১৪ দিন পর কি ‘মৃত্যু’ অবধারিত? জীবনকাল শেষে কোনও ভাবে কি প্রাণ পেতে পারে চন্দ্রযান-৩?

১৪ দিন পর কি ‘মৃত্যু’ অবধারিত? জীবনকাল শেষে কোনও ভাবে কি প্রাণ পেতে পারে চন্দ্রযান-৩?

নয়াদিল্লি:  কোটি কোটি দেশবাসীর স্বপ্ন সত্যি করে বুধের সন্ধ্যায় এল সেই মহেন্দ্রক্ষণ৷ চন্দ্রজয় করল ভারত৷ পালকের মতো ভাসতে ভাসতে চাঁদের বুকে অবতরণ করল চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার৷ বিক্রম যখন চাঁদে পা রাখে, তখন সেখানে সবে ভোর হয়েছে। ভোরের আলো ফোটার কিছু পরেই বিক্রমের পেটের কাছে থাকা দরজাটা খুলে ভূমিষ্ঠ হয় প্রজ্ঞান। এক কথায় চন্দ্রযানের হৃদয় হল প্রজ্ঞান৷ গুটি গুটি পায়ে  চাঁদের পিঠে ঘুরতে ঘুরতে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাবে সে। এর জন্য তার হাতে রয়েছে মাত্র ১৪ দিন৷ কিন্তু  ১৪ দিন পর কী হবে? কাজ শেষ হলে কি তলপি-তলপা গুটিয়ে ঘরে ফিরে আসবে চন্দ্রযান-৩? ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে, তেমনটি হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু নেই। কাজ শেষ হলেও ‘বাড়ি’ ফেরা হবে না ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ ও রোভার ‘প্রজ্ঞান’-এর। চাঁদই হবে তাদের স্থায়ী ঠিকানা। ১৪ দিনের মিশন শেষে ‘কর্মক্ষেত্রে’ মৃত্যুও হতে পারে তাদের। কিন্তু সত্যিই কি চাঁদের বুকে চন্দ্রযান-৩-এর বেঁচে থাকার কোনও উপায় বা সম্ভাবনাই নেই? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?

মাত্র ১৪ দিনের আয়ু নির্ধারণ করেই বিক্রম এবং প্রজ্ঞানকে চাঁদে পাঠিয়েছে ইসরো। যার প্রাণ ভোমরা হল সূর্য। সোলার পাওয়ারে ভর করেই গুটি গুটি পায়ে হাঁটাচলা করবে প্রজ্ঞান। করবে তথ্য তলাশ। তবে চাঁদে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গেই প্রজ্ঞানের কাজ সমাপ্ত হবে। বিক্রম এবং প্রজ্ঞানে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি রয়েছে, এই ১৪ দিন যেগুলির সাহায্যেই চাঁদের মাটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাবে তারা৷ তথ্য সংগ্রহ করে পাঠাবে পৃথিবীতে৷ আর এই সমস্ত যন্ত্রপাতিই চলবে সৌরশক্তিতে ভর করেই। ফলে চাঁদে যতক্ষণ সূর্য, ততক্ষণই তাদের প্রাণ৷ ১৪ দিন পর চাঁদে সূর্যাস্ত হলে ধীরে ধীরে কর্মশক্তি হারিয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়বে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। স্তব্ধ হবে তাদের ভিতরে থাকা সমস্ত যন্ত্রপাতিও।

চাঁদে এক দিন সম্পূর্ণ হতে পৃথিবীর হিসাবে সময় লাগে প্রায় ২৮ দিন। অর্থাৎ, চাঁদের এক বেলা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমান। এই ১৪ দিনই প্রজ্ঞানের আয়ু। সূর্যের থেকে শক্তি নিয়ে কাজ করবে সে। সময়ের হিসাব কষেই সমস্ত পরিকল্পনা করেছে ইসরো। তবে কি ১৪ দিনের জীবনকাল শেষে চন্দ্রযান-৩ এর ‘মৃত্যু’ অবধারিত?  এ প্রসঙ্গে এখনই স্পষ্ট জবাব দেয়নি ইসরোর বিজ্ঞানীরা৷ চাঁদের মাটিতে বিক্রম আর প্রজ্ঞানে নতুন করে প্রাণপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা একেবারে নেই বলেও বিষয়টি উড়িয়েও দেননি।

বিজ্ঞানী দেবীপ্রসাদ দুয়ারির কথায়, ইসরোর বিজ্ঞানীরা বিষয়টি একেবারে খারিজ করে না দিলেও বিক্রম এবং প্রজ্ঞানের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ৷  কারণ চাঁদের দুর্গম ও শীতল দক্ষিণ মেরুতে ১৪ দিনের ‘সকাল’ দেখার পর, ঘনাবে ১৪ দিনের অতিশীতল রাত। সেই সময় চাঁদের ‘কুমেরু’-তে তাপমাত্রা নামতে পারে মাইনাস ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। অতিপ্রবল শীতে চন্দ্রযান-৩-এর যন্ত্রপাতির বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল৷ 

কিন্তু ফের যখন চাঁদে সূর্য উঠবে? দুয়ারি জানান, ১৪ দিনের জীবনকালের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে চন্দ্রযান-৩ এর যন্ত্রাংশ৷ কিন্তু এর পরেও যদি কোনও ভাবে সেই যন্ত্র বিকল না হয় এবং সৌরশক্তিতে পুনরুজ্জীবিত হয়, তাহলে তা মিরাক্যাল। কিন্তু সেই সম্ভাবনা এতটাই কম যে, আশা না রাখাই ভালো।
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

14 − nine =