কলকাতা: ২০১৯-এর নভেম্বর মাসে চিনের উহান প্রদেশে প্রথম দেখা মিলেছিল করোনা ভাইরাসের। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্ব জুড়ে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে এই মারণ ভাইরাস। তবে একদিকে যেমন সংক্রমণে বহু মানুষের প্রাণ গেছে, তেমন করোনার কবল থেকে বেঁচেও ফিরেছেন অনেকেই। দমদমের দেবপ্রসাদ বসু সেই যুদ্ধ জয়ের অন্যতম দৃষ্টান্ত।
গত বছরের মে মাসে, যখন ভারতে করোনা সংক্রমণের ছিল ঘটনা ছিল প্রায় হাতে গোনা, কিন্তু মহামারীর আতঙ্ক ছিল আকাশছোঁয়া, তখন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন দেবপ্রসাদ বসু। ৬৩ বছরের এই ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক। মঙ্গলবার যখন করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ গুলি তিনি তাঁর ভ্যানে করে শহরে নিয়ে আসছিলেন তখন তাঁর মুখে লেগে ছিল গর্বের চওড়া হাসি। বাগবাজারের স্বাস্থ্য দপ্তরের গুদামে যে দুই ড্রাইভার এদিন এয়ারপোর্ট থেকে করোনা ভ্যাকসিন বয়ে এনে রেখেছেন দেবপ্রসাদ বসু তাঁদের মধ্যেই একজন।
নিজে কঠিন সময়ে করোনাকে জয় করেছেন, এখন শহরে ভ্যাকসিন বয়ে আনছেন সেই তিনিই, কেমন অনুভূতি হচ্ছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যেন আরো খানিক চওড়া হয় দমদমের ভ্যান চালক দেবপ্রসাদ বাবুর হাসি। তিনি বলেন, “এয়ারপোর্ট থেকে ভ্যাকসিন নিয়ে আসার কাজে আমায় নিয়োগ করার জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। করোনা থেকে বেঁচে ফিরেছি, আমি জানি রোগীরা কীভাবে উদ্বেগে উৎকণ্ঠায় হয়রান হন। এই ভ্যাকসিনই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একমাত্র অস্ত্র। এই ব্যবস্থার একটা ছোটো অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।”
গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেবপ্রসাদ বসুর শরীরে মারণ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। কাজের সূত্রেই আলিপুরদুয়ারে গিয়েছিলেন তিনি, সেখান থেকেই হয় সংক্রমণ। কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সংক্রমণের বিশেষ লক্ষণ না থাকায় ভর্তির ৮ দিনের মাথায় তাঁকে ছেড়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। দু-সপ্তাহ গৃহবন্দী থাকার নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। দেবপ্রসাদ বসুর কথায়, “আমার কপাল ভালো ছিল, তাই আমি সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমি পরিচিত মহলেই অনেককে করোনায় মারা যেতে দেখেছি। আশা করি এই ভ্যাকসিন মহামারী শেষ করবে।” দেবপ্রসাদ বাবুর লড়াই নিঃসন্দেহে বহু মানুষের কাছে অনুপ্রেরণা স্বরূপ।