কোথায় সুরক্ষা? জীবনের মূল্য কি ৫ লক্ষ টাকা? প্রশ্ন ‘অসহায়’ আশাকর্মীদের

পাঁচ লক্ষ টাকার বীমা। করোনা পরিস্থিতিতে আশাকর্মীদের জন্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। পূর্বনির্ধারিত কাজের পাশাপাশি কেউ বাইরে থেকে এসেছে কি না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে আশাকর্মীদের ওপর। অথচ দেওয়া হয়নি ন্যূনতম মাস্কও। পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবে অসহায় বোধ করছেন  তাঁরা। জীবন ও পরিবারের কি মূল্য নেই, স্বাস্থ্য দফতর ও সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন আশাকর্মীরা।

কলকাতা: পাঁচ লক্ষ টাকার বীমা। করোনা পরিস্থিতিতে আশাকর্মীদের জন্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। পূর্বনির্ধারিত কাজের পাশাপাশি কেউ বাইরে থেকে এসেছে কি না, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই খোঁজ নেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে আশাকর্মীদের ওপর। অথচ দেওয়া হয়নি ন্যূনতম মাস্কও। পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাবে অসহায় বোধ করছেন  তাঁরা। জীবন ও পরিবারের কি মূল্য নেই, স্বাস্থ্য দফতর ও সরকারের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন আশাকর্মীরা।

কথায় বলে, ঢাল নেই, তলোয়ার নেই। নিধিরাম সর্দার। সেই পরিস্থিতির মুখেই পড়েছেন আশাকর্মীরা। সাধারণ মানুষের সুরক্ষার জন্য যাঁরা সক্রিয়, তাঁরাই কিনা সুরক্ষিত নন! গ্রামীণ স্তরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়াই তাঁদের কাজ। এর সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের আয়রন সিরাপ খাওয়ানোরও দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে। স্বাস্থ্য দফতরের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী, এলাকায় প্রতিটি বাড়ি ঘুরে ঘুরে কোনও পরিবারের কেউ যদি বাইরে থেকে আসেন, তাঁর নাম, ঠিকানা, বয়স ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা করতে হবে আশাকর্মীদের। করোনা পরিস্থিতিতে এমন গুরু দায়িত্ব দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। তাঁদের তরফে বলা হয়েছে, 'যখন গোটা দেশ ও রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে এবং যথাসম্ভব প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের ঘরবন্দি থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, তখন আমাদের সুরক্ষার জন্য কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ না করেই এই সব কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের জন্য বরাদ্দ নেই কোনও মাস্ক। নেই অন্য কোনও সুরক্ষার ব্যবস্থাও।' তবে এই অসহায় পরিস্থিতির কথা শুনেও কোনও সদুত্তর দেননি আধিকারিকরা। বরং সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, 'সরকার আপনাদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার জীবনবীমা করে দিয়েছে। আপনার যদি মৃত্যু হয় তাহলে আপনার পরিবার পাঁচ লক্ষ টাকা পাবে।' এহেন উত্তর শুনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আশাকর্মীদের মনে। তাঁদের প্রশ্ন, 'আমাদের জীবনের মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা?'

নিজেদের নিরাপত্তা ছাড়াও কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন আশাকর্মীরা। যেহেতু তাঁদের উপযুক্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই, তাই বাড়ি বাড়ি ঘুরতে দেখে আতঙ্ক বোধ করছেন এলাকার মানুষও। তাঁরা বলেন, 'বাড়ি বাড়ি শিশুদের আয়রন সিরাপ খাওয়ানোর জন্য গেলে একইভাবে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে অভিভাবকদের মধ্যেও। কোনও কারণে যদি কেউ আক্রান্ত হন, তার দায় সরাসরি আশাকর্মীদের উপর বর্তাবে। এভাবে সামাজিকভাবে আমাদের অত্যন্ত সংকটজনক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।' এই পরিস্থিতিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে নিজেদের সুরক্ষার দাবিটুকুই জানিয়েছেন তাঁরা। প্রত্যেকেরই জীবনের মূল্য রয়েছে। পাঁচ লক্ষের গেরোয় বাঁধতে চান না তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − 3 =