কলকাতা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আতঙ্ক এখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎস দেশ চীন সহ সারা বিশ্বে মোট ৯৮টি দেশে কোভিড -১৯ নামে পরিচিত ২০১৯ নোভেল করোনাভাইরাস (2019-nCoV) সংক্রমণ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গুজব ছড়াতে বা গুজবে কান না দিতে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও ভারত সহ একাধিক দেশে মাংস থেকে করোনা সংক্রমণ হচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়েছে স্যোশাল মিডিয়ায়। এরফলে ভারতে পোল্ট্রির মুরগির দাম নেমে দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ১০০টাকা কোথাও আবার ৪০টাকা কেজি দরেও মুরগির মাংস বিক্রি হচ্ছে। ভারতে কোনো কোনো রাজ্যে তো আবার মুরগির মাংস বিক্রিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন লখনউয়ের বিভিন্ন বাজারে সবধরনের মাংস ও মাছ বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পোল্ট্রির ডিম খেতেও ভয় পাচ্ছে মানুষ। ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় হয়েছে মুরগী ও মুরগীর মাংস ব্যবসায়ীদের। এরইমধ্যে বাংলাদেশে নতুন করে গুজব ছড়িয়েছে যে খাসির মাংসেও নাকি ধরা পড়েছে করোনাভাইরাস। ফলে গোটা দেশে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি সৃষ্টি হয়েছে।
খবরে প্রকাশ, ফেনী শহরের কর্পোরেশন হকার্স মার্কেটে একটি খাসি কাটার ১০ মিনিট পরেই হঠাৎ কালো হতে শুরু করে। এরপরেই মার্কেটজুড়ে রটে যায় যে খাসির মধ্যেও করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। এই ঘটনার পর নিমেষের মধ্যে বাজার ছেয়ে বেড়িয়ে যায় কর্তারা। যে দোকান থেকে এই গুজব রটে বাধ্য হয়ে সেই মাংস বিক্রেতা ২০০ টাকায়(বাংলাদেশী টাকায) মাংস বিক্রি করে দেন।
অযথা মাছ-মাংস থেকে আতঙ্কিত হওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ভারতের ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআইআই) এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিএসপি আয়াঙ্গর বলেন “যে একজন বিজ্ঞানী হিসাবে আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে মুরগী, খাসি এবং সামুদ্রিক খাবার থেকে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
এসম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়। আয়ঙ্গর এর আগে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আরো বলেন এমনিতেই ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় কোনো ভাইরাস বেঁচে থাকতে পারেনা। তাই গ্রীষ্মকাল এসে গেলে করোনার প্রকোপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে মাংস বা মাছ ভালো করে ফুটিয়ে রান্না করলে সেখানে শুধু করোনা নয় কোনোও ভাইরাসই জীবিত থাকবেনা।
বিশ্বে এপর্যন্ত মোট অন্তত ১০৭,৪১৪ (মেনল্যান্ড চীন ৮০,৭৪০, ১১৩ হংকং, এবং ১০ ম্যাকাও সহ) জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত হয়েছে। এপর্যন্ত করোনা সংক্রমণে মৃত্যু হয়েছে ৩৬৫৪ (চীনে ৩,১০০, ইতালিতে ২৩৩, ইরানে ১৯৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯, ফ্রান্সে ১৬, জাপানে ১৩ এবং স্পেনের ৪ জন, অস্ট্রেলিয়ায় ৩ জন , যুক্তরাজ্যে দু'জন এবং ফিলিপিন্স,, সান মেরিনো, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, থাইল্যান্ড ও তাইওয়ানে একজন করে) জনের। তবে এই সংক্রমণ বা মৃত্যুর সঙ্গে কোনো মাংস বা আমিষ খাবারের যোগসুত্র প্রমাণিত হয়নি বলেই আশ্বস্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।