কোন কোন কারণে মধ্যপ্রদেশে জয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছে কংগ্রেস?

কোন কোন কারণে মধ্যপ্রদেশে জয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছে কংগ্রেস?

victory

নিজস্ব প্রতিনিধি: নজরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। এর মধ্যে অন্যতম হল ২৩০ আসন বিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশ। সেই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে নিশ্চিত কংগ্রেস। কিন্তু কেন? চর্চায় চলে আসছে একগুচ্ছ কারণ। মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতা ধরে রাখা যে অত্যন্ত কঠিন সেটা বহু আগেই টের পেয়েছে বিজেপি। তাই শেষ মুহূর্তে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমে গেরুয়া শিবির একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদকে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় প্রার্থী করে দিয়েছে। যে ঘটনায় উল্লসিত কংগ্রেস। কংগ্রেসের দাবি হার সুনিশ্চিত জেনেই বিজেপি এটা করতে বাধ্য হয়েছে।

মূলত পাঁচটি কারণে মধ্যপ্রদেশে জয় সুনিশ্চিত দেখছে হাত শিবির। প্রথমত কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কমল নাথের (আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না হলেও কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হবে) গেরুয়া শিবিরের ধাঁচে ‘হিন্দুত্ব লাইনে’ প্রচার। মধ্যপ্রদেশ রাজনীতিতে কমল নাথ হিন্দুত্ববাদী নেতা হিসেবেই পরিচিত। তিনি যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন ৪৫০ কোটি টাকা খরচ করে এক হাজারটি গো-শালা নির্মাণ করে হিন্দুদের বিশেষ বার্তা দিয়েছিলেন। তাই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক ডিএমকে সুপ্রিমো তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের পুত্র উদয়নিধি সনাতন ধর্ম নিয়ে যে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তাতে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমল নাথ। এমনকী বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রথম জনসভা মধ্যপ্রদেশের ভোপালে হবে এটা একপ্রকার ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু উদয়নিধির বিতর্কিত মন্তব্যের পর সেই জনসভা ভোপালে করতে দেননি কমল নাথ। এ বিষয়ে মধ্যপ্রদেশে থাকা সাড়ে ছয় শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বক্তব্য, “কমল নাথ ঠিক পথে এগোচ্ছেন।

তিনি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চাইছেন। তার অর্থ এই নয় যে তিনি আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল নন। কংগ্রেস যে ধর্মনিরপেক্ষ দল এটা আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। তাই আমরাও চাই যেভাবেই হোক বিজেপিকে হারাতে হবে। তাই শুধুমাত্র বিজেপিকে হারানোর জন্য কমল নাথ যে কৌশল নিয়ে এগোচ্ছেন, আমাদের তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে”। দ্বিতীয় যে কারণে কংগ্রেস জয়ের আশা করছে তা হল বিজেপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। কর্ণাটকের মতো মধ্যপ্রদেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে কংগ্রেস। এখানেও টেন্ডার দুর্নীতি অর্থাৎ পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতির অভিযোগ তুলে ময়দানে ঝাঁপিয়েছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। তৃতীয় কারণ হল বিজেপির তীব্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। বিজেপি যদি ফের ক্ষমতায় আসে তাহলে শিবরাজ সিং চৌহান আবার মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ শিবরাজের পাশাপাশি একাধিক বিজেপি নেতার অনুগামীরা তাঁদের নেতার নাম সুকৌশলে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ভাসিয়ে দিতে শুরু করেছেন। তাই চর্চার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর বা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। আর গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে মধ্যপ্রদেশে বহু বিজেপি নেতা ও বিধায়ক দল ছেড়ে কংগ্রেসের যোগদান করেছেন। চতুর্থত, কংগ্রেসের বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যে যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্ণাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল, তার সবকটি বাস্তবায়িত হয়েছে।

মধ্যপ্রদেশেও সেই সমস্ত প্রকল্পের ঢালাও প্রচার করছেন কমল নাথ, দিগ্বিজয় সিংয়ের পাশাপাশি কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। বিদ্যুতের বিলে বিপুল ছাড়, নিখরচায় মহিলাদের বাসে যাতায়াত, বেকারদের বিশেষ ভাতা, মহিলাদের বিশেষ ভাতা প্রদান ও সর্বোপরি কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে যেভাবে দরিদ্রদের জন্য বহু আগেই অনেক কম দামে গ্যাসের সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে, এগুলি সব মধ্যপ্রদেশেও কংগ্রেস ক্ষমতায় আসলে চালু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। যে প্রচার সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাই নির্বাচনের ঠিক আগে দরিদ্রদের জন্য ‘উজালা’ প্রকল্প ও সাধারণ মানুষের গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমাতে কেন্দ্র বাধ্য হয়েছে বলে ওয়াকিবহাল মনে করছে। কর্ণাটকের ধাঁচে এই সামাজিক প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি কংগ্রেসকে মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনী ময়দানে‌ বিজেপির থেকে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। আর পাঁচ নম্বর কারণ হল জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার কংগ্রেসে না থাকা। এই প্রথম মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে জ্যোতিরাদিত্যকে ছাড়াই লড়াইয়ে নামছে কংগ্রেস।

সিন্ধিয়া তাঁর বেশ কয়েকজন অনুগামী  বিধায়ককে নিয়ে দল ছেড়েছিলেন বলেই মধ্যপ্রদেশে গত বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেও বছর দেড়েকের মধ্যে রাজ্যটি হাতছাড়া হয়েছিল কংগ্রেসের। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের তিন প্রধান নেতা হিসেবে ধরা হতো কমল নাথ, দিগ্বিজয় সিং ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে। ২০১৮ সালে কংগ্রেস মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। একই ভাবে লড়াইয়ে ছিলেন দিগ্বিজয়, যিনি প্রবলভাবে সিন্ধিয়ার বিরোধী। শেষমেশ রাহুল গান্ধীর সিদ্ধান্তে কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। সেটি মেনে নিয়েছিলেন দিগ্বিজয়। কিন্তু বিষয়টিতে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করে দেন সিন্ধিয়া। আর বছর দেড়েক পর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন সিন্ধিয়া। তাই এবার মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে সিন্ধিয়া দলে না থাকায় কংগ্রেসের বেশ সুবিধা হয়েছে। এতে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব একেবারেই দূর হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ মধ্যপ্রদেশে এই প্রথম ঐক্যবদ্ধ কংগ্রেসকে দেখছে রাজ্যবাসী। সেক্ষেত্রে প্রার্থিপদ নিয়েও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না হাত শিবিরকে। আর এই পাঁচটি কারণে কংগ্রেস বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির থেকে এগিয়ে রয়েছে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। যা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে গেরুয়া শিবিরকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *