akash anand
লখনউ: ব্যক্তিগত আক্রমণে বরাবরই বেড়েছে রাজনীতির ঝাঁঝ৷ বেশ কিছু শব্দবন্ধ হয়ে উঠেছে বিরোধীদের হাতিয়ার৷ এ রাজ্যে বিরোধীদের হাতে থাকা এমনই একটি ‘শব্দবাণ’ হল ‘ভাইপো’৷ যে শব্দে বারংবার উত্তপ্ত হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি৷ ‘ভাইপো’র বিরুদ্ধে বারেবারে উঠে এসেছে বিস্ফোরক দাবি৷ তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সরাসরি কারও নামোল্লেখ করা হয়নি কখনও। শুধুমাত্র এসেছে ইশারা৷ অনেকে আবার ‘ভাইপো’-র ক্ষমতাবৃদ্ধিতে তুলেছে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ৷ তবে এবার বঙ্গ রাজনীতির গন্ডি ছাড়িয়ে ‘ভাইপো’ শব্দের গুঞ্জন উত্তরপ্রদেশের আকাশেও৷ বহুজন সমাজ পার্টি বা বিএসপি’তে শুরু হল ‘ভাইপো’ জমানা৷ লোকসভা ভোটের আগে দলের উত্তরাধিকার ঘোষণা করলেন বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী৷ সাফ জানালেন, আগামী দিনে দলের দায়িত্ব সামলাবেন তাঁর নিজের ভাইপো আকাশ আনন্দ৷
এক সময় উত্তরপ্রদেশের কুর্সি সামলেছেন মায়াবতী৷ গেরুয়া ঝড়ে এখন অবশ্য জনসমর্থন অনেকটাই কমেছে৷ এর পরেও লোকসভায় ১২টি আসন রয়েছে বিএসপির হাতে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের মাস ছয় আগে সেই বিএসপি’ই ঘোষণা করে দলের ভাবী সর্বময় নেতার নাম। বিজেপি’র শাহজাহানপুর জেলা শাখার প্রধান উদয়বীর সিং সাংবাদিক বৈঠকে জানান, ‘‘আকাশ আনন্দকে মায়াবতীজি দলের উত্তরাধিকারী বলে ঘোষণা করেছেন৷ শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়, সারা দেশে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁর উপরে৷’’
যদিও রাজনীতির ময়দানে ‘নবীন’ আকাশ৷ বছর ২৮-এর ভাইপোর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা মেরেকেটে বছর ছ’য়ের হবে৷ তবে তাঁকে রাজনীতিতে আনার পরিকল্পনা বহুদিন আগেই সাজিয়ে রেখেছিলেন বুয়া ময়াবতী৷ সাল ২০১৭৷ আকাশ তখন ২২ বছরের এক তরুণ৷ হঠাৎই একদিন তাঁকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে হাজির হন মায়াবতী৷ পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে৷ বলেছিলেন, ‘‘ও আমার ভাইপো আকাশ৷
লন্ডন থেকে পড়াশোনা করে এসেছে। এখন থেকে দলের কাজও সামলাবে।’’
উত্তরপ্রদেশে তখন ‘বুয়া-বাবুয়া’ জোট৷ আসন্ন বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস এবং বিজেপিকে রুখতে হাত মিলিয়েছিল স্থানীয় দুই দল বিএসপি এবং সমাজবাদী পার্টি (সপা)। অখিলেশ যাদবের সঙ্গে এক মঞ্চে ঝড় তুলছিলেন মায়াবতী৷ শাহারানপুরে তেমনই এক সভার আয়োজন করা হয়েছিল৷ সেই সভা থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় আকাশের। এর পর পিসি মায়বতীর নির্দেশে দলে নানা কাজের দায়িত্ব পেতে থাকেন আকাশ। জল্পনার শুরু তবে থেকেই।
চলতি বছর অগাস্ট মাসে একাধিক রাজ্যে বিএসপির তরফে পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল৷ যার নেতৃত্বে ছিলেন এই আকাশ। এর পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে আকাশকে নিয়ে চর্চা নতুন মাত্রা পায়। গুঞ্জন শুরু হয়, তাহলে কি মায়াবতীর উত্তরসূরি হচ্ছেন এই তরুণ? জল্পনা মিলে গেল অক্ষরে অক্ষরে৷
ময়াবতী নিজে বিয়ে করেননি৷ ভাইপো আকাশকে তিনি পুত্রসম স্নেহ করেন৷ এবার তাঁকেই বেছে নিলেন দলের ‘সেনাপতি’ হিসাবে৷ ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে প্রথমবার উত্তরপ্রদেশের আগরায় সভা করেছিলেন আকাশ৷ ওই বছর রামমন্দির সহ একাধিক ইস্যু ছিল বিজেপি’র হাতে৷ সেখানে শূন্য হাতে লড়েছিল বিএসপি৷ ২০১৪ সালের লোকসভায় একটা আসনও জিততে পারেননি মায়াবতীর দল৷ ২০১৯ ছিল বিএসপি’র কাছে অ্যাসিড টেস্ট৷ লোকসভা ভোটের রণকৌশল ঠিক করার দায়িত্ব চোখ বুজে আকাশের হাতেই সঁপেছিলেন মায়াবতী৷ নিরাশ করেননি আকাশ৷ তারুণ্যের জোয়ারে শূন্য থেকে ১২-তে এনে দাঁড় করিয়েছিল দলকে৷ অনেকেই মনে করেন মায়াবতীর একলা চলার সিদ্ধান্তের নেপথ্যেও রয়েছে আকাশেরই মস্তিষ্ক৷
দলীয় নেতৃত্বের মনে কতটা জিততে পেরেছেন মায়বতীর ভাইপো? বিএসপি নেতাদের কথায়, আকাশ কম কথা বলে কাজ বেশি করেন৷ ভালো শ্রোতাও৷ ওঁর মধ্যে বড় নেতা হওয়ার গুণ রয়েছে৷ এ বছর আকাশের কাঁধে যে সকল রাজ্যের ভার ছিল, সেই সব রাজ্যের বিধানসভায় খারাপ ফল করেনি বিএসপি৷ রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, দলনেতা হিসাবে আকাশের অভিষেক এখন শুধুই সময়ের অপেক্ষা৷