তপন মল্লিক চৌধুরী : বিহারের ভোটপর্ব মিটেছে। এবার নজরেবাংলা। বিহারে ভোটের প্রচারে তাঁর দেখা মেলেনি কিন্তুবাংলার কথা আলাদা।বাংলা দখল বিজেপির চ্যালেঞ্জ। যে কারণে বাংলা নিয়ে তাদের বিশেষ ভাবনা। ২০২১-এর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায়ের রণকৌশল ঠিক করতেই যে নিউ নর্মালেঅমিত শাহের বাংলা সফর তা বুঝতে অসুবিধা হয় না।
শারদীয়া উৎসবের আগেই এ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের ঢাক বাজতে শুরু করেছে। হিসাব অনুযায়ী ২০২১-এর এপ্রিল-মে মাসে এ রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনে রায়দান হওয়ার কথা। কিন্তু কোভিড সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই ভোটের প্রচার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। এখনও যে ভয় কমেছে সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে এ রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলি ইতিমধ্যেই নির্বাচনী লড়াইতে মাঠে নেমে পড়েছে। সবারই লক্ষ্য রাজ্যের ক্ষমতা দখল।
এ রাজ্যের ২১-এর বিধানসভা লড়াই যে শুধুমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম বিজেপি এ নিয়ে আর কারও কোনও দ্বিমত নেই। এক সময় এ রাজ্যে প্রধান লড়াই ছিল সিপিএম বনাম কংগ্রেসের। এবার সেই দুই রাজনৈতিক দল হাতে হাত মিলিয়েছে এ রাজ্য থেকে তৃণমূলকে হটাতে ও বিজেপির বাড়বাড়ন্ত থামাতে। ২০১১-র পর অবশ্য এ রাজ্যে কংগ্রেস ও সিপিএম কেবলমাত্র খাতায় কলমে। সিপিএম বা কংগ্রেস আজ আর প্রধান নির্ধারক শক্তি নয়। প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠেছে বিজেপি। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত লড়াই ছিল সিপিএম বনাম মমতার।
রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টার্গেট আদিবাসী-তফসিলি-মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক।বাংলার যে কোনও ভোটে মতুয়া সম্প্রদায় যে একটা নির্ণায়ক শক্তি সে কথা ঠিক। সেই সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের দখলে। কিন্তু গত লোকসভায় নির্বাচনে মতুয়াদের ভোট ভোট চলে আসে গেরুয়া শিবিরে। বিজেপি তৃণমূলের একচেটিয়া ভোটে থাবা বসালে ত্রিণমূলের ঘুম ছুটে যায়। গড় ফিরে পেতে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে আসা উদ্বাস্তু মতুয়াদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ভোট রাজনীতির ময়দানে মরিয়া হয়ে ওঠেন মমতা। কয়েকদিন আগে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের ১ লাখ ২৫ হাজার উদ্বাস্তুদের জমির পাট্টা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
হাত পা গুটিয়ে বসে থাকেনি গেরুয়া শিবির। বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় পালটা ঘোষণা করেছেন, বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগেই পশ্চিমবঙ্গে কার্যকর হবে সিএএ বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন।তিনি এ কথাও স্মরণ করিয়ে দেন, করোনার কারণে এই আইন সংসদে পাস হলেও তা এত দিন কার্যকর হয়নি। তবে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই সেই আইন কার্যকর করা হবে। তার মানে ওপার বাংলাদেশ থেকে আসা সব উদ্বাস্তুরা নাগরিকত্ব পাবেন। তারপরই অমিত শাহ বাকুড়ার আদিবাসী গ্রামে পা রাখেন।
এ রাজ্যে তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরতেচাইছেনমমতা।তাঁকে হটিয়ে বিজেপি চাইছে রাজ্যের দখল নিতে।বাংলার মাটিতে পা রেখে অমিত শাহ হুঙ্কার ছেড়ে বলেছেন, ‘মমতা সরকারের মৃত্যুঘণ্টা বেজে গিয়েছে।’ পাশাপাশি তিনি বাংলার মানুষের কাছে আবেদন রেখেছেন বিজেপিকে একবার সুযোগ দেওয়ার। বলেছেন,‘আগামী দিনে আমরা সোনার বাংলা গড়ব’।
ভোট চাইতে রাজনীতির কারবারিরা যে প্রতিশ্রুতির বন্যা ছোটাবেন;সে তো জানা কথা। কিন্তু বাংলায় বিজেপি যে শাসকদল বা তৃণমূল তথা দলনেত্রী মমতাকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ার কথা বলছেন তার বিরুদ্ধে বিজেপির মুখটি কে? রাজ্য গেরুয়া শিবিরের নিত্য কোন্দলের কথাযদি সরিয়ে রাখা যায় তাহলে যার কথা উঠে আসে তিনি হলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর সক্রিয়তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।জেলায় জেলায় গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া অসন্তোষকে মূলধন করে সংগঠন তৈরি করতে সচেষ্ট। প্রশ্ন তৃণমূল বা সিপিএম থেকে নেতা-কর্মী-সমর্থক ভাঙিয়ে আনা লোক দিয়েই কি একটা রাজ্যের দলীয় সংগঠন মজবুত হতে পারে? এরপর আছে তাঁর তুমুল হাসির খোরাক জোগানো নানা মন্তব্য। যা নিয়ে অভিজাত ও শিক্ষিতদের মধ্যে ইতিমধ্যেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মনে করতেই পারেন অনেক লোক হাসছেন তার মানে তিনি জনপ্রিয় কিন্তু তিনি যে নিজেকে একজন ভাঁড়ে পরিণত করেছেন সেকথা না ভেবে তিনি বিশ্বাস করেন এভাবে বিতর্কে থাকাটাই জরুরি।
রাজ্যে বিজেপি নেতৃত্বের মধ্যে মোরগের লড়াই চলছে অনেক দিন ধরেই। সে লড়াইয়ে মুকুল রায়, রাহুল সিনহা থেকে শুরু করে বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায় যে যার জায়গা থেকেই লড়ে যাচ্ছেন বা লড়িয়ে দিচ্ছেন। যে কারণে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এদের দিয়ে ভোটে যাকে দিয়ে যতটুকু কাজ হবে সেই জায়গাতেই রেখেছেন। কিন্তু বাংলার মুখ হিসাবে এদের কথা ভাবছেন না।বরং বাইরে থেকেই খুঁজছেন মুখ। তাহলে রাজ্য দখলের লড়াইতে সঠিক নেতৃত্ব দেবেন কে? কে সেই মুখ যার কথা বাংলার সামনে তুলে ধরবে বিজেপি।