Miracle
কলকাতা: হাসপাতালে লেবার রুমের ব্যস্ততা প্রতিদিনের৷ কত রকম ঘটনাই না ঘটে সেখানে৷ তবে ২৭ সেপ্টেম্বর দিনটা ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম৷ প্রসবকালে প্রবল উচ্চ রক্তচাপের জন্য কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় হুগলির বাসিন্দা ফিরদৌসি বেগমের। সেই সময় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে রোগী দেখছিলেন সেদিনকার গাইনির ইউনিট ইন-চার্জ ডাঃ তারাশঙ্কর বাগ। এক পিজিটি ছুটে এসে তাঁকে এই খবর জানান। ডাঃ বাগ এক মুহুর্তও দেরি না করে বলেন, ‘‘অ্যানাসথেসিয়া টিমকে রেডি কর। বাড়ির লোকজনকে বিষয়টা জানাও৷ পোস্টমর্টেম সিজার করতে হবে। আর একটি টিমকে বল, পেশেন্টকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করতে। সিপিআর দাও।’ (Miracle)
এরপর যা ঘটল, সা সত্যই মিরাকল৷ কয়েক মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ফিরদৌসির নাড়ি৷ ১১টা ৪০ মিনিটে৷ সিজার করে ‘মৃত’ রোগিণীর গর্ভ থেকে বের করা আনা হল জীবিত কন্যাসন্তানকে। এদিকে মাকে বাঁচামোর তাগিদে চলছে সিপিআর৷ আচমকা নাড়ির গতি ফিরল ফিরদৌসির। যা দেখে চিকিৎসকরা অবাক। ঘটনার আকস্মিকতায় তখন হতবুদ্ধ ফিরদৌসির স্বামী মিত আকতাবুদ্দিন। ১৮ বছর ধরে সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিল এই দম্পতি৷ বন্ধ্যাত্বের সমস্যার জন্য মুম্বইয়ের একটি আইভিএফ সেন্টারের চিকিৎসা করান এবং গর্ভে সন্তান ধারণ করেন ফিরদৌসি। তবে চিকিৎসকরা সতর্ক করে দেন, গর্বে সন্তান এলেও হাই ব্লাড প্রেশারের জন্য প্রসবকালে মা ও সন্তান দু’জনের জীবন সংশয় দেখা দিতে পারে৷
২৭ তারিখ বেলার দিকে যখন ফিরদৌসিকে মেডিক্যালে ভর্তি হকরা হয় তখন তাঁর ব্লাড প্রেশার ২০০/১০০। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে৷ বারবার হার্ট ফেল করছে৷ অন্যদিকে জল জমে গিয়েছিল ফুসফুসে। এই অবস্থায় ১১টা ৩৫ মিনিটে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। তার পর সবটাই যেন রূপকখা।
মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ বাগের কথায়, ‘‘আমার চিকিৎসক জীবনে এমন ঘটনা কখনও দেখিনি।’ পেশায় দর্জি আকতাবুদ্দিন তো এখনও বিহ্বল৷ তিনি বললেন, ‘দেশের বহু জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি। মেডিক্যালের ডাক্তারবাবুরা আমায় সত্যই অবাক করেছেন। প্রাণের চেয়েও প্রিয় স্ত্রীকে বাঁচিয়েছেন। উপহার দিয়েছেন ছোট্ট আফরিনকে৷ আর কী চাই!’’