Women’s Reservation
কলকাতা: শুরু থেকেই সাসপেন্স বজায় রেখেছিল কেন্দ্র। ঘটা করে পাঁচ দিনের জন্য সংসদে বিশেষ অধিবেশনের ডাক দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। যা নিয়ে ব্যাপক জল্পনা শুরু হয়। কি হবে এই অধিবেশনে, তা নিয়ে নানা মত সামনে আসে। এই পরিস্থিতিতে দেখা গেল মঙ্গলবার সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ করেছে কেন্দ্র। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এই বিলকে সমর্থন করছে। অতীতে এই বিল মনমোহন সিংয়ের সরকার রাজ্যসভায় পাশ করালেও তা লোকসভায় আটকে গিয়েছিল। এবার বিলটি পাশ হয়ে আইনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সেদিক থেকে মঙ্গলবার যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। এই বিল পাশ হয়ে আইনে পরিণত হলেই আগামী দিনে বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলিকে অন্তত ৩৩ শতাংশ মহিলা প্রার্থী দাঁড় করাতে হবে। তবে ২০২৭ সালে জনগণনার পরেই এই আইন কার্যকর হবে। অর্থাৎ চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটি আইনে পরিণত হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনা নেই।
কিন্তু তা সত্ত্বেও লোকসভা নির্বাচনে এই বিল পেশের সুবিধা পাবে বিজেপি, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কি কারণ রয়েছে সেখানে? আসলে বিল কবে পাশ হবে, কবে সেটি আইনি পরিণত হবে, সেটা পরের কথা। বিষয়টি নিয়ে তারা যে কতটা আন্তরিক সেটা এই মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশের মাধ্যমে দেশের কোটি কোটি মহিলা ভোটারকে বুঝিয়ে দিল বিজেপি। গত বছরের জানুয়ারিতে যে ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ৪৬ কোটি মহিলা ভোটার এবং ৪৯ কোটি পুরুষ ভোটার ছিল। সামনের জানুয়ারিতে নতুন ভোটার তালিকা সামনে আসবে। সেখানেও মহিলা ও পুরুষ, দুটি সংখ্যাই নিঃসন্দেহে বাড়বে। গোটা দেশে সংখ্যার নিরিখে মহিলা ভোটাররা পুরুষদের সঙ্গে যে সমানে পাল্লা দিচ্ছে সেটা এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।
আর বিজেপি ঠিক সেটাই করতে চেয়েছে। দেশ জুড়ে চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি এটাই প্রচার করবে যে, তারা যতটা মহিলাদের কথা চিন্তা করে, অন্য কোনও দল তা করে না, বা অতীতেও করেনি। এটা নিঃসন্দেহে বিজেপিকে ভোটবাক্সে বাড়তি সুবিধা এনে দেবে। দেশের কোটি কোটি মহিলা ভোটার অত চিন্তা করবেন না যে কবে এটি পাশ হবে, বা কবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আইন হবে। সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে সেটি অবশ্যই লাগু হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা এবং বাস্তবে সেটাই ঘটে। আর এই বিষয়টিকে হাতিয়ার করেই লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের মন জয়ের জন্য ঝাঁপাতে প্রস্তুত গেরুয়া শিবির। তাই বিশেষ অধিবেশন ডেকে নতুন সংসদ ভবনে যেভাবে বিলটিকে পেশ করল কেন্দ্র, তার রাজনৈতিক তাৎপর্য যে যথেষ্ট রয়েছে, সেটা আর বলে দিতে হয় না।
পশ্চিমবঙ্গে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প চালু করে মহিলাদের মন জয় করেছে তৃণমূল সরকার। এবার দেশ জুড়ে সেটাই করতে চায় বিজেপি। তার সূচনাটা হয়ে গেল মঙ্গলবার। বিজেপির এই স্টেপ লোকসভা নির্বাচনে ‘গেমচেঞ্জার’ হতে পারে বলে রাজনীতির কারবারিদের একাংশ মনে করছেন। সবচেয়ে বড় কথা বিরোধীরা এই বিলকে সমর্থন করতে বাধ্য হবে। না হলে মহিলা ভোট তাদের বিরুদ্ধে চলে যাবে। তাই বিরোধীরা সমর্থন করলেও এই বিল পেশের সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা কিন্তু নিয়ে যাবে সেই বিজেপিই। আর সেটা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই অ-বিজেপি দলগুলির। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ বিজেপির যে মাস্টারস্ট্রোক, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।