নয়াদিল্লি: বুধবার দুপুরে তামিলনাড়ুর কুন্নুরে ভেঙে পড়ে অভিশপ্ত সেনা কপ্টার এমআই-১৭৷ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত সহ ১৩ জনের৷ কিন্তু এটাই প্রথম নয়৷ গত পাঁচ বছরে ছ’বার দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে রাশিয়া থেকে কেনা বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক ট্রান্সপোর্ট ক্যারিয়ার এমআই ১৭ ভি ফাইভ চপার৷ কেন বারবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে এমআই ১৭? বারবার দুর্ঘটনায় ঘনীভূত হচ্ছে রহস্য৷
আরও পড়ুন- শুক্রবার শেষকৃত্য সস্ত্রীক CDS রাওয়াতের, লাইফ সাপোর্টে বরুণ সিং, সংসদে বিবৃতি রাজনাথের
খোদ ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ যে চপারে সওয়ার ছিলেন, কী ভাবে সেই চপার দুর্ঘটনার কবলে পড়ল? যান্ত্রিক ত্রুটি, নাকি খারাপ আবহাওয়া? কমিউনিকেশন ফেলিওর? নাকি নেভিগেশন এরর? সবুজে ঢাকা নীলগিরির কোলে ঠিক কোন রহস্য ঘুরপাক খাচ্ছে? উত্তর খুঁজতে শুরু হয়েছে তদন্ত। কিন্তু বুধবারের ঘটনা এমআই-১৭ কপ্টার নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷ কারণ, পাহাড়ি এলাকায় এই চপারেই সফর করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।
মাত্র ২০ দিন আগে ল্যান্ডিংয়ের সময় অরুণাচলে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল আরও এক এমআই ১৭ কপ্টার। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে কোর্ট অব এনকোয়ারি গঠন করে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের আগেই বুধবার ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের বদগাঁওয়ে রহস্যজনকভাবে ভেঙে পড়েছিল এমআই ১৭ ভি ফাইভ৷ সেই সময় সীমান্তে চলছিল ভারত-পাক বায়ুসেনার তুমুল লড়াই। অদ্ভূতভাবে এমআই ১৭ কপ্টারটিকে গুলি করে নামিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনীই। এর পরেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়, শত্রুপক্ষের ড্রোন ভেবে ভুলবশত গুলি করা হয়েছিল এমআই-১৭ কে৷ কিন্তু তী ভাবে তা সম্ভব? এই বিশেষ কপ্টার বায়ুসেনা বাহিনীর অন্যতম আইকন। কী ভাবে এমআই ১৭ চিনতে ভুল হল? সেই রহস্য আজও আজানা৷
এর পর কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধা সামরিক বাহিনীর কনভয়ে জঙ্গি হানায় শহিদ হন ৪২ জন জওয়ান৷ এর পরেই বদলা নিয়ে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে সার্জিকাল স্ট্রাইক চালায় ভারতীয় বায়ু সেনা। সার্জিকাল স্ট্রাইকের ঠিক পরের দিন ভারতীয় সীমানায় ঢুকে বোমাবর্ষণ করে পাক এয়ারফোর্স। নওসেরা সেক্টরে সেই যুদ্ধ পরিস্থিতির ঘাঁটি থেকে টেক অফের কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে এমআই ১৭ ভি ফাইভ। তাও আবার ভারতীয় বিমান বাহিনীরই নিক্ষেপ করা স্পাইডার এয়ার ডিফেন্স মিসাইলের আঘাতে। কোর্ট অব এনকোয়ারি শুরু হলে ভুল স্বীকার করে নেওয়া হয়। বায়ুসেনার তরফে বলা হয়, ফ্রেন্ডলি ফায়ারে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে৷ মিলিটারি পরিভাষায় এর অর্থ ভুল করে নিজেদের বিমান ধ্বংস করা৷ এয়ারফোর্সের পরিভাষায় এর নাম ‘ব্লু অন ব্লু’।
আরও পড়ুন- CDS-এর সঙ্গে অভিশপ্ত চপারে ছিলেন বাংলার সৎপাল, দেহ ফেরার অপেক্ষায় পরিবার
আরও আছে৷ ২০১৭ সালে অরুণাচল প্রদেশ, ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে কেদারনাথে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে এমআই ১৭৷ ২০১১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত রাশিয়ার কাছ থেকে মোট ৮০টি এমআই ১৭ ভি ফাইভ চপার কিনেছে ভারত৷ মস্কোর কাছ থেকে আরও চপার কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যা নিয়ে অসন্তুষ্ট আমেরিকা৷ ভারতকে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি নিয়ে আমেরিকা ও রাশিয়ার মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতার মধ্যেই একের পর এক বিপত্তি রহস্য বাড়াচ্ছে৷