দেরিতে শুরু করেও কী কারণে রায়বেরিলিতে এগিয়ে রয়েছেন রাহুল গান্ধী?

দেরিতে শুরু করেও কী কারণে রায়বেরিলিতে এগিয়ে রয়েছেন রাহুল গান্ধী?

নিজস্ব প্রতিনিধি: যাবতীয় জল্পনার অবসান। অবশেষে শুক্রবার আমেথি এবং রায়বেরিলি কেন্দ্রে কংগ্রেস তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল। আমেথিতে কংগ্রেসের টিকিটে লড়বেন গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিশোরী লাল শর্মা। অন্যদিকে সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া কেন্দ্রে প্রার্থী হচ্ছেন রাহুল গান্ধী। ২০-মে ভোট হবে আমেথি ও রায়বেরিলিতে। অর্থাৎ হাতে সময় নেই বললেই চলে। তা সত্ত্বেও বিজেপির তুলনায় এগিয়ে থেকেই শুরু করছেন রাহুল। কী সমীকরণ রয়েছে সেখানে?  রায়বেরিলিতে বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী দীনেশ প্রতাপ সিং। আর বিএসপি’র টিকিটে লড়ছেন ঠাকুর প্রসাদ যাদব। ঘটনা হল গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী সোনিয়া গান্ধী ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন।

গতবারেও বিজেপির টিকিটে লড়েছিলেন এবারের প্রার্থী দীনেশ প্রতাপ সিং। সাড়ে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছিলেন তিনি। সেই নির্বাচনে রায়বেরিলির পাশের কেন্দ্র আমেথিতে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধী হেরে গেলেও সোনিয়া বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন। যা এবার নিঃসন্দেহে আত্মবিশ্বাস জোগাবে রাহুলকে। তবে শুধু এই কারণ নয়। রায়বেরিলি লোকসভার অন্তর্গত যে পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে উত্তরপ্রদেশে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, রায়বেরেলি কেন্দ্রে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির মিলিত ভোট বিজেপির থেকে অনেক বেশি রয়েছে। উত্তরপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও, সেই ফলের ভিত্তিতে রায়বেরিলি লোকসভা কেন্দ্রে কংগ্রেস ও সপা মিলিত ভাবে এক লক্ষ ষাট হাজার ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে। এই বিশাল ব্যবধান অতিক্রম করে বিজেপি রায়বেরিলি কেন্দ্রে এবার জিতে যাবে, সেই সম্ভাবনা অত্যন্ত কম। তাই ভোট পরিসংখ্যান বলছে কংগ্রেস রায়বেরিলি কেন্দ্রে এত দেরিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও তারা কিন্তু পাটিগণিতের হিসেবে এগিয়ে থেকে শুরু করছে। যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য রায়বেরিলি কেন্দ্র প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর আমল থেকেই কংগ্রেসের দুর্গ বলে পরিচিত। ইন্দিরা গান্ধী থেকে সোনিয়া গান্ধী, তাঁরা এই কেন্দ্র থেকে বহুবার জিতেছেন। রায়বেরিলি থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গান্ধী পরিবারের কেউ না কেউ প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর অতীতের পরিসংখ্যান বলছে ১৯৫২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত যতগুলি লোকসভা নির্বাচন হয়েছে তার মধ্যে মাত্র দু’বার বিজেপি রায়বেরিলি কেন্দ্রে জিতেছে। অন্যদিকে বহুজন সমাজ পার্টি এবং সমাজবাদী পার্টি আজ পর্যন্ত এই কেন্দ্রে জিততে পারেনি। তবে ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টির রাজ নারায়ণের কাছে এই কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সেবার দেশ জুড়ে প্রবল কংগ্রেস বিরোধী হাওয়া, আর জরুরি অবস্থা জারির কারণে ইন্দিরাকে হারতে হয়েছিল। এছাড়া ১৯৯৬ ও ১৯৯৮ সালে রায়বেরিলি কেন্দ্রে জয়ী হয়েছিল বিজেপি। সবমিলিয়ে পরিসংখ্যান বলছে রায়বেরিলি কেন্দ্র কংগ্রেসের দুর্গ ছাড়া আর কিছুই নয়। এই আবহের মধ্যে রাহুল উত্তরপ্রদেশে প্রার্থী হওয়ায় উজ্জীবিত সেই রাজ্যের অন্যান্য আসনের কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীরা। কারণ উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির জোট হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা সপা প্রধান অখিলেশ যাদবও চাইছিলেন আমেথি ও রায়বেরিলি থেকে গান্ধী পরিবারের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। শেষমেশ আমেথিতে না হলেও রায়বেরিলিতে রাহুল প্রার্থী হওয়ায় কংগ্রেস কর্মীদের পাশাপাশি খুশি অখিলেশও। এছাড়া আমেথিতেও গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ কিশোরীলাল শর্মা প্রার্থী হয়েছেন। কংগ্রেসের আশা কিশোরীলাল যথেষ্ট লড়াই দেবেন বিজেপি প্রার্থী স্মৃতি ইরানির বিরুদ্ধে। তাই দেরিতে হলেও এই দুটি কেন্দ্রে প্রচারে ঝড় তুলতে তৈরি কংগ্রেস।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *