্যালেস্তাইনের ওসামা বিন লাদেন’৷ বহু চড়াই-উতরাই পেরনোর পর প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র সংগঠন হামাসের শীর্ষ স্তরে পৌঁছন সিনবার। ২০১৭ সালে হামাস অধিকৃত গাজায় সর্বোচ্চ শাসক নির্বাচিত হন তিনি৷
১৯৬২ সালে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে জন্ম সিনবারের। দক্ষিণ গাজা ভৌগলিকভাবে তখন মিশরের অধীন। তাঁর জন্মস্থানের কথা উল্লেখ করেই ইজরায়েলি সেনা সিনবারকে ‘খান ইউনিসের কসাই’ বলে কটাক্ষ করে থাকে।
অনেকেই মনে করেন, সিনবারের পারিবারের মধ্যেই সুপ্ত ছিল ইজরায়েল-বিরোধিতার বীজ৷ সেই বীজকেই সযত্নে মহীরুহ করে তেলেন সিনবার৷ গাজার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যারাবিক স্টাডিজ নিয়ে তিনি পড়াশোনা তাঁর। ছাত্রজীবনেই ইজরায়েল-বিরোধী একাধিক কার্যকলাপে নাম জড়ায় সিনবারের৷ হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ১৯৮২ সালে প্রথমবার গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তার পর একাধিক বার জেলবন্দি হয়েছেন। আশির দশক থেকেই হামাসের সঙ্গে যোগসূত্র গড়ে উঠেছিল ‘প্যালেস্তাইনের ওসামা বিন লাদেন’-এর৷ হামাস নেতা সালাহ শেহাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইজরায়েলি গুপ্তচরদের উপর আক্রমণ হানতে শুরু করেন সিনবার।
১৯৮৭ সালে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে হামাস৷ নিজের সংগঠনকে হামাসের সঙ্গে মিশিয়ে দেন সিনবার। তিনি হামাসের হাত ধরার পর থেকেই বাড়তে থাকে ইজরায়েলের উপর আক্রমণ৷ একাধিক বার গ্রেফতার করে জেলে পুড়লেও সিনবারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ইজরায়েলি প্রশাসন। বরং তাঁর কর্মকাণ্ড বারবার বিপাকে ফেলেছে সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে তুলনায় উন্নত ইজরায়েল।
১৯৮৮ সালে দু’জন ইজরায়েলি সেনাকে হত্যার অভিযোগে ধরা পড়েন সিনবার। ওই একই সময় চার জন প্যালেস্তিনীয় ব্যক্তি ইজরায়েলিদের হয়ে কাজ করার অভিযোগে খুন হন। সেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাতেও নাম জড়ায় সিনবারের।
২০০৬ সালে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে পাতাল পথে ইজরায়েলে ঢুকে আসে হামাসের সামরিক শাখা ইজ্জাদ-দিন আল-কাসামের কিছু সদস্য। তার পর ইহুদি-প্রধান ইজরায়েলের দুই সেনাকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে৷ এক জনকে পণবন্দি করে। হামাসের হাতে বন্দি ওই সেনার জীবন বাঁচাতে সিনবারকে ছাড়তে বাধ্য হয় ইজরায়েল। সিনবারের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েক জন প্যালেস্তিনীয় বন্দিকেও ছাড়তে বাধ্য হয় তেল আভিভ৷
২০১১ সালে জেল মুক্তির পরেই হামাসের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন সিনবার। হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হ্যানিয়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে যাওয়ার পর সিনবারই হয়ে ওঠেন হামাসের অলিখিত প্রধান।
গত ৭ অক্টোবর সূর্যের আলো ফোটার আগেই ইজরায়েলের উপর অতর্কিতে হামলা চালায় হামাস বাহিনী। প্রাণ হারায় ১৩০০ ইজরায়েলি। হামাস যে বেপরোয়া আক্রমণ হানতে চলেছে সে সম্পর্কে ইজরায়েলের বিখ্যাত গুপ্তচর সংস্থাগুলি ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি৷ ইজরায়েলি সেনার দাবি, এই হামলার পরিকল্পনা সিনবারেরই মস্তিষ্ক প্রসূত৷