দেবময় ঘোষ: শেষ হতে চলল ২০২০। শেষ হওয়ার পথে একটি দশক। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এই দশক ছিল পরিবর্তনের। ২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে রাইটার্সের ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পূর্ণতা পায় তার শেষ কয়েক দশকের অবদমিত রাজনৈতিক সংগ্রাম।
তবে, এই দশক ভুলতে চাইবে সিপিএম। আগামী দশক শুরু হবে একটি বিধানসভা নির্বাচন দিয়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি তৃতীয়বারও ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন? নতুন দশকের শুরুটা কি স্মরণীয় করে রাখতে পারবে তৃণমূল? নাকি, নতুন দশক বাংলায় দেখবে নতুন সরকার। এই বাংলায় স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যায়ে গেরুয়া রাজনৈতিক স্রোত কখনও দেখেনি। অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা, দিলীপ ঘোষ কি বাংলায় আবার পরিবর্তনের সরকারকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন? মনে রাখবেন, মনে রাখবেন গত দশকের শুরুতেই রাজনৈতিক পরিবর্তন দেখেছিল বাংলা। আগামী দশকের শুরুতে বঙ্গবাসী কী আবার পরিবর্তন দেখবে, সে উত্তর সময়ের গর্ভে।
শেষ দশক যখন শুরু হয়েছিল, তখনও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় বামেরা। কিন্তু, ২০১০ সেই বিদায় ঘন্টা শুনতে পেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা। ততদিনে বেশকিছু জেলাপরিষদ তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে চলে গিয়েছে। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে বাম সরকার কোনঠাসা হয়ে গিয়েছে। ২০১১ সালে অষ্টম বামফ্রন্ট সরকার হল না। রাইটার্স-এ বামদুর্গের পতন হল।
এরপর যতই দিন গিয়েছে লাল রং ফিকে হয়েছে। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে বোঝা যায় বামফ্রন্টের দীনতা। মাত্র দুটি আসন পায় সিপিএম। শতকরা হিসাবে ভোট নেমে আসে ২২.৯৬ শতাংশে। ডুবন্ত নৌককে সামলাতে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ‘হাত’ ধরে বামেরা। কংগ্রেস বা বামফ্রন্ট, কোনও পক্ষেরই বিশেষ লাভ হয়নি। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ফের মমতা।
২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে দেখেছে বামফ্রন্ট ৭ শতাংশের একটু কম ভোট পেয়েছে। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রবল ‘মোদী হওয়ায়’ রাজ্যে বিজেপি রাজ্যে ১৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আসানসোল এবং দার্জিলিংয়ে দুই সাংসদও পেয়েছিল গেরুয়া শিবির। ২০১৯ সালে বিজেপি ৪০ শতাংশ ভোট পেয়ে ১৮ জন সাংসদও পেয়েছে। বিজেপির ২৩ শতাংশ ভোট বাড়লো কি করে, কারণ সেই কারণের মধ্যেই বামেদের প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার সমীকরণ লুকিয়ে রয়েছে। বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্ররা তা মেলাতে পারছেন না। ১৯৯৭ সালে জ্যোতি বসুর বিখ্যাত উক্তি, ‘ঐতিহাসিক ভুল’ এখনো সিপিএমকে তাড়া করে বেড়ায়। ২০১৯ সালের এই হারকেও ঐতিহাসিক বলছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।