তপন মল্লিক চৌধুরী: তিন বছর ধরে গা ঢাকা দিয়ে থাকারপর গত ২১ অক্টোবর আচমকাইকলকাতায় হাজির হয়েছিলেন বিমন গুরুং। শহরে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে ২০২১ সালে তৃণমূলকে সমর্থন করে তাঁরানির্বাচনে লড়বেন।অন্যদিকে সাড়ে ৩ বছর পর পাহাড়ে ফিরে গুরুংপন্থী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা রোশন গিরিও আস্থা রাখলেন মমতার ওপর। রবিবার কার্শিয়াঙের মোটর স্ট্যান্ডের সভা থেকে ২০২১–এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ওপর তাঁদের পূর্ণ সমর্থনের কথা জানান রোশন৷
বছর শেষ হলে এ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে শীতের পাহাড়ে উত্তাপের আবহ তইরি হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষঙ্গরা। তাদের মতে,নির্বাচনের আগে মোর্চার দুই নেতাইগোর্খাল্যান্ডের দাবিকে পাহাড়বাসীর সামনে এনে নিজেদের অস্তিত্ব টেকানোর চেষ্টা করছেন। বেশ কিছু কাল আগেই মোর্চার এই দুই নেতা পাহাড়ে ক্লোজ চ্যাপ্টার হয়ে গিয়েছিলেন। তাদের নাম পাহাড়ে আর কারওমুখে শোনা যেত না। ফের তাঁরা পাহাড়ের রাজনৈতিক আলোচনায় ফিরতে চাইছেন। অন্যদিকে পাহাড়ের মানুষের মন পেতে দুজনেই পৃথক গোর্খাল্যান্ডের কথাও জানিয়েছেন। গত ২১ অক্টোবর গুরুং মমতার ঢালাও প্রশংসা করেও জানাতে ভোলেন না যে মোর্চা গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে এক পাও সরে যায় নি।রবিবার রোশন গিরিও জানান, ‘২০২৪–এর নির্বাচনে আমাদের গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে যে দল সমর্থন করবে তাদেরই সমর্থন করব আমরা।’
আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পাহাড়ে ফিরে এস রোশন গিরিবিনয় তামাং, অনীত থাপাদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলেছেন। পাশাপাশি বিজেপি পাহাড়কে ধোঁকা দিয়েছে। তারা কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি বলেই একুশের নির্বাচনে দিদিকেই সমর্থন দেওয়ার কথা বলেছেন রোশন। একদা বিমল গুরুংয়ের সবসময়ের সঙ্গী রোশন গিরি এদিন বলেন, বিনয়–অনীতদের জমানায় জিটিএ–তে বিপুল দুর্নীতি হয়েছে। বিজেপির কাছ থেকে পাহাড়বাসীর যেমন মিথ্যা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জোটেনি তেমনি বিনয় তামাং, অনীত থাপারাপাহাড়ে বছরের পর বছর ধরে তাঁরা দুর্নীতি আর স্বজনপোষণ চালিয়েন। তাই ওদের সঙ্গে এক মঞ্চে তাঁদের কখনওই দেখা হবে নাবলে জানান রোশন গিরি।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, কার্শিয়াংয়ে রবিবার রোশনের সভায় প্রচুরলোকসমাগমহয়েছিল। অনেকে বলছেন এদিন অনীত থাপার খাসতালুক গুরুংপন্থী মোর্চা সমর্থকদের দখলে চলে গিয়েছিল।এদিনের সভামঞ্চ থেকে রোশন গিরি জানিয়েছেন,আগামী ৬ ডিসেম্বর শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্কে বিমল গুরুং সভা করতে পারেন। সেই সঙ্গে তিনি এদিন দাবি করেন, রবিবারের সভায় পাহাড়বাসীদের সমাগম আসলেট্রেলার। আসল ছবি দেখা যাবে ৬ ডিসেম্বর বিমলের সভায়।
প্রসঙ্গত, বিমল গুরুং কলকাতায় পা দেওয়ার আগে পাহাড়ে বিমল-বিরোধী সভা, সমাবেশ, মিছিল করেছিলবিনয় তামাং, অনীত থাপারা। এমনকি তাঁরা নবান্নে এসে বৈঠকও করে গিয়েছিলেন। তখন তাঁরা জানিয়েছিলেন পাহাড়ে বিমল গুরুং ক্লোজড চ্যাপ্টার। তাঁর ফিরে আসার কোনও সম্ভবনা নেই। কিন্তু ঠিক তারপরই বিমলকলকাতায় পৌঁছে সাংবাদিক ডেকে মমতাকে সমর্থনের কথা জানিয়ে বুঝিয়ে দিলেন ফের তাঁকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে। আলোচনা হয়েছিল ঠিকই তবে মাত্র দু’দিন।
প্রশ্ন উঠেছিল যে লোকটি গত তিন বছর ধরে ফেরার, একাধিক মামলায় অভিযুক্ত, রাজ্য পুলিশ যাকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত হন্যে হয়ে খুঁজেছে, কিভাবে তিনি কলকাতায় এসে সারাদিন ঘুরে বেড়ালেন, সাংবাদিক সম্মেলন করলেন, কেন তাকে পুলিশগ্রেফতার করল না। উলটে তিনি তৃণমূলের সমর্থনে পাহাড়ে নির্বাচনে লড়বেন এই কথা জানানোর পর শাসক দলের পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানানো হল। এমনকি মোর্চা যে গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে এক পাও সরে যায় নি। একথা বলার পরও শাসক দল তৃণমূল গুরুংকে কিভাবে স্বাগত জানাল? অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তবে মমতা কি পৃথক গোর্খাল্যান্ড বা বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করার দাবি মেনে নিলেন?
এদিনও সভামঞ্চ থেকে দিদিমণিকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানানোর পর গোর্খাল্যান্ডের প্রসঙ্গ তুলেছেন রোশন। বোঝা যাচ্ছে ২১-এর ভোটের আগে পাহাড়ে উত্তেজনার পারদ চড়াতে নেমেছেন রোশন-গুরুংরা। পাহাড় জুড়ে ইতিমধ্যে ফিসফাস শুরু হয়ে গিয়েছে! অশান্তির আবহ তৈরি হতে পারে বলে আঁচ করছেন পাহাড়বাসী। একদিন গুরুংকে জব্দ করতে মমতা বিনয় তামাংদের পাশে পেয়েছিলেন কিন্তু লোকসভা ভোটে তাঁরাকার্যকরি ফল দিতে পারেননি। তবে কি তাঁদেরবদলে এবার ফের গুরুং-গিরিকে কাছে টেনে নেবেন মমতা?