নিজস্ব প্রতিনিধি: সিপিএম রাজ্যে টানা ৩৪ বছর সরকারে ছিল। কিন্তু এখন তারা সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি যেন যুক্তি বুদ্ধি বিশ্লেষণ করে পাল্টা জবাব দেওয়ার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। তা না হলে নন্দীগ্রাম ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিতর্কিত মন্তব্যের পরেও তারা বৃহস্পতিবার কার্যত মুখই খুলতে পারল না। সিপিএমের হল টা কী?
যে নন্দীগ্রাম গণহত্যা ইস্যুতে আন্দোলন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, সেখানে খোদ মমতারই মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব মেদিনীপুরের জনসভায় নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী, শিশির অধিকারীকে নিশানা করে বলেছেন, “লড়াইয়ের সময়ে বাপ-ব্যাটা কোথায় ছিলেন? আমি এখনও চ্যালেঞ্জ করে বলছি সিপিএমের সঙ্গে বোঝাপড়া করে আপনারা নন্দীগ্রামে গণহত্যা ঘটিয়েছিলেন। একদিন না একদিন তা প্রমাণ হবে।”
ঘটনা হল সেই সময় তো মূলত শুভেন্দু অধিকারী ও শিশির অধিকারীর সাংগঠনিক ক্ষমতার উপর ভর করেই নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তথা রাজ্য জুড়ে। পরবর্তীকালে নন্দীগ্রাম নিয়েছে যে বই লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী সেখানেও অধিকারী পরিবারের অবদানের কথা লেখা আছে।
এখানেই শেষ নয়, রাজ্যে ক্ষমতায় এসে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ দফতরের পাশাপাশি বহু নিগমের দায়িত্ব শুভেন্দুকে দিয়েছিলেন মমতা। শিশির অধিকারীকে কেন্দ্রে মন্ত্রী পর্যন্ত করেছিলেন তিনি। একাধিক দায়িত্ব দিয়েছিলেন শুভেন্দুর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলাকে অধিকারী পরিবারের চোখ দিয়েই দেখতেন তিনি, এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক মহল। এখানেই শেষ নয়, বিভিন্ন জেলায় পর্যবেক্ষক করে শুভেন্দুকে পাঠিয়েছিলেন মমতা। শুভেন্দুর হাত ধরে তৃণমূল একাধিক জেলায় বাম-কংগ্রেসকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতা দখল করে। সেই অধিকারী পরিবারকেই মুখ্যমন্ত্রী এখন যেভাবে নিশানা করছেন তা দেখে তাজ্জব গোটা বাংলা।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন উঠছে, তখন কী মুখ্যমন্ত্রীর একবারের জন্যও মনে হয়নি যে সিপিএমের সঙ্গে বোঝাপড়া করে অধিকারী পরিবার নন্দীগ্রামে গণহত্যা ঘটিয়েছিলেন? তবে কী নন্দীগ্রামে শুভেন্দু তাঁকে হারিয়ে দিয়েছিলেন বলেই আজ মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলছেন? এই চর্চা আরও ব্যাপক আকারে নিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর তথা রাজ্য জুড়ে।
এবার আসা যাক সিপিএমের কথায়। নন্দীগ্রাম নিয়ে সিপিএম বহুবার অভিযোগ করে বলেছে সেখানে বিরোধীরা নাকি ষড়যন্ত্র করেছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী যে কথাগুলি এখন বলছেন তাতে কী সিপিএমের দাবিতেই কার্যত মান্যতা দেওয়া হল না? কিন্তু এরপরেও সিপিএম নেতৃত্ব চুপচাপ বসে রয়েছেন। উপযুক্ত জবাব দিতে পারছেন না তাঁরা। যা দেখে অবাক হতে হয়।
এই সিপিএম নাকি পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর রাজত্ব করেছিল! সবচেয়ে বড় কথা মুখ্যমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু তথা অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে, তাতে নন্দীগ্রাম ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের লড়াই, সংগ্রামও কী কিছুটা ফিকে হয়ে যায় না? সব মিলিয়ে নন্দীগ্রাম ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠে গেল।